পানি ও শক্তির সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করি

পানি ও শক্তির সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করি

সিলভানুস লামিন

ভূমিকা
একবিংশ্ব শতাব্দীতে এসে বিশ্বের জনসংখ্যা প্রায় তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে কিন্তু বিশুদ্ধ পানির চাহিদা বেড়েছে আরও বেশি; ৬ গুণ! বলা হচ্ছে, আগামী ৫০ বছরে বিশ্বের জনসংখ্যা আরও ৪০ থেকে ৫০% বৃদ্ধি পাবে। এসব বর্ধিত জনসংখ্যার জীবন-জীবিকা ও আবাসনের জন্য শিল্পায়ন ও নগরায়নের হারও যে সমানতালে বৃদ্ধি পাবে তাতে কোন সন্দেহ নেই।  জনসংখ্যা, শিল্পায়ন এবং নগরায়নের হার বৃদ্ধি পেলে বিশ্বের পানি সম্পদের ওপর স্বাভাবিকভাবেই চাপ বাড়বে। ফলশ্রুতিতে মানুষের ব্যাপক বিশুদ্ধ পানির চাহিদা পূরণের জন্য ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করে একদিকে যেমন ভূগর্ভস্থ পানির স্তর আরও নীচে নেমে পড়বে অন্যদিকে শিল্পায়ন ও নগরায়নের স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে বিশুদ্ধ পানির উৎসগুলোর দূষণ, দখল ও ভরাট বৃদ্ধি পাবে, যা সামগ্রিকভাবে পরিবেশের ওপর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করবে।

অন্যদিকে বর্ধিত জনসংখ্যার জন্য যেমন বিশুদ্ধ পানি নিশ্চিত করতে হবে ঠিক তেমনিভাবে তাদের সুন্দর, সুস্থ এবং স্বাভাবিক জীবনযাত্রা নিশ্চিত করার জন্য শক্তি (পেট্রোলিয়াম, কয়লা, প্রাকৃতিক গ্যাস) তথা জ্বালানিরও সমান প্রয়োজন পড়বে। পানির প্রাপ্যতা যেমন শক্তির সহলভ্যতাকে নিশ্চিত করবে তেমনিভাবে শক্তির সহজলভ্যতা বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থাপনা, ব্যবহার, পরিশোধন, পরিবহন ও সরবরাহকেও নিশ্চিত করবে। সারাবিশ্বে আজ পানির সঙ্কট পরিলক্ষিত হচ্ছে। পানি সঙ্কটের কারণে শক্তির উৎপাদনও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। কারণ প্রতিটি শক্তির উৎপাদন, পরিশোধন ও ব্যবহারযোগ্য করে তোলার জন্য পানির একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। সঙ্গত কারণেই ২০১৪ সালের বিশ্ব পানি দিবসের মূল প্রতিপাদ্য ছিলো “পানি ও শক্তি”। মূলত পানি ও শক্তির মধ্যকার আন্তঃসম্পর্ক, পরস্পরনির্ভরশীলতাকে তুলে ধরা এবং এ সম্পদের সহজলভ্যতার ওপরই যে মানবজাতির সামগ্রিক উন্নয়ন নির্ভর করে সেই তাৎপর্য ব্যাখ্যা করার জন্য এ প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছিলো। এবারের (২০১৬) বিশ্ব পানি দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে Better water better jobs। বাংলায় এই প্রতিপাদ্যকে আমরা ‘জীবন-জীবিকার সর্বক্ষেত্রেই পানি’ বলতে পারি। সেক্ষেত্রে বলা যেতে পারে পানি সম্পদগুলোর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা, সংরক্ষণ ও রক্ষার উদ্যোগ না নিলে জীবন-জীবিকার কোন উন্নয়ন ও অগ্রগতি হবে না। এ লেখায় মূলত পানি দূষণ, পানির ব্যবহার, পানি ও শক্তি মধ্যকার সম্পর্ক, পানির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিয়েই আলোকপাত করার চেষ্টা করা হয়েছে।

