তুমি কি কৃষক হওয়ার স্বপ্ন দেখো?

রাজশাহী থেকে মো. শহিদুল ইসলাম

‘আমাদের কৃষি আমাদের প্রাণবৈচিত্র্য আমাদেরকেই রক্ষা করতে হবে। সেটা পরিবেশবান্ধব কৃষির মধ্যে দিয়েই রক্ষা করতে হবে।’ গতকাল রাজশাহী পদ্মা গার্ডেনে কফিবার মিলনায়তনে বিশ্ব খাদ্য দিবস উপলক্ষে তরুণদের মুক্ত আলোচনা “তুমি কি কৃষক হওয়ার স্বপ্ন দেখো?” শীর্ষক মতবিনিময়ে তরুণরা এ বক্তব্য তুলে ধরেন।

BARCIK--

উক্ত অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে বারসিক ও স্থানীয় তরুণ সংগঠন বরেন্দ্র শিক্ষা সংস্কৃতি বৈচিত্র্য রক্ষা কেন্দ্র। তরুণদের মুক্ত আলোচনায় বলা হয়, বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণ একটি দেশে পরিণত হয়েছে। কিন্তু নিরাপদ এবং স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের সংকট দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। তারা বলেন, ‘এখন খাদ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে পরিবেশ, প্রতিবেশ, বৈচিত্র্য, সংস্কৃতি এবং জনগোষ্ঠীর আকাংখাকেও গুরুত্ব দিতে হবে। খাদ্য নিরাপত্তার পাশাপাশি মানুষসহ সকল প্রাণসত্তার খাদ্যের কথা সবাইকে ভাবতে হবে।’

অনুষ্ঠানের বরেন্দ্র অঞ্চলের জাতীয় পরিবেশ পদক প্রাপ্ত কৃষক ইউসুফ আলী মোল্লা পরিবেশসম্মত কৃষির বিষয়ে তাঁর নিজের অভিজ্ঞতাগুলো তরুণদের মাঝে তুলে ধরেন। একই সাথে বরেন্দ্র অঞ্চলের তরুণ কৃষক আলমাস এবং শাকির আহমেদ কৃষিতে তাদের সফলতার দিকগুলো তুলে ধরেন। মুক্ত আলোচনার মাধ্যমে তরুণ পরিবেশবান্ধ কৃষির নানা দিকগুলো জানেন। একই সাথে আগামীতে কে হবেন আদর্শ ও পরিবেশবান্ধব কৃষক তাদের চাহিদা নেয়া হয়।

BARCIK-2 (1)

পরিবেশবান্ধব কৃষি এবং কৃষির সকল প্রশ্নত্তোর পর্বে আলোচক ছিলেন বারসিক’র কৃষি গবেষক কর্মকর্তা অমৃত কুমার সরকার। অনুষ্ঠানে তরুণদের সচেতনাতামূলক বিষয়ে কথা বলেন দা ডেইলি স্টারের রাজশাহী প্রতিনিধি আনোয়ার আলী হিমু। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বারসিক বরেন্দ্র অঞ্চল সমন্বয়কারী শহিদুল ইসলাম। তরুণদের মুক্ত আলোচনা কে হবেন আগামীর কৃষক বিষয়ে সঞ্চালনা করেন বরেন্দ্র শিক্ষা সংস্কৃতি ও বৈচিত্র্য রক্ষা কেন্দ্রর সভাপতি জাওয়াদ আহমেদ রাফি।

অনুষ্ঠানের শুরুতে ধারণাপত্র পাঠ করেন বারসিক বরেন্দ্র অঞ্চল সমন্বয়কারী শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘থালা ভরা খাদ্য পেলেও আমরা নিরাপদ খাদ্য কমই পাচ্ছি।’ তিনি আরও বলেন, বারসিক’র ২০১৭ সালের গবেষণায় দেখা যায়, ৯৮.৩৪ ভাগ কৃষক কীটনাশক ব্যবহার করেন। এর ভেতর ৬১.৫৩ কৃষক ক্যান্সার, লিভারের সমস্যা, বহুমূত্র, শ্রবল সমস্যা, কিডনি জটিলতা, শারীরিক ও মানসিক বিকাশে বাধাগ্রস্ত হওয়ার মতো জটিলতায় ভুগছেন। কীটনাশকের এই ক্ষতিকর প্রভাব শুধু মানব স্বাস্থ্যেও ক্ষতি করছে না, তা পরিবেশকেও দূষণ করছে। কীটনাশকের এরকম অবাধ ব্যভহার কৃষির ফলন বাড়াচ্ছে কিন্তু খাদ্যকে করে তুলছে বিষাক্ত, যা খাওয়ার পর মানুষ নানা রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে এবং তা সারিয়ে তোলার জন্য আরো বেশি সময় মনোযোগ ও অর্থ নষ্ট হচ্ছে। সব মিলে একটা ভয়ংকর সংকটকালিন সময়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা।’

BARCIK-3

আর এই সংকটকালিন সময়ে তরুণরাই পরিবেশবান্ধব কৃষি চর্চার মাধ্যমে আগামীতে সংকটকে কাটিয়ে তুলতে পারবে। তরুণরা অভিজ্ঞজনের অভিজ্ঞতা নিয়ে এগিয়ে চলবে। একইসাথে কৃষিতে তাদের অংশগ্রহণ বাড়বে।

happy wheels 2

Comments