সমাজ হোক বর্ণবৈষম্যমুক্ত

মানিকগঞ্জ থেকে কমল চন্দ্র দত্ত

‘বর্ণবৈষম্যমুক্ত সমাজ গড়ে উঠুক, দলিত জনগোষ্ঠীর দক্ষতা ও যোগ্যতায় সক্ষম হউক’ শ্লোগানকে সামনে রেখে বারসিক’র উদ্যোগে গত ২৩ জুন মানিকগঞ্জ জেলা দলিত অংশগ্রহণে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সম্মেলনে দলিত ছাত্রকল্যাণ পরিষদের আহ্বায়ক সজিব কুমার সরকারের সভাপতিতে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে মানিকগঞ্জ জেলার বিভিন্ন গ্রামের দলিত (মণিঋষি) সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।

IMG_20190623_145300

মানিকগঞ্জ জেলার প্রথম আলো বন্ধু সভার উপদেষ্টা এড. মাহবুব আলম রাসেল, আরটিভির প্রতিনিধি জাহাঙ্গীর আলম বিশ্বাস, ইয়ুথ গ্রীন ক্লাব উপদেষ্টা, মানিকগঞ্জ মো ইকবাল খান, বিশিষ্ট সমাজ সেবক এড. দীপক কুমার ঘোষ বলেন ‘নিজেদের মধ্যে নেতৃত্ব তৈরির জন্য নিজেদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস তৈরি করতে হবে। সামাজিক প্রতিবদ্ধকতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। নিজেদের যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখে এগিয়ে যেতে হবে। আমরা যেন নির্দিষ্ট গন্ডির মধ্যে আবদ্ধ না হয়ে দেশ ও সমাজের উন্নয়নে কাজ করি। সরকারের প্রতিটি বিভাগের সাথে যুক্ত হয়ে নাগরিক সুবিধাগুলো পাওয়ার জন্য নেতৃত্বের বিকাশ করতে হবে।’ তারা আরও বলেন, ‘নিজেদের সংগঠন তৈরি ও শক্তিশালী করার মধ্য দিয়ে সব বাধা অতিক্রম করা সম্ভব হবে।

IMG_20190623_131234

উক্ত সম্মেলনে আলোচনায় অংশগ্রহণ করে শিক্ষার্থী অজিত মনিদাস ও শিক্ষার্থী ঋতু রবিদাস বলেন, ‘আগে নিজে সচেতন হতে হবে। সুশিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। শিক্ষিত হওয়া ছাড়া গতি নেই। শিক্ষিত হলেই আমরা আমাদের অধিকার আদায়ে সচেতন হবো। পরিবারের ছোট ভাইবোনদের লেখাপড়ার আগ্রহ তৈরি করতে হবে। তাদের সহযোগিতা করতে হবে।’ দারা আরও বলেন, ‘বোনদের বাল্যবিবাহ দূরীকরণে বাবা ও মাকে বাল্যবিবাহের অসুবিধার দিকগুলো বোঝাতে হবে। আজকের কমিটি গঠন করার মধ্য দিয়ে যার যার উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করার মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের লক্ষ্যে এগিয়ে যাব। শিক্ষিত হয়ে বড় পর্যায়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে সমাজের বৈষম্য দূর হবে, এটাই আজকের সম্মেলন থেকে আমাদের অঙ্গীকার। অংশগ্রহণকারীগণ মনিঋষিদেরকে বাংলাদেশ সরকার দলিত হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানান।

অংশগ্রহণকারী মণিঋষি শিক্ষার্থীগণ দলগতভাবে কাজ করার মাধ্যমে বাল্য বিবাহ ও দলিত শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার কারণ চিহ্নিত করেন ও করণীয় নির্ধারণ করেন। করণীয় হিসাবে পারিবারিক সচেতনতা সৃষ্টি, ছেলেমেয়েদেরকে লেখাপড়া করার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ১৫ সদস্য বিশিষ্ট মানিকগঞ্জে জেলা দলিত ছাত্রকল্যাণ পরিষদ গঠন করা হয়।

IMG_20190623_142628

এর আগে জাতীয় সংগীত পরিবেশন এবং পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে সম্মেলনের কার্যক্রম শুরু হয়। সম্মেলনের শুরুতেই বারসিক’র আঞ্চলিক সমন্বয়কারী বিমল রায় সম্মেলনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি তার আলোচনায় বলেন, ‘দলিত শিক্ষার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। শুধু সাধারণ শিক্ষা নয়, কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে হবে। নিজেকে যেমন পরিবর্তন করতে হবে তেমনি অন্যদের পরিবর্তনের দায়িত্ব নিতে হবে। প্রত্যেককে একজন চেঞ্জ মেকার হতে হবে। সমাজ থেকে বাল্যবিবাহ দূরীকরণে ভূমিকা রাখতে হবে। সম্মিলিতভাবে সকল বৈষম্য ও প্রতিবন্ধকতার বিরুদ্ধে লড়াই করে এগিয়ে যেতে হবে। তাহলেই সমাজের মূলস্রোতধারার মানুষের সাথে সম্পৃক্ত হওয়া সম্ভব হবে।’ দলিত জনগোষ্ঠী সামাজিক বৈষম্য ও প্রতিবন্ধকতা রোধে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার উদ্যোগ গ্রহণে আগামী পরিকল্পনা গ্রহণ করেন।

happy wheels 2

Comments