water day-1বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট; তারপরও দূষণ অব্যাহত
পৃথিবীর চার ভাগের তিন ভাগ হচ্ছে পানি। বিশুদ্ধ পানির উৎসগুলোর মধ্যে রয়েছে উপরিভাগের পানি তথা নদীনালা, খাল, বিল, নালা, ডোবা, পুকুর, ঝর্ণা এবং ভূগর্ভস্থ পানি। বলা হয়, পৃথিবীর মোট পানির মাত্র ২.৫ ভাগ মিষ্টি এবং বাকি ৯৭.৫ ভাগ পানি হচ্ছে লবণাক্ত। এছাড়া মিষ্টি পানির মধ্যে মাত্র ০.০২৫ ভাগ পানি হচ্ছে পানযোগ্য। ফলে কৃষির জন্য, গৃহস্থালী কাজের জন্য, শিল্পকারখানার জন্য এবং মানুষের পানের জন্য আজ সর্বত্রই পানি সঙ্কট অনুভূত হচ্ছে। অথচ বিশ্বব্যাপী বিশুদ্ধ পানির আধারগুলোর দূষণ, দখল এবং ভরাট যেভাবে করা হচ্ছে তাতে সবার মনে হতে বাধ্য হবে যে, পৃথিবীতে বিশুদ্ধ পানির উৎস অসংখ্য! উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, গঙ্গার পানিতে সহনীয় মাত্রার চাইতে অনেক বেশি আর্সেনিক পাওয়া তো গেছেই সাথে সাথে এই নদীর তীরবর্তী এলাকায় অসংখ্য গাছপালা নিধন এবং অবকাঠামো নির্মাণের কারণে এই নদীর পানি যোগানকারী হিমালয়ের হিমবাহ গলে যাওয়ায় পানি সঙ্কট এবং ভাটি অঞ্চলে ইতিমধ্যে খরা প্রবণতা দেখা দিয়েছে। আমাদের দেশে বুড়িগঙ্গা, ধলেশ্বরী, শীতলক্ষ্যাসহ ছোটবড় অনেকগুলো নদী দখল, ভরাট ও দূষণ করা হচ্ছে তথাকথিত উন্নয়নের দোহাই দিয়ে! উপরোন্তু রাসায়নিক কৃষি, উপকূলীয় অঞ্চলে অপরিকল্পিত চিংড়ি চাষের কারণে লবণাক্ততা, দেশের অসংখ্য জেলায় আর্সেনিক দূষণ, নদীর তীরবর্তী ও নদী পানিপ্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করে বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ এবং নদীর গর্ভে শিল্পকারখানার বর্জ্যসহ অন্যান্য মানব সৃষ্ট বর্জ্য নিক্ষেপের কারণে আজ বাংলাদেশেও পানি সঙ্কট তীব্র আকার ধারণ করছে। মানবসৃষ্ট এই আপদ জলবায়ু পরিবর্তনকে তরান্বিত করেছে। ফলশ্রুতিতে স্বল্প বৃষ্টিপাত, বৃষ্টিহীনতা এবং আকস্মিক বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ সংঘটিত হওয়ার ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ায় সামগ্রিকভাবেই বিশুদ্ধ পানির উৎসগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি হচ্ছে।

