করোনার প্রভাব: প্রাকৃতিক খাদ্যের ওপর খাসিদের নির্ভরতা

নিরালা পুঞ্জি, শ্রীমঙ্গল থেকে সিলভানুস লামিন

নিরালা পুঞ্জি। মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলায় অবস্থিত। গত ৪ এপ্রিল থেকে এই গ্রামটি সম্পূর্ণ্ লকডাউন। করোনার আত্ঙ্ক এই আদিবাসীদের প্রত্যেকের মধ্যে রয়েছে। লকডাউনের কারণে বাইরে থেকে যেমন কেউ এই গ্রামে ঢুকতে পারছেন না ঠিক তেমনি গ্রাম থেকে কেউ বাইরে যেতে পারে না। তবে কেউ অসুস্থ হলে বিশেষ ব্যবস্থায় তাদের শ্রীমঙ্গলে নেওয়া হয়। শ্রীমঙ্গল থেকে করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পরে থেকে গ্রামে সবাই আতংকে রয়েছে।

যেহেতু গ্রামে বাইরের কেউ প্রবেশ করতে পারছেন না তাই খাসিদের খাদ্য সঙ্কটে রয়েছে, বিশেষ করে প্রোটিন জাতীয় খাবার। গত প্রায় একমাস ধরেই মাছ, ডিম মাংসের যোগান খুবই কম। তাই খাসিরা তাদের লোকায়ত জ্ঞান ব্যবহার করে পাহাড়ে নানান রকম প্রোটিন সমৃদ্ধ প্রাকৃতিক খাদ্য সন্ধান করেছেন। কেউ বাঁশের কোড়ল, কেউ মাশরুম আবার কেউ ছড়া, নালাতে মাছ শিকার করছেন। প্রাকৃতিক খাদ্য সম্ভার সীমিত হওয়ার কারণে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম প্রাকৃতিক খাদ্য তারা সন্ধান করতে পারছেন। তাই দিনকে দিন তারা নানান অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে দিন অতিবাহিত করছেন।

অনেকের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা এমন মহা সঙ্কট কোনদিনও দেখেননি বলে জানান। ভারত লামিন বলেন, “আমার জীবনে আমি এমন সঙ্কট আর কখনো দেখিনি। খুব চিন্তায় আছি কীভাবে আগামী দিনগুলো কাটাবো। চাল, ডাল, তেল, চিনি অন্যান্য খাদ্য সামগ্রীর মজুদ ফুরিয়ে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে আমরা আসলেই মহা বিপদের সন্মুখীন হবো”। একই ধরনের আশংকার কথা জানান শিলা পতাম, থার্টি পামথেট, ছেদ্রক সুরং, হাসি লামিনসহ অনেকে।

অন্যদিকে পাহাড়ে অতিরিক্ত সম্পদ সংগ্রহের কারণে সেখানেও বিরূপ প্রভাব দেখা দিয়েছে। পাহাড়ের ছড়া, ঝরণা ও নালাগুলোতে এখন খুব কম মাছ দেখা দিচ্ছে। বাঁশের কোড়ল, কলার থোড়, মাশরুম, পাহাড়ি আলু কম পাওয়া যাচ্ছে। এলাকায় এখন প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। এই সময়ে পাহাড়ি আলু থেকে শুরু করে মাশরুম, বাঁশের কোড়ল বংশবিস্তারের সময়। কিন্তু অতিরিক্ত সংগ্রহের কারণে এসব প্রাকৃতিক খাদ্যের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও বিস্তার হ্রাস পাচ্ছে। অনেকে আশংকা প্রকাশ করেছেন যে, এভাবে চলতে থাকলে এসব প্রাকতিক খাদ্যের মজুদ যেমন কমে যাবে ঠিক তেমনি প্রকৃতি থেকেও বিলুপ্ত হতে পারে।

করোনার কারণে সরকার ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যেখানে সবাইকে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার বেশি করে খাওয়ার পরামর্র্শ দিয়েছেন সেখানের খাসিরা কম যোগানের কারণে এসব খাদ্য গ্রহণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বারসিক এর প্রতিনিধি হিসেবে আমি অনেককেই পরামর্শ দিয়েছি সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে শহর থেকে প্রোটিন জাতীয় খাদ্য সংগ্রহ করার জন্য। আশার কথা হচ্ছে, আগামী ৪ মে থেকে গ্রামের লকডাউন কিছুটা হলেও শিথিল করার চিন্তাভাবনা করেছেন গ্রামের মাতব্বরগণ। যাতে করে খাসিরা নিজেদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার সংগ্রহ করতে পারেন।

খাসিরা প্রতিদিনই আশা করছেন দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। তারা আগের মতো তাদের সব ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবেন। আমরা আশা করি খুব শিগগিরই দেশের করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হবে। মানুষ আগের মতো করে তাদের স্বাভাবিক জীবন ও জীবিকা পরিচালনা করতে পারবেন।

happy wheels 2

Comments