সাম্প্রতিক পোস্ট

একজন আদর্শ কৃষক মোশারফ হোসেন

নেত্রকোনা থেকে শংকর ম্রং
বিশ্বের প্রাকৃতিক দূর্যোগের ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বিশ্বের সবচেয়ে ভাটির দেশ হওয়ায় প্রাকৃতিক দূর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে সবচেয়ে ক্ষতির সন্মুখীন হয় আমাদের দেশটি। প্রাকৃতিক দূর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়ে সবচেয়ে বেশি আমাদের কৃষির উপর। বিশেষভাবে বন্যা, আগাম বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছাস, শিলা বৃষ্টি, পাহাড় ধস, খরা, ফসলে রোগ-বালাইয়ের প্রদুর্ভাব, কোল্ড ইঞ্জুরিসহ বিভিন্ন দূর্যোগের শিকার হয় আমাদের কৃষি। আমাদের দেশের কৃষি বিজ্ঞানীরা তাই জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এবং প্রাকৃতিক দূর্যোগের কারণে কৃষি ক্ষেত্রে সৃষ্ট দূর্যোগ মোকাবেলায় আগাম বন্যা, শিলা বৃষ্টি, খরা, ফসলে রোগ-বালাই সহনশীল, লবণ পানি ও শীত সহনশীল জাত উদ্ভাবনের আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের কৃষি বিজ্ঞানীরা সফলও হয়েছেন। কিন্তু কৃষকদের চাহিদানুযায়ী পছন্দের ফসলের (ধান ও অন্যান্য ফসল) জাত তারা এখনও নেভাবে আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়নি। তবে তারা তাদের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।

IMG_20181119_115626-W600
এক্ষেত্রে আমাদের দেশের কৃষকরাও পিছিয়ে নেই। কৃষি বিজ্ঞানীদের পাশাপাশি আমাদের কৃষক বিজ্ঞানীরাও বাছাই পদ্ধতিতে কিছু কিছু এলাকা উপযোগি ধানের জাত নির্বাচন করে জমিতে চাষ করে আলোড়ন সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছেন। এক্ষেত্রে কৃষক বিজ্ঞানী হরিপদ কাপালী উল্লেখযোগ্য। যিনি ‘হরি’ ধান নামের একটি ধানের জাত বাছাই পদ্ধতিতে আবিষ্কার করেছেন, যা বাংলাদেশ সরকারের বীজ প্রত্যয়নকারী এজেন্সী কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছে এবং ‘হরি’ ধান নামে বাজারজাত হচ্ছে। আবার বেশ কয়েকজন কৃষক রয়েছেন, যারা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে (ব্রিডিং) নতুন ধানের জাত উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছেন। যদিও তাদের এ ধরণের সফলতা কৃষি বিজ্ঞানী বা বীজ প্রত্যয়নকারী এজেন্সী কর্তৃক এখনও স্বীকৃতি পায়নি। এমনই একজন কৃষক বিজ্ঞানী ময়মনসিংহ জেলার তারাকান্দা উপজেলার তাড়াটি গ্রামের কৃষক মোশারফ হোসেন (৬০)। তিন পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের পিতা মোশারফ হোসেন পেশায় একজন কৃষক। বাড়ি ভিটাসহ মোট জমির পরিমান ৪০ কাঠা (৪ একর)। এর মধ্যে ৫ কাঠা জমি বসতভিটা (পুকুর ও বাড়ি), ২২ শতাংশ দুই ফসলী ধানী জমি এবং ১৩ শতাংশ জমি সারা বছর জলাবদ্ধ থাকায় কোন ফসল চাষ করা যায় না।