পানি সঙ্কট বনাম পানিব্যবস্থাপনা
জাতিসংঘের মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন (২০০৬) অনুযায়ী, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বর্তমানে ১.১ বিলিয়ন মানুষ বিশুদ্ধ পানির পর্যাপ্ত প্রবেশাধিকার নেই। একই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বে ১.৮ বিলিয়ন শিশু দূষিত পানি পানজনিত কারণে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। অন্যদিকে বিশ্বে পানি সঙ্কটের গভীর প্রভাব পড়েছে নারীর ওপর। কারণ সুপেয় পানি আহরণের জন্য গৃহস্থালি কাজের পাশাপাশি নারীকে দৈনিক কয়েক ঘণ্টা ব্যয় করতে হয়। এছাড়া দূষিত পানি পানের কারণে কিংবা গৃহস্থালি কাজে ব্যবহারের কারণে নারীরা নানান পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। মূলত দরিদ্ররাই এসব পানি সঙ্কটের নেতিবাচক প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বেশি। পানি সঙ্কটের মূলে অনেকে পানি সম্পদের বা আধারের স্বল্পতার তুলনায় পানি অব্যবস্থাপনাকে দায়ি করেছেন। সুপেয় পানি সম্পদের উৎসগুলোকে দূষণ পানি সমস্যা সৃষ্টি করছে তা সত্য; তবে পানি সম্পদের অপ্রতুলতা বা জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণেই যে বিশ্বব্যাপী সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে তা কিন্তু নয় বরং অনেকের মতে, পানি অব্যবস্থানাই এই সঙ্কটের মূল কারণ। একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের ১২% মানুষ ৮৫% ভাগ সুপেয় পানি ব্যবহার করে এবং ১২% মানুষ কিন্তু তৃতীয় বিশ্বে বাস করে না। তাদের মতে, পানি সঙ্কটের মূল কারণই হচ্ছে ক্ষমতা, দারিদ্র্যতা, অসাম্যতা। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের ১.৮ বিলিয়ন মানুষ দৈনিক ২০ লিটারের কম পানি ব্যবহার করে অন্যদিকে যুক্তরাজ্যের মানুষ দৈনিক ৫০ লিটার পানি ব্যবহার করে শুধুমাত্র টয়লেটে ফ্ল্যাশ করার জন্য। উন্নয়নশীল এবং তৃতীয় বিশ্বের মানুষেরাই সবচে’ বেশি পানি সঙ্কটে পড়লেও কোকাকোলার মতো বহুজাতিক কোম্পানির পানীয় উৎপাদনের জন্য তৃতীয় বিশ্ব বা উন্নয়নশীল দেশের পানি সম্পদ ব্যবহার করে।

পানি ও শক্তির ব্যবহার
পানি ও শক্তির (জ্বালানি) মধ্যে একটি গভীর আন্তঃসম্পর্ক রয়েছে। এ সম্পর্কের ভিত্তি ও সরল ব্যাখ্যা হলো: শক্তি (পেট্রোলিয়াম, কয়লা, প্রাকৃতিক গ্যাস, বায়ো-ফুয়েল) উৎপাদনের জন্য পানি খুবই প্রয়োজন এবং সবার জন্য সুপেয় ও বিশুদ্ধ পানির পানি সরবরাহের জন্য এসব শক্তির প্রয়োজন রয়েছে। ২০১১ সালের একটি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্বের প্রধান শক্তির উৎস হচ্ছে পেট্রোলিয়াম তেল (৩১.৫%)। এ শক্তি উৎপাদনের জন্য প্রচুর পরিমাণ পানির প্রয়োজন পড়ে, সেটা পেট্রোলিাম তেলের কুপ খনন থেকে শুরু করে পরিশোধন প্রক্রিয়া পর্যন্ত। একটি পরিসংখ্যান মতে, এক ইউনিট (ব্রিটিশ মিলিয়ন থারমাল ইউনিট) পেট্রোলিয়াম তেলকে ব্যবহারযোগ্য করার জন্য ৪৫৫০ থেকে ৯১৬০ লিটার বিশুদ্ধ পানির প্রয়োজন হয়। অন্যদিকে, কয়লা হচ্ছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম শক্তির উৎস (২৮.৮%)। এই কয়লা উত্তোলন, উৎপাদন, পরিবহন, পরিশোধন ও সরবরাহের করার জন্য পানির খুব বেশি প্রয়োজন হয়। এক ইউনিট কয়লাকে ব্যবহারযোগ্য করার জন্য ১৫৫ থেকে ৬২০ লিটার পানির প্রয়োজন হয়। প্রাকৃতিক গ্যাসের কুপ খনন ও পরিশোধনের জন্যও পানির প্রয়োজন হয়। এক ইউনিট প্রাকৃতিক গ্যাসকে ব্যবহারযোগ্য করার জন্য ১১ লিটার পানির প্রয়োজন পড়ে। এছাড়া ইদানিং বায়ো-ফুয়েল (ইথানল ও বায়ো-ডিজেল) এর ব্যবহার বিশ্বব্যাপী বেড়ে গেছে (১০%)। আমরা জানি ইথানল তৈরি হয় আখ, ভুট্টা এবং যব থেকে। অন্যদিকে বায়ো-ডিজেলের মূল উপাদান হচ্ছে, সয়াবিন, গ্রিস এবং সবজির তেল। দেখার বিষয় হচ্ছে, এক ইউনিট ইথানল তৈরি বা ব্যবহারযোগ্য করে তোলার জন্য ৯৫৪০ থেকে ১,১০,১৫৫ লিটারের বিশুদ্ধ পানির প্রয়োজন হয়। বায়ো-ডিজেলের ক্ষেত্রে পানির ব্যহার আরও বেশি (৫৩,০০০ থেকে ২, ৮৩, ৯০০ লিটারের পানি)! (সুত্র: http//wreform.org) এমনকি শক্তির দ্বিতীয় রূপ বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্যও প্রচুর পরিমাণ বিশুদ্ধ পানির প্রয়োজন হয়। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে এক ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য পানির প্রয়োজন হয় ৪১৬০ থেকে ৮৩৩০ লিটার! অন্যদিকে শক্তি ছাড়া পানির উৎপাদন, উত্তোলন, পরিশোধন, পরিবহন ও সরবরাহ করা কঠিন কাজ। একটি পরিসংখ্যান মতে, বিশ্বের ৮% শক্তি ব্যহার হয় পানি পরিশোধন, সরবরাহ ও উত্তোলনের জন্য! এসব শক্তির উৎপাদন ও ব্যবহাযোগ্য করার জন্য যেমন প্রচুর পানির প্রয়োজন রয়েছে ঠিক তেমনি এ পানির ব্যবহারকে যথাযথ করা এবং ব্যবহারযোগ্য করে তোলার জন্যও এসব শক্তির প্রয়োজন রয়েছে। উপরের আলোচনা থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, পানি ও শক্তির মধ্যে একটি আন্তঃসম্পর্ক বিদ্যমান। পানি ছাড়া যেমন শক্তির উৎপাদন হয় না ঠিক তেমনি শক্তি ছাড়াও পানির পরিশোধন ও এর ব্যবহার নিশ্চিত করা যায় না। তাই প্রয়োজন পানির সুষ্ঠু ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনা। কেননা পানির সঙ্কট অনুভূত হলে মানুষের সুপেয় থেকে শুরু করে জীবন-জীবিকার সার্বিক উন্নয়ন ও অগ্রগতি ব্যাহত হবে।

