প্রীতি আবার স্কুলে যেতে পারছে

মানিকগঞ্জ থেকে মাহফুজা আখতার
শিশুকাল থেকে মানুষ স্বপ্ন দেখতে দেখতে  বড় হতে থাকে। সেই স্বপ্ন  পূরণ করার দায়িত্ব মা  বাবার।  হঠাৎ দূর্ঘটনা এসে মানুষের স্বপ্ন ভেঙে যায়। অনেকসময় দেখা যায়, সমাজের লোকজন একত্রিত হয়ে এগিয়ে এসে সেই স্বপ্ন পূরণ করতে  চেষ্টা করেন। এরকমই একটি ঘটনা পরিলক্ষিত হয়েছে মানিকগঞ্জে। কৈতরা নতুন পাড়া কৃষক কৃষাণী সংগঠনের সদস্যরা স্কুলে অকালে ঝরে পড়া শিক্ষার্থী প্রীতিকে স্কুলমূখী করার উদ্যোগ নেন। প্রীতি একজন ১২ বছরের বালিকা।
প্রীতির মা আফরোজা বেগম এবং পিতা  আনোয়ার  হোসেন। তিন বোনসহ পাঁচ সদস্য নিয়ে মোটামুটি ভালোই কেটেছিল প্রীতিদের সংসার। তবে ২০১৩ সালে হঠাৎ করে প্রীতির পিতা নিখোঁজ হন। পিতা নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে প্রীতিদের সংসারে অভাব-অনটন দেখা দেয়। প্রীতির বড় বোন  নিপা (১৪) নবম শ্রেণীতে পড়ে। ছোট বোনের বয়স মাত্র ৩ বছর। প্রীতির মা তাঁর দুই মেয়েকে বাবা-মায়ের কাছে  রেখে প্রীতিকে নিয়ে শুরু করে বেঁচে থাকার লড়াইয়ে! প্রীতিকে নিয়ে তিনি মানিকগঞ্জ শহরে বাসায় ঝিয়ের কাজ করেন। প্রীতিও মায়ের সাথে যোগ দেয়। ফলশ্রুতিতে প্রীতির লেখাপড়া  বন্ধ হয়ে যায় ।

00
কৈতরা নতুন পাড়া  কৃষক কৃষাণী সংগঠনের সদস্যরা এ বিষয়টি জানতে পেরে প্রীতিকে স্কুলমূখী করার উদ্যোগ নেন। সংগঠনের সদস্যরা কৈতরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগাযোগ করে প্রীতিকে ৪র্থ শ্রেণীতে ভর্তি করান। প্রীতিকে আবার লেখাপড়ায় ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে নানাজন নানাভাবে সাহায্য সহযোগিতা করেন। কেউ বই দিয়ে, কেউবা স্কুলে ড্রেস দিয়ে, খাতা-কলম দিয়ে এবং স্কুলে ব্যাগ দিয়ে প্রীতি পড়ালেখায় আগ্রহী করে তোলার চেষ্টা করেন। অন্যদিকে কৈতরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক  সুনীল চন্দ্র মন্ডল প্রীতিকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেন। প্রীতির পড়াশোনার খোঁজ খবর নেন, স্কুলে উপবৃত্তির পাইয়ে দিতে সহযোগিতা করেন।
আবার স্কুলে যেতে পারায় প্রীতি যারপনাই খুশি। এই প্রসঙ্গে মনের অনুভুতি প্রকাশ করতে গিয়ে প্রীতি বলে, “আমার পড়তে ইচ্ছে করত। কিন্তু বাবাকে হারানোর পর আমি আর স্কুলে যেতে পারিনি। এখন আবার স্কুলে যেতে পারায় আমার খুব ভালো লাগছে।”  সে আরও বলে, “আমি স্কুলে সবার সাথে মিশতে পারি, খেলতে পারি, পড়তে পারি। আমি প্রতিদিন স্কুলে যাই। আমি ভালোভাবে লেখা পড়া করব। আমি আর লেখাপড়া বন্ধ করব না। বড় হয়ে চাকরি করবো।” এই প্রসঙ্গে  প্রীতির মা আফরোজা বেগম বলেন, “আমার মেয়েকে আজ স্কুলে দিতে পারায় আমার খুব ভালো লাগছে। আমার মেয়েকে যেভাবে সবাই সহযোগিতা করছেন তা  আমার একার পক্ষে করা কোনভাবেই সম্ভব হত না।”

প্রীতির মত আরও অনেক শিশু দারিদ্রতা এবং সঠিক দিকনির্দেশনার অভাবে অল্প বয়সে স্কুল থেকে ঝরে পড়ছে। এসব শিশুদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের সহযোগিতা করা আমাদের সবার কর্তব্য। কৈতরা নতুন পাড়া কৃষক সংগঠনের সদস্যরা সামান্য সহযোগিতা দিয়ে প্রীতিকে আবার স্কুলমূখী করার মধ্য দিয়ে সবাইকে মনে করিয়ে দিয়েছেন যে সামান্য সহযোগিতা পেলে অনেক মেধাবী শিশু পড়ার সুযোগ পেতে পারে।

happy wheels 2