কৃষক মোশারফ হোসেন একাধারে একজন কৃষক ও উদ্ভাবক
কোথাও কোন নতুন জাত (ধান, সবজি, ফল) দেখলে তিনি তা সংগ্রহ করে নিয়ে নিজে চাষ করেন। তিনি ২০১১ সালে বারসিক’র সহযোগিতায় রামেশ্বরপুর গ্রামের কৃষক সায়েদ আহম্মেদ খান বাচ্চু ও রামকৃষ্ণপুর গ্রামের কৃষক আলীম উদ্দিনের নিকট ব্রিডিং এর মাধ্যমে ধানের নতুন জাত উন্নয়ন সম্পর্কে ধারণা লাভ করেন। কিন্তু এই সামান্য ধারণা নিয়ে তিনি ধানের নতুন জাত উদ্ভাবনের কাজে হাত দেয়ার সাহস পাননি। তাই সুযোগের অপেক্ষায় থাকেন এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের জন্য। নিয়মিত বারসিক রামেশ্বরপুর অফিসে তিনি যোগাযোগ করে খোঁজ খবর নিতে থাকেন। ২০১২ সালের আমন মৌসুমে সে সুযোগ তিনি পেয়ে যান। বারসিক ও কারিতাস বাংলাদেশ এর আমন্ত্রণে এবং মিজারিওর সহযোগিতায় ফিলিপাইন থেকে ব্রিডিং বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশে আসেন কৃষকদেরকে এবং বারসিক ও কারিতাস এর কৃষিবিদদেরকে ব্রিডিং এর মাধ্যমে ধানের নতুন জাত উন্নয়ন সম্পর্কে ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য। ২০১২ সালর আমন মৌসুমে বারসিক এর উদ্যোগে পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলার কবুতরখালী গ্রামে ধানের ব্রিডিং প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হলে সেখানে অংশগ্রহণের সুযোগ পায় কৃষক মোশারফ হোসেন। প্রশিক্ষণে তিনি হাতে কলমে ধানের ব্রিডিং প্রশিক্ষণ শেষে বাড়ি এসে ধানের ব্রিডিং করার সিদ্ধান্ত নেন। ২০১২ সালের বোরো মৌসুমে কৃষক মোশারফ হোসেন আগাম ফলন, উচ্চতা বেশি ও হেলে না পড়ায় স্থানীয় জাত ঝাপি বোরো ধানকে বাবা এবং ফলন বেশি, কিন্তু সময় বেশি লাগায় ব্রি-২৯ ধানকে মা করে আগাম, হেলে পড়েনা এবং ফলন ভালো এমন জাত উদ্ভাবনের জন্য প্রথম ব্রিডিং করেন। প্রাথমিকভাবে ব্রিডিং করে তিনি বেশ কিছু F-1 বীজ পেতে সক্ষম হন। ২০১৩ সালের আমন মৌসুমে তিনি ধানের ব্রিডিং এর কাজে আরও গভীরভাবে মনোনিবেশ করেন। আমন ২০১৩ মৌসুমে তিনি ৩টি স্থানীয় ও দু’টি উফশী জাতকে মা করে এবং পাঁচটি স্থানীয় জাতের ধানকে বাবা করে ব্রিডিং করেন এবং ৫টিরই পৃথক পৃথক F-1 জাত পেতে সক্ষম হন। বোরো মৌসুমে ব্রিডিং করে তিনি তিনটি জাতের F-1 বীজ পেয়েছেন। ব্রিডিংকৃত সকল ধানই তিনি নিজের জমিতে চাষ করছেন এবং সংরক্ষণের জন্য বারসিক রামেশ্বর অফিসে প্রত্যেকটি ব্রিডিংকৃত জাতের ধানের বীজ দিয়েছেন, যেগুলো বারসিক এর গবেষণা প্লটগুলোতে যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে। বোরো ২০১৯ মৌসুমে তিনি ব্রিডিং করে উদ্ভাবিত তিনটি জাত চাষ করেছেন। ২০১৯ আমন মৌসুমে একটা ব্রিডিংকৃত (স্বর্ণলতা+পাইজাম) জাত ৫ শতাংশ চাষ করেছেন। তবে কৃষক পর্যায়ে তার উদ্ভাবিত জাতগুলো বর্ধনের জন্য এখনও উপযোগি হয়নি বলে মোশারফ হোসেন জানান।

