সাম্প্রতিক পোস্ট

নিরন্তরভাবে মানুষের সেবা করছেন প্রশিক্ষিত অর্চনা রেমা

কলমাকান্দা থেকে আলপনা নাফাক

অর্চনা রেমা বয়স ৪৬ বছর। তিনি একজন গৃহিনী। খারনৈ ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা তিনি। তিন ছেলে এক মেয়ে তাঁর। ছেলেমেয়েরা সবাই স্কুল এর গণ্ডি পেরিয়ে কলেজে পড়াশুনা করছে। স্বামী ঢাকায় চাকুরী করেন। তার পরিবারে এক বিধবা ও প্রবীন মা রয়েছে। অর্চনা রেমা স্বামীর পাশপাশি ছেলেমেয়েদের পড়াশুনার খরচ ও সংসারের খরচ মিটিয়ে থাকেন বিভিন্ন ধরনের কাজ করে। তিনি ২০১৩ সালে বারসিক কর্তৃক আয়োজিত ধাত্রী প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণ পাওয়ার পর তিনি জনগোষ্ঠীর সাথে সর্ম্পক উন্নয়নের জন্য নিজ গ্রাম থেকে শুরু করে ধাত্রী বিষয়ে নারীদের সাথে আলোচনা করা।


প্রশিক্ষণে তাঁকে কিছু উপকরন দেওয়া হয়। উপকরণগুলো হল বিপি মেশিন, ্ওজন মেশিন, থার্মোমিটারসহ ডেলিভারির কাজে ব্যবহৃত যাবতীয় যন্ত্রপাতি। প্রথমে তিনি বিপি মেশিন, ওজন মেশিন ও থার্মোমিটার নিয়ে গ্রামে যেতেন জনগোষ্ঠীকে সেবা দেওয়ার জন্য। এভাবে তিনি জনগোষ্ঠীর কাছে পরিচিতি হয়ে ওঠেন। পরর্বতীতে তিনি বাড়িতে থেকেই জনগোষ্ঠীকে সেবা দিতেন। অনেকসময় দিনে ২০০-৩০০ টাকা প্ওায়া যেত। এই প্রসঙ্গে অর্চনা রেমা বলেন, ‘আমি ধাত্রী প্রশিক্ষণ পেয়েছি এবং ভালোভাবে তা শিখেছি। কিন্ত আমি গর্ববতী মায়েদের হাসপাতালে ডেলিভারি করানোর জন্য পরার্মশ দেই। কারণ গ্রামে ডেলিভারি করানো হলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে।’
এভাবেই চলছিল তাঁর কাজ। হঠাৎ তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন যে, জনগণের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তো সেবা হয় না। তাই তিনি বিনা টাকায় এখন জনগণের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে অর্চনা রেমা বলেন, ‘আমাকে বারসিক ধাত্রী প্রশিক্ষণ দিয়েছে জনগণের সেবা দেওয়ার জন্য। কিন্ত কিছু করার পরিবর্তে যদি টাকা নেই তবে সেবা কিসের! তাই আমি এখন বিনা টাকায় সেবা দিয়ে যাচ্ছি।’
সেবা গ্রহণকারী খাদিজা বেগম বলেন, ‘আমি দিদির কাছে আসি উচ্চ রক্তচাপ পরীক্ষা করার জন্য। দিদি নিয়মিত পরীক্ষা করে দেখেন এবং আমাকে পরার্মশ দিয়ে থাকেন। আমি তার কথামত চলি। কোন সমস্যা হয় না। তবে তার কাছে যদি ঔষধ থাকত তাহলে আরো ভালো হত।’ এমনিভাবে অর্চনা রেমা নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা সকলকে বিনামূলে স্বেচ্ছায় সেবা দান করে থাকে।
মালতী আজিম বলেন, ‘আমি জ্বর হলে অর্চনা রেমার কাছে পরীক্ষা করতে আসি। আর মাথা ও ঘাড় ব্যথা করলে প্রেসার চেক করার জন্য আসি। যখন আসি তখনই তাকে পাওয়া যায়। কোন অনীহা প্রকাশ করে না।’
তাসলিমা বেগম বলেন, ‘অর্চনা দিদি আমাদের ভালোভাবেই প্রেসার চেক করে দেন। আমরা তার কাছেই যাই। কারণ আমাদের গ্রামে আর কেউ নেই যে প্রেসার চেক করার জন্য। তাই আমরা তার কাছ থেকে জেনে ঔষধ বাজার থেকে এনে খায়। আরো আমাদের সুবিধা হত যদি দিদির কাছে আমরা ঔষধ পাইতাম।’
অর্চনা রেমা বলেন, ‘দিনে কমপক্ষে ৫-৬ জন আসে জ্বর হলে তাপমাত্রা মাপার জন্য আর প্রেসার চেক করার জন্য। র্গভবতী নারীরা আসেন ওজন আর প্রেসার চেক করার জন্য।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমি কোন দিনও কাউকে ফিরিয়ে দেই না। সবাইকে চেক করে দেয় শত ব্যস্ত হলেও।’
রোকেয়া বেগম বলেন, ‘আমি বৃদ্ধ মানুষ অতদুরে যাইতে পারিনা প্রেসার মাপার জন্য। আর আমার টাকাও নাই। তাই আমি অর্চনা দিদি কাছে আসি। দিদি কোন দিন টাকা চান না, বাজারে প্রেসার চেক করতে লাগে ২০ টাকা। এদিকে আমার টাকাও লাগলও না দুরে যাওয়াও হইল না।’
অর্চনা রেমা বলেন, ‘আমি যতদিন পারি এভাবেই জনগণের সেবা দিয়ে যাব এবং জনগণের পাশে দাঁড়াব। আমার মাধ্যমে একজন মানুষ উপকৃত হবে এটাই চাই। এটাই আমার স্বপ্ন।’

happy wheels 2