শক্তি উৎপাদনে বাংলাদেশে পানি ব্যবহার
ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি স্ট্যাটাসটিক’ প্রতিবেদন (২০১১) অনুযায়ী, বাংলাদেশের শক্তির উৎসগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রাকৃতিক গ্যাস (৫৩.৩%), বায়োমাস (২৮.২%), তেল (১৫.৫%), কয়লা (২.৯%) এবং হাইড্রো পাওয়ার (০.২%)। বাংলাদেশের বেশির ভাগ জ্বালানি বা শক্তিগুলোর উৎপাদনে তেল বেশি ব্যবহার হচ্ছে। সেক্ষেত্রে জ্বালানি বা শক্তি উৎপাদনে বাংলাদেশে পানির ব্যবহার কোন অংশে কম হওয়ার কথা নয়। ২০১১ সালে বাংলাদেশে ৪৪,০৬১ গিগাওয়াট-ঘণ্টা বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়। এ বিদ্যুৎ শক্তির বেশির ভাগই আসে প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে (৯১.৫%) এবং বাকিগুলো আসে তেল (৫.২%), বায়োমাস (১.৮%) ও হাইড্রো পাওয়ার (১.৫%) থেকে। তাহলে দেখা যায় যে, বাংলাদেশের মোট বিদ্যুৎ শক্তির (৯৮.৫%) উৎপাদন হয় জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার থেকেই। আমরা উপরের আলোচনা থেকে জানতে পারি যে, জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে এক ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য পানির প্রয়োজন হয় ৪১৬০ থেকে ৮৩৩০ লিটার। এ তথ্য থেকে আমরা স্পষ্ট বুঝতে পারি যে, বাংলাদেশে শক্তির বা জ্বালানিখাতে পানি ব্যবহারের পরিমাণ কোন অংশে কম নয়। তবে এটা ঠিক যে, জ্বালানি বা শক্তি উৎপাদন প্রক্রিয়ার যে পরিমাণ পানির প্রয়োজন হয় সেই পরিমাণ পানি সরবরাহের ক্ষেত্রে বর্তমানে বাংলাদেশ কোন ধরনের সমস্যার সন্মূখীন হচ্ছে না। তবে কে জানে অদূর ভবিষ্যতের কথা? বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগ এবং উজানে অবস্থিত দেশগুলো বাংলাদেশের প্রাপ্য পানির হিস্যা যদি না দেয় তাহলে অবশ্যই বাংলাদেশ নানা পানি সঙ্কটের মধ্যে পড়বে। বাংলাদেশে সবচে’ বেশি পানি ব্যবহৃত হয় সেচ কাজে এবং বাকি পানি ব্যবহৃত হয় গৃহস্থালি এবং শিল্পকারখানায়। বর্তমানে সারা বাংলাদেশে ১.২ মিলিয়ন সেচ পাম্প রয়েছে এসব পাম্পগুলোর মূল জ্বালানি হচ্ছে ডিজেল (সুত্র: যঃঃঢ়:http//wreforum.org)। জীবাশ্ম জ্বালানি উৎপাদন ও ব্যবহাযোগ্য করার ক্ষেত্রে যে পরিমাণ পানির প্রয়োজন হয় সেটি যদি বিবেচনা করি তাহলে পানির সঠিক ব্যবস্থাপনা যদি নিশ্চিত না করা হয় তাহলে অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশে পানি সঙ্কট তীব্র আকার ধারণ করতে পারে।