জৈব চাষি কৃষক মোশারফ হোসেন
কৃষক মোশারফ হোসেন একজন জৈব চাষি। এক সময় তিনি ধান ও সবজিসহ বিভিন্ন ফসল চাষ করতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করতেন। কিন্তু বারসিক’র কাজের সাথে যুক্ত হয়ে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক এর ক্ষতিকর দিকগুলো জানার পর তিনি সবজি ও মাছ চাষে কোন রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যহার করেন না। ধান চাষে বেশিরভাগই তিনি জৈবসার (কেঁচো কম্পেষ্ট) ব্যবহার করে থাকেন।

IMG_20190310_163122-W600

বোরো ২০১৯ মৌসুমে তিনি প্রায় ১৪ কাঠা (১৪০ শতাংশ) জমিতে কেঁচো কম্পোষ্ট দিয়ে ধান চাষ করে ভালো ফলন পেয়েছেন। ২০১৬ সালে তিনি বারসিক’র মাধ্যমে উন্নত জাতের কেঁচো সংগ্রহ করে প্রথমে একটি ছোট চারিতে কেঁচো উৎপাদন করেন। কেঁচোর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার পর তিনি বড় সিমেন্টের চারিতে কেঁচো কম্পোষ্ট উৎপাদন আরম্ভ করেন। এভাবে ধীরে ধীরে তিনি ৪টি সিমেন্টের বড় চারিতে কম্পোষ্ট উৎপাদন করতে থাকেন। চলতি বছরে তিনি কেঁচো কম্পোষ্ট উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ৭ ফুট/২.৫ ফুট একটি পাকা হাউজ তৈরী করেন। বর্তমানে তিনি ৪টি বড় চারি ও একটি হাউজে কেঁচো কম্পোষ্ট উৎপাদন করে প্রতিবারে (২ মাস পর পর) প্রায় ১০ মণ কম্পোষ্ট উৎপাদন করতে পারছেন। প্রতিটি চারি থেকে তিনি প্রতি দুই/আড়াই মাস পর প্রায় দেড় মণ এবং হাউজ থেকে প্রায় তিন মণ কম্পোষ্ট পান। তিনি আগ্রহী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নিকট মাঝে মাঝেই প্রতি কেজি এক হাজার দরে কেঁচো বিক্রি করেন। তবে কম্পোষ্ট তিনি সচরাচর বিক্রি করেন না। তবে অনেক সময় গ্রাহকদের জোড়াজুড়িতে প্রতি কেজি কেঁচো কম্পোষ্ট তিনি ১৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেন। তিনি গ্রামের তিনজন কৃষককে কেঁচো কম্পোষ্ট উৎপাদনের পদ্ধতি শিখিয়েছেন, যারা এখন কম্পোষ্ট উৎপাদন করছেন। মোশারফ হোসেনের তিনটি গরু রয়েছে। তিনটি গরুর গোবরই তিনি কেঁচো কম্পোষ্ট উৎপাদনে ব্যবহার করেন।

মৌ চাষি কৃষক মোশারফ হোসেন
কৃষক মোশারফ হোসেন একজন সৌখিন মৌ চাষি। ২০১৬ সাল থেকে তিনি স্থানীয় জাতের মৌ চাষ করছেন। ২০১২ সালে বারসিক এর উদ্যোগে বেশ ক’জন কৃষককে কিশোরগঞ্জ বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব এপিকালচার (বিআইএ) এ প্রশিক্ষণে পাঠানো হয়। প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্য ছিল মৌ চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে প্রাণবৈচিত্র্য বৃদ্ধি এবং ফুল ও ফসলের পরাগায়নের মাধ্যমে ফলন বৃদ্ধি করা। সে প্রশিক্ষণে কৃষক মোশারফ হোসেন এর ছোট ভাই অংশগ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণ শেষে তিনি সেখান থেকে একটি বক্সে মৌ কলোনী নিয়ে এসে চাষ আরম্ভ করেন। ছোট ভাইয়ের নিকট থেকে মৌ চাষ পদ্ধতি আয়ত্ব করে ২০১৬ সালে এলাকা থেকে স্থানীয় জাতের মৌ কলোনী সংগ্রহ করে কাঠ মিস্ত্রী দিয়ে বক্স তৈরি করে মৌ চাষ আরম্ভ করেন।

