আমাদের উদ্যোগগুলো আরো সম্প্রসারণ হওয়া দরকার

সাতক্ষীরার শ্যামনগর থেকে বিশ্বজিৎ মন্ডল
‘আমরা এখান থেকে প্রায় ২ বছর আগে বারসিক’র কাজের সাথে যুক্ত হই। আর সেখান থেকে যুক্ত হওয়ার পর বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম ও উদ্যোগ গ্রহণ করছি। আমরা বিভিন্ন সময় এলাকার পানি, দুর্যোগ, ভার্মি কম্পোস্ট, স্থানীয় বীজ, পরিবেশবান্ধব চুলা ব্যবহার, প্রাণী সম্পদ পালন, অচাষকৃত উদ্ভিদ বৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও ব্যবহার, সরকারি প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ তৈরি বিষয়ে আলোচনা সভা করেছি। এলাকার দুর্যোগ সম্পর্কে ও দর্জি কাজে বিষয়ে কুইজ প্রতিযোগিতা করেছি। সাথে অচাষকৃত উদ্ভিদের পাড়া মেলা, রান্না প্রতিযোগিতা, দর্জি প্রশিক্ষণ, পরিবেশবান্ধব চুলা তৈরি ও ব্যবহার বিষয়ে ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ আয়োজন করেছিলাম। সাথে নিজেরা একটি সংগঠন তৈরি করে সেখানে সঞ্চয় কাজ চলমান রেখেছি। আামরা সংগঠিত হয়ে এসকল কার্যক্রম আয়োজন করেছি বারসিক’র সহায়তা। যা আমাদের অনেক উপকার হয়েছে। একাজগুলো বা আমাদের উদ্যোগ গুলো আরো সম্প্রসারণ হওয়া দরকার।’


উপরোক্ত কথাগুলো বললেন শ্যামনগর উপজেলা কাশিমাড়ি ইউনিয়নের জয়নগর গ্রামের জয়নগর কৃষি নারী সংগঠনের সভানেত্রী অর্চনা রানী মন্ডল। গতকাল বারসিক’র সহায়তায় জয়নগর কৃষি নারী সংগঠনের উদ্যোগে অর্চনা রানী বাড়ি বিগত সময়ে কি কি কাজ হয়েছে এবং তার সফলতা উপস্থাপন বিষয়ে গ্রাম পর্যায়ে আলোচনা সভায় উপরোক্ত কথাগুলো বলেন তিনি। আলোচনা সভায় জয়নগর গ্রামের কৃষক-কৃষাণী ও বারসিক কর্মকতাসহ ৪ জন পুরুষ ও ১৫ জন নারীসহ মোট ১৯ জন অংশগ্রহণ করেন।
আলোচনাসভায় রোজিনা বেগম বলেন, ‘বারসিক’র সাথে যুক্ত হয়ে আমরা যে সব কাজ করছি তাতে আমাদের কিছু মানুষের উপকার হয়েছে। আগে কোন সংগঠন ছিলো না আমরা নারীরা কোন টাকা সঞ্চয় রাখতে পারতাম না এখন নারীরা কিছা টাকা সঞ্চয় করতে পারছি। সাথে এ সঞ্চয় টাকা দিয়ে নিজেদের মধ্যে ঋণ দিচ্ছি এতে একটা লাভও পাচ্ছি আমরা। এছাড়াও আমরা যে ২৫ জনকে দর্জি কাজের প্রশিক্ষণ প্রদান করেছিলাম তার মধ্যে প্রায় ২০ জন নিজের মতো করে বাড়িতে কাজ করছে এবং নিজেরা মেশিন ক্রয় করেছে। এতে করে নারীরা সংসারের আয়ের কাজের সাথে যুক্ত হতে পারছি।’


অংশগ্রহণকারী নারী রেকমনি রানী বলেন, ‘যে আমরা পরিবেশবান্ধব চুলা প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম এবং বারসিক থেকে আমাদের কয়েকজনকে চুলা সহায়তা করেছিলো।এই চুলায় রান্না করা অনেক উপকার রয়েছে। এটি স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো। চোখে ধোয়া লাগে না, তাপ কম লাগে আবার জ্বালানিও কম লাগে। এটি আমাদের দেখে অনেকেই করছে এখন অধিকাংশ বাড়িতে এই চুলা দেখা যায়।’ অন্যদিকে নারী মর্জিনা, সুমা ও মনিরারার বলেন, ‘বিভিন্ন আলোচনার মাধ্যমে আমরা দুর্যোগ সম্পর্কে জানতে পেরেছি। দুর্যোগের আগে ও পরে করণীয় কি তা জানতে পেরেছি, সংকেত সম্পর্কে জানতে পেরেছি। সাথে অচাষকৃত উদ্ভিদের ব্যবহার ও গুণাবলী সম্পর্কে ধারণাও পেয়েছি।’


কৃষক প্রভাস চন্দ্র মন্ডল বলেন, ‘বারসিক ও উপজেলা জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহায়তায় আমার বাড়িতে একটি ডিপ টিউবওয়েল পেয়েছিলাম। আর সে পানি দিয়ে আমার বাড়িতে সারাবছর বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষাবাদ করতে পারছি। সাথে আমাদের এখানকার প্রায় ১০০ পরিবারের খাবার পানির সমস্যা পূরণ হচ্ছে। এছাড়াও প্রায় ১৫-২০টি পরিবার তাদের গৃহস্থালির কাজে এ পানি ব্যবহার করছে। আগে আমর বর্ষা ও শীতের সময় কিছু সবজী চাষ করতে পারতাম। কারণ গরমের সময় সব ক্ষেত শুকিয়ে যেতো এবং লবণ কেটে উঠতো আর এখন সব সময় ফসল ফলাতে পারছি। এখন আর আমাদের অন্যের পুকুরে যাওয়া লাগে না। এই টিউবওয়েলে সব কাজে মিটে। নিজেরা একত্রিত এবং সংগগঠিত থাকলে অনেক কিছু করা যায় বলে মনে হয়।’


অংশগ্রহণকারীরা সরকারি প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ কম, বিভিন্ন ভাতা প্রাপ্তিতে সমস্যা, ভালো বীজের সমস্যা এলাকার সুপেয় পানির আধার পর্যাপ্ত না থাকাকে প্রধান সমস্যা বলে মনে করেন এবং এসকল সমস্যা সমাধানের জন্য নিজেদেরকে আরো বেশি করে উদ্যোগ গ্রহণ করা এবং উদ্যোগগুলোকে সম্প্রসারণে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সহায়তা কামনা করেন।

happy wheels 2

Comments