পানি ও শক্তির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা
উপরোক্ত আলোচনা থেকে স্পষ্টতই প্রতীয়মান যে, পানি ও শক্তির মধ্যে একটি গভীর সম্পর্ক রয়েছে। পানি ও শক্তির মধ্যকার এই সম্পর্ক আবার মানুষের জীবন ও জীবিকার উন্নয়নের সাথে সম্পৃক্ত। শক্তি সেটা নবায়নযোগ্য বা অনবায়নযোগ্য যেটাই হোক না কেন এ শক্তি ছাড়া মানুষের বা সভ্যতার উন্নয়ন অসম্ভব। আবার শুধু শক্তি থাকলেই যে মানুষের উন্নয়ন দ্রুত গতিতে এগেিয় যাবে সেটাও কিন্তু নয়। পানি ও শক্তি দু’টিই প্রয়োজন এই উন্নয়নকে বেগবান করার জন্য। জনসংখ্যার বৃদ্ধি, নগরায়নসহ অন্যান্য কারণে দিনে দিনে পানির ওপর ব্যাপক চাপ রয়েছে এবং অদূর ভবিষ্যতে এ চাপ অব্যাহত থাকবে। অন্যদিকে শক্তি ও পানি যোগান কিন্তু সীমাবদ্ধ। তাই পানি ও শক্তি উভয়ের ব্যবহার সুষ্ঠুভাবে করতে হবে। শক্তির অপচয়রোধ করে যেমন আমরা পানি সম্পদকে রক্ষা করতে পারি ঠিক তেমনি পানির অপচয়রোধেও শক্তি বা জ্বালানিগুলোকে আমরা রক্ষা করতে পারবো। শুধু তাই নয়; শক্তি ও পানির যোগান বৃদ্ধির জন্য এসব সম্পদের সংরক্ষণ, বিশুদ্ধ পানির উৎসগুলো রক্ষাসহ একটি সমন্বিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করা জরুরি যেখানে পানি ও শক্তির সুষ্ঠুব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা যাবে। এছাড়া এমন ধরনের শক্তির উৎসও উদ্ভাবন করতে হবে যে শক্তিগুলোকে ব্যবহারযোগ্য করার জন্য পানির ওপর কম চাপ পড়বে। বিশেষ করে নবায়নযোগ্য শক্তি তথা সৌরশক্তির উৎপাদন ও ব্যবহার বাড়ানোর দিকেও মনোযোগ দিতে হবে। এতে করে পানির ওপর যেমন কম চাপ পড়বে তেমনিভাবে অন্যান্য শক্তিগুলোকেও নিঃশেষিত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করা যাবে। বিশুদ্ধ পানির ও নবায়নযোগ্য শক্তির প্রাপ্যতা নিশ্চিত ও সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত হলে মানুষের জীবন-জীবিকার যে দ্রুত উন্নয়ন ও অগ্রগতি হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

happy wheels 2