IMG_20190310_163330-W600

বর্তমানে তিনি ৪টি বাক্সে মৌ চাষ করছেন। প্রতিটি বক্স থেকে প্রতিমাসে তিনি গড়ে ১.৫ কেজি করে চারটি বক্স থেকে মাসে গড়ে ৬ কেজি মধু উৎপাদন করছেন। খাঁটি মধু হওয়ায় এলাকায় তার মধুর চাহিদা অনেক। প্রতি কেজি মধু এক হাজার টাকা দরে বিক্রি করেন। মৌ চাষে তেমন কোন পরিশ্রম না থাকায় তিনি মৌ বক্স আরও বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছেন। মধুর উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য যেসব ফলে বেশি মধু হয় সেসব ফুল তিনি বাড়ি আনাচে কানাচে রোপন করেছেন, যাতে মৌ মাছিরা সহজেই মধু সংগ্রহ করতে পারে। তিনি মধুপুর থেকে বাসর ফুল ও গ্লিরিসিডিয়া গাছের ডাল সংগ্রহ করে বাড়িতে রোপণ করেছেন। বাড়ির চারপাশে লিচু, আম, বরইসহ বৈচিত্র্যময় ফলের গাছ থাকায় মৌ মাছিদের মধু সংগ্রহে তেমন কোন সমস্যা হয়না।

বৈচিত্র্যময় ফল ও উদ্ভিদ সংরক্ষক মোশারফ হোসেন
কৃষক মোশারফ হোসেন একজন বৈচিত্র্যময় ফল ও উদ্ভিদ সংরক্ষক। বৈচিত্র্যময় ফল ও উদ্ভিদ সংগ্রহ করে বাড়ির চারদিকে রোপণ করা তার নেশা। ট্যাং ফল ও কফি থেকে শুরু করে হরেক রকমের ফল, ফুল ও উদ্ভিদ রয়েছে তার সংরক্ষণে। কোথায় বেড়াতে গিয়ে বৈচিত্র্যময় ও ভিন্ন কোন গাছ দেখলেই তিনি তার চারা সংগ্রহ করে নিয়ে আসেন।

IMG_20190310_163629-W600

কৃষক প্রশিক্ষক মোশারফ হোসেন
কৃষক মোশারফ হোসেন একজন কৃষি প্রশিক্ষকও। তিনি ধানসহ বিভিন্ন ফসল চাষ বিষয়ে এলাকার বিভিন্ন জনসংগঠন ও কৃষকদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। বিশেষভাবে দু’টি ধান ব্রিডিং এর মাধ্যমে নতুন জাতের ধান উদ্ভাবন পদ্ধতি সম্পর্কে তিনি আগ্রহী কৃষকদের প্রশিক্ষণ প্রদান করেন।

W600-W600

তিনি ইঁদুর মারার বিভিন্ন ধরণের ফাঁদ তৈরি করে জমিতে ব্যবহার করে ইঁদুরের আক্রমণ থেকে ক্ষেতের ফসল রক্ষা করে থাকেন। ইঁদুর মারার বিভিন্ন কৌশল তিনি এলাকার কৃষকদের শিখিয়ে জমির ফসল রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন। তিনি ভেষজ কীটনাশক তৈরি ও ব্যবহার পদ্ধতি সম্পর্কে কৃষকদের প্রশিক্ষণ প্রদান করে থাকেন।

