শোনার চেয়ে দেখা ভালো

সাতক্ষীরার শ্যামনগর থেকে বিশ্বজিৎ মন্ডল
বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিম উপকূলীয় এলাকার জনগোষ্ঠীরা বিভিন্ন ধরনের দুর্যোগের সাথে অতি পরিচিত। প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরনের দুর্যোগের সাথে মোকাবেলা করে টিকে থাকতে হচ্ছে তাদেরকে। এ দুর্যোগের মধ্যে আছে প্রকৃতিক দুৃুর্যোগ ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগ। আর শত প্রতিকূলতার মধ্যেও তারা নিজেদের জ্ঞান-দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে টিকে থাকার চেষ্টা করছেন। কখনো কোন সরকারি-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় বিভিন্ন ধরনের আলোচনা, প্রশিক্ষণ, সেমিনার ও মেলার মাধ্যমে; কখনো আবার নিজেদের মধ্যে পারস্পারিক আলোচনা, নিজেদের সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী ভূমিকা, কখনো ভালো কিছু করে নিজেদের মধ্যে দেখানো, পরামর্শ নেওয়া এভাবে যেন নিজেদের মধ্যে জ্ঞান-দক্ষতা-অভিজ্ঞতা ও সম্পদ আদান প্রদানসহ নানান ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করে চলেছেন তারা। তেমনি করে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পর্যায়ে অভিজ্ঞতা বিনিময় সফর একটি ভালো উদ্যোগ হিসেবে পরিচিত।


এর ধারাবাহিকতায় বারসিক’র উদ্যোগে গত ২৮ জানুয়ারি কর্মএলাকার কৃষক-কৃষাণীরা নিজেদের মধ্যে পারস্পারিক জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা এবং সম্পদ বিনিময়ের জন্য এক অভিজ্ঞতা বিনিময় সফরের আয়োজন করা হয়েছে। এই অভিজ্ঞতা বিনিময় সফরে কর্মএলাকার কাশিমাড়ি ইউনিয়নের কাশিমাড়ি, শংকরকাটি ও কাঠালবাড়িয়া, শ্যামনগর সদর ইউনিয়নের কালমেঘা, চিংড়াখালী ও চন্ডিপুর, ভুরুলিয়া ইউনিয়নের কাচড়াহাটি গ্রামের আগ্রহী ও উদ্যোগী ৩৬ জন কৃষক-কৃষাণী ও শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে শংকরকাটি গ্রামের নাজমা বেগমের কৃষি বাড়ি পরিদর্শন করেন।


পরিদর্শনে তারা প্রথমত নাজমা বেগমের কৃষি বাড়িতে তাঁর স্থায়িত্বশীল কৃষি, ফসল ব্যবস্থাপনা, অচাষকৃত উদ্ভিদ বৈচিত্রের প্লট, বীজ সংরক্ষণ, প্রাণী সম্পদ পালন, স্থানীয় গলাছেলা মুরগির খামার, পুকুরে মাচ চাষ, পুকুর পাড় সংরক্ষণের উদ্যোগ পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।


আলোচনায় অংশগ্রহণকারীরা নাজমা বেগমের কাছে তার এ উদ্যোগ সম্পর্কে জানতে চান। তিনি কীভাবে এই কাজ কবে এবং কিভাবে শুরু করেছিলেন, কিভাবে ফসল চাষ করেন, বীজ সংরক্ষণ কিভাবে করেন, ফসল পরিচর্যা কিভাবে করেন, বারোমাস কি কি সবজি চাষ করেন, অচাষকৃত এসব শাক কথা থেকে সংগ্রহ করেছেন, সংগঠনের কয়জন সদস্য, সংগঠনে কি কি কাজ করেন, এরকম নানান ধরনের বিষয় জানতে চান এবং নাজমা বেগম একে একে তাদের প্রশ্নের উত্তর দেন।


সাথে সাথে নাজমা বেগম আরো বলেন, ‘আমি এগুলো সব কিছ’ করেছি আমার ইচ্ছায়। আর এ ইচ্ছাশক্তি বেড়েছিল সেদিন যেদিন আমি বারসিক’র সহায়তায় আপনাদের মতো ধুমঘাটের অল্পনা রানী মিস্ত্রির বাড়ি দেখতে গিয়েছিলাম। তার ঐ বাড়ি দেখে আমি সেদিন কথা দিয়ে এসেছিলাম যে, আমিও এরকম একটি বাড়ি করবো। যেখানে আমাদের এলাকার মানুষসহ বাইরের বিভিন্ন মানুষ এখানে আসতে পারে। সাথে বিভিন্ন ধরনের প্রাণবৈচিত্র্য সংরক্ষণ রাখতে পারি। আর আমার এ কাজে আমার পুরো পরিবার সবসময় আমাকে বিভিন্ন ভাবে সহায়তা করে। আপনারাও চেষ্টা করলে ভালো কিছু করতে পারবেন।’


পরিদর্শনে অংশগ্রহণকারী বনশ্রী রানী, সম্পা রানী, অনিমা, অমিতা ও আবেদারা তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করে জানান, নাজমা বেগম অল্প দিনের মধ্যে একটি ভালো কৃষি বাড়ি তৈরি করেছেন। এখানে অনেক ধরনের বৈচিত্র্য আছে। এটা একটা ভালো উদ্যোগ। ইচ্ছা থাকলে সব কিছু করা যায়। তাদেরও ইচ্ছা হয় কিন্তু পারিপাশি^ক পরিবেশের জন্য করতে পারেন না। কারণ তাদের এলাকাতে লবণাক্ততা বেশি। কিন্তু যতটুকু জায়গা আছে তারা নাজমা বেগমের মতো করার চেষ্টা করবেন বলে তারা জানা।


তারা বলেন, ‘আমরা মনে করি যে, শোনার চেয়ে দেখা ভালো, আজ এখান থেকে যা দেখলাম তা থেকে আমাদের শক্তি আরো বেড়ে গেলো। আমরাও নারী তিনিও নারী। তিনি যখন পেরেছেন আমরাও পারবো।’ সবশেষে বারসিক’কে তাদের উদ্যোগের পাশে থেকে সহায়তা করার কথা জানান।

happy wheels 2

Comments