সবুজ শান্তি নগর হোক আমাদের প্রত্যাশা

রাজশাহী থেকে শহিদুল ইসলাম

‘রাজশাহী আমাদের ঐতিহ্যের শহর, রাজশাহী আমাদের শান্তি ও সৌহার্দ্যরে শহর, রাজশাহী আমাদের সবুজের শহর, রাজশাহী সকল প্রাণের সুরক্ষার শহর। যে শহরে রাত দিন নারী ও পুরুষ শান্তি এবং নিরাপদে চলাফেরা করেন, কর্মে যোগদান করেন, যে শহরে সবুজের সমারোহের মধ্যে পাখির কলতানে আমাদের ঘুম ভাঙ্গে সেই শহরে বর্তমান সময়ে দিনে দিনে নানামূখী বিপর্যয় আমরা লক্ষ্য করছি। একদিকে এই শহরের পরিবেশের বিপর্যয় আরেক দিকে মানুষের আন্তঃসম্পর্ক ও নিরাপত্তার সংকট দিনে দিনে আমাদেরকে ভাবিয়ে তুলছে।’ কথাগুলো বলছিলেন বরেন্দ্র শিক্ষা সংস্কৃতি বৈচিত্র্য রক্ষা কেন্দ্রর তরুণ সভাপতি জাওয়াদ আহমেদ রাফি।

1 (1)

আজ (২৫ আগস্ট) রাজশাহীর সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টে রাজশাহী নগরীকে সবুজ ও শান্তির শহরসহ পরিবেশ ও মানুষের নিরাপত্তায় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসহ সকল শ্রেণী ও পেশার মানুষের কার্যকর পদক্ষেপ এবং ইভটিজিং, নারীর প্রতি সহিংসতাসহ সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বন্ধের দাবিতে রাজশাহীর ১৬টি তরুণ সংগঠন নিয়ে গড়ে উঠা রাজশাহী তরুণ সংগঠন ফোরামের আয়োজনে মানবন্ধন, গণস্বাক্ষর ও স্মারকলিপি প্রদান করেছেন। এতে রাজশাহীর বিভিন্ন নাগরিক সংগঠনের মানুষ, সাংবাদিক লেখকসহ বিভিন্ন সংগঠনের সচেতন মানুষরা তাদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, ‘এখানে মানুষের সাথে মানুষের আন্তরিকতা এবং পরিবেশের প্রতি মানুষের যে ভালোবাসা তা দিনে দিনে কমে যাচ্ছে। আমরা নানাভাবে উন্নয়ন করছি, আগের তুলনায় আমাদের দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু শুধু রাস্তা ঘাট, কলকারখানা আর বড় বড় অট্টালিকা করলেই যে সবকিছুর উন্নয়ন হয়ে যায় তা মোটেই বলা যায় না। ব্যাংকে অনেক টাকার সঞ্চয় থাকলেই সেটাকে সার্বিক উন্নয়ন বলা যায় না। দূর্ভাগ্যের বিষয় আমরা বর্তমান সময়ে উন্নয়ন বলতে সেইগুলোকেই বেশি সামনে নিয়ে আসছি। কিন্তু আমাদের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক, সৌহাদ্যের সম্পর্ক, পরিবেশের উন্নয়ন দিকগুলো একেবারেই কমে যােেচ্ছ। মানসিক দৈন্যতা আমাদেরকে বাধাগ্রস্ত করছে। আবার আইন, শৃঙ্খলা রক্ষায় সমন্বিত পদক্ষেপের অভাবে সমাজে সহিংসতা, নারীর প্রতি অসম্মান, নারী নির্যাতন, পরিবেশের প্রতি নির্দয় আচরণ বেড়েই চলেছে।’

3 (1)
বক্তারা আরও বলেন, ‘আমাদের শান্তির শহর রাজশাহীতেও দিনে দিনে সহিংসতা, নারী নির্যাতন, ইভটিজিংসহ সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বেড়েছে। একই সাথে উঠতি বয়সের কিশোরদের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি দেখা যাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে রাজশাহী শহরজুড়ে ছোট বড় অনেক অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। যা আমাদের সচেতন তরুণ-যুবকসহ নাগরিক সমাজকে ভাবিয়ে তুলেছে।’  স্ত্রীকে যৌন হয়রানির অপরাধ করায় রুয়েট শিক্ষককে মারধর, ঈদের ছুটিতে বাড়িতে ফেরার পথে কলেজ ছাত্রকে খুন, রুয়েট ছাত্রীকে।

তারা বলেন, ‘অটোরিকশায় লাঞ্চিত করা, স্কুল থেকে বাডিতে ফিরতে নওদা পাড়ায় ছাত্রীকে অপহরণ, রাজশাহী রেলস্টেশনে বাংলাদেশী বংশদ্ভুধ মার্কিন নাগরিকের হাতব্যাগ ছিনতাই, চিড়িয়াখানা কার্যালয়ে রুয়েট কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতিকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনাসহ আরো অনেক ঘটনা আমাদেরকে ভীষণভাবে ভাবিয়ে তুলেছে। নগরীর মানুষ হিসেবে আমরা অনিরাপত্তা বোধ করছি। উন্নত দেশের দিকে ধাবিত হচ্ছি আমরা শুধু টাকার হিসেব করে। ডিজিটাল বাংলাদেশ বলা হলেও সার্বিক পর্যায়ে আমরা ডিজিটালাইজেশন করতে পারিনি। ডিজিটাল নিরাপত্তা আরো বাড়ানো দরকার।’

উক্ত অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন রাজশাহী প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আসলাম-উদ-দৌলা, বারসিক বরেন্দ্র অঞ্চল সমন্বয়কারী শহীদুল ইসলাম, সেভ দ্যা নেচারের সভাপতি মিজানুর রহমান, আদিবাসী ছাত্র পরিষদের সহ-সভাপতি সাবিত্রী হেম্ব্রম, নবজাগরণ ফাউন্ডেশনের সভাপতি নাজমুল ইসলামসহ বিভিন্ন তরুণ সংগঠনের নেতাগণ। মানববন্ধন শেষে রাজশাহী জেলা প্রশাসককে গণস্বাক্ষর সম্মলিত দাবিসহ স্মারকলিপি দেয়া হয়।

4 (1)

শান্তির শহর রাজশাহী মহানগরীকে সত্যিকার অর্থেই সবুজের শহর এবং ডিজিটাল নগরী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য তরুণরা তিন দফা সম্মলিত দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলো:
১। ইভটিজিং, নারীর প্রতি সহিংসতাসহ সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বন্ধের অংশ হিসেবে শহরের সকল স্থানে খুব দ্রুত ক্লোজসার্কিট ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে।
২। সবুজ শহর রাজশাহীর বিভিন্ন পার্কে ভালো এবং সুস্থ মানুষের বিনোদনের সুবিধার জন্যে সার্বক্ষণিক পুলিশ পাহাড়ার ব্যবস্থা করতে হবে। একইসাথে প্রশাসনের অভিযানের নামে ভালো মানুষ যাতে হয়রানির শিকার না হয় সে বিষয়ে দেখতে হবে।
৩। শহরে সকল রাস্তায়/পয়েন্টে ডিজিটাল ট্রাফিকিং এর ব্যবস্থা করতে হবে।
৪। সবুজ শহর রাজশাহীতে কোনধরনের গাছ না কাটতে সার্কুলার জারি করতে হবে। শহরের ভিতর এবং আশপাশের পার্ক এবং বিনোদনের স্থানগুলোতে পাখিসহ বন্যপ্রাণী রক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

happy wheels 2

Comments