সংগঠক মোশারফ হোসেন
কৃষক মোশারফ হোসেন একজন দক্ষ সংগঠক। কৃষকদের কৃষি সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে কৃষি বিভাগের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তাদের অনেক ডাকাডাকির পর না পেয়ে তিনি এলাকার কৃষকদের সংগঠিত করে ২০১০ সালে গড়ে তোলেন ‘তাড়াটি কৃষক সংগঠন’ নামে একটি কৃষক সংগঠন। মোশারফ হোসেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক। সংগঠনের মোট সদস্য সংখ্যা ৪১ জন। সংগঠনের মাসিক সভায় সদস্যরা তাদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন। সংশ্লিষ্ট সমস্যা সমাধানে অভিজ্ঞ ব্যক্তি আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান দিয়ে থাকেন। কোন সমস্যা সংগঠনের সদস্যরা সমাধান করতে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট বিভাগে যোগাযোগ করে তার সমাধান দিয়ে থাকেন। মোশারফ হোসেন ভালো কোন কিছু শুধুমাত্র নিজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখেন না, সেগুলো তিনি সংগঠন ও এলাকার অন্যদের মধ্যেও বিলিয়ে দেন। ২০১৬ আমন মৌসুমে তিনি এলাকা উপযোগি ধানের জাত নির্বাচনের জন্য সংগঠনের উদ্যোগে পরিচালিত প্রায়োগিক গবেষণা থেকে ইয়র চাল নামে একটি স্থানীয় জাতের ধান নির্বাচন করে পরবর্তী মৌসুমে জমিতে চাষ করে ভালো ফলন পাওয়ায় তার বীজ সংরক্ষণ করে রাখেন। ২০১৮ আমন মৌসুমে তিনি প্রায় ৪ কাঠা (৪০ শতাংশ) জমিতে ইয়র চাল ধান চাষ করেন। ধান আকারে ছোট ও চিকন, ফলন ভালো এবং খেতে সুস্বাদু হওয়ায় এলাকার কৃষকরা ধানটির বীজের চাহিদা দেয় কৃষক মোশারফের নিকট। ২০১৯ আমন মৌসুমে গ্রামের ১৪ জন কৃষক ১-১০ কেজি করে ইয়র চাল ধানের বীজ তার কাছ থেকে সংগ্রহ করে নিয়ে জমিতে চাষ করেছে। মোশারফ হোসেন নিজেও চলতি আমন মৌসুমে ১০ কাঠা জমিতে ইয়র চাল ধান চাষ করেছেন।

কৃষক মোশারফ হোসেন পরিবেশ সংরক্ষক ও পরিবেশবান্ধব কৃষক। তিনি এলাকায় সহজপ্রাপ্য প্রাকৃতিক সম্পদগুলো নিজস্ব জ্ঞানে ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরণের ফসল চাষ করে থাকেন। তার আগ্রহ, তার সৃজনশীলতার ফলে এলাকায় যেমন প্রাণবৈচিত্র্য বৃদ্ধি ও সংরক্ষিত হচ্ছে, তেমনি উৎপাদিত হচ্ছে নিরাপদ ও বৈচিত্র্যময় খাদ্য। কৃষি সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে তিনি নিজের জ্ঞানকে ব্যবহার করে উদ্ভাবন করছেন সমস্যা সমাধানের নতুন নতুন কৌশল। বাংলার সকল কৃষক যদি কৃষক মোশারফ হোসেনের মত কৃষিপ্রাণবৈচিত্র্য, পরিবেশ, প্রকৃতি ও নিরাপদ খাদ্য নিয়ে ভাবত তাহলে বাংলার সকল মানুষের এবং মানুষসহ সকল প্রাণের জন্য নিরাপদ ও বৈচিত্র্যময় খাদ্য সুনিশ্চিত হত। প্রকৃতি ও পরিবেশ হত নির্মল ও প্রাণবান্ধব। আমরা কৃষক মোশারফ হোসেনের সফলতা কামনা করি।

happy wheels 2

Comments