কৃষি প্রণোদনা প্রাপ্তিতে কৃষকদের সহায়তা করে মানিকগঞ্জের কৃষক সংগঠনগুলো

হরিরামপুর থেকে মুকতার হোসেন

বারসিক’র উদ্যোগে মানিকগঞ্জ জেলা কৃষি উন্নয়ন কমিটি ও কৃষক গবেষকদের নিয়ে সম্প্রতি একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। উক্ত সভায় সভাপতিত্ব করেন কমিটির সভাপতি করম আলী মাষ্টার। সভায় মানিকগঞ্জ জেলার ৪টি উপজেলা হরিরামপুর, ঘিওর, সিঙ্গাইর ও মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা থেকে জেলা কৃষি উন্নয়ন কমিটির প্রতিনিধি ও সদস্য ও স্থানীয় জনসংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।


সভায় স্বাগত বক্তব্য সভাপতি করম আলী মাষ্টার উপস্থিত সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ‘চলমান করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলা করে কৃষকরা তাদের খাদ্য উৎপাদন কার্যক্রম চলমান রেখেছেন। করেনাকালীন সময়ে সরাসরি দেখা সাক্ষাত না হলেও আমরা অনলাইনের কমিটির সদস্য ও বারসিক’র সাথে যোগাযোগ চলমান রেখেছি। কৃষকরা যাতে তাদের শস্য উৎপাদন, বিপনন, করোনাকালীন সময়ে সরকারি কৃষি প্রণদনা পেতে পারে সে বিষয়ে সবাইকে অবগত করার চেষ্টা করি।’


লেছড়াগঞ্জ (পাটগ্রামচর) চর উন্নয়ন কৃষক সংগঠনের সভাপতি হাজেরা বেগম বলেন, ‘করোনা ও বন্যা বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করে আমরা কৃষি কাজকে চলমান রেখেছি। করোনাকালীন সময়ে মানুষকে সচেতন করার জন্য লিফলেট, ব্যানার দিয়েছি সাবান ও দিয়ে হাতমুখ ধোয়া, মাস্ক ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছি। বন্যার পানি যখন আস্তে আস্তে কমতে থাকে ঠিক সে সময়ে বীজ বাড়ি থেকে লাউ, চালকুমড়া, মিষ্টিকুমড়া বীজ দিয়েছি। এলাকার অনেক কৃষক আগাম সবজি পাওয়ার জন্য মাটির পাত্রে, বাঁশের ঝাঁকায়, বালটিতে বীজ দিয়ে গাছ বড় করে বন্যার পানি নামার সাথে সাথে মাটিতে দিয়ে লাউ, শিম চাষ করেছে। এ ছাড়াও লালশাক, মুলা, ডাটা দ্রুত ফলনশীল সবজি চাষ করে নিজেদের খাদ্য চাহিদা পূূরণ করছেন এবং বাজারে বেশি দামে করে লাভবান হচ্ছেন।’


নয়াবাড়ি কৃষক-কৃষাণী সংগঠনের সভাপতি ইমান আলী বলেন, ‘আমরা সিঙ্গাইর উপজেলায় জৈব সবজি বাজার তৈরি করেছি। আমাদের এলাকার কৃষকদের উৎপাদিত সবজি এখন সরাসরি ঢাকায় বিক্রি হয়। এতে একদিকে মানুষ নিরাপদ খাদ্য পাচ্ছে অপরদিকে কৃষকরা নায্য মূল্যে সবজি বিক্রি করতে পারছেন। এছাড়া করোনাকালীন সময়ে সরকারি কৃষি প্রণোদনা প্রাপ্তিতে কৃষকদের সহায়তা করি।’


আলোচনায় কৃষক পর্যায়ে গবেষকদের মধ্যে মাসুদ বিশ্বাস ও সহিদ বিশ্বাস তাদের কৃষি বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম তুলে ধরেন। তাঁরা দুর্যোগ মোকাবেলায় কাটিং পদ্ধতিতে মাচায় পটল চাষ, অল্প সময়ে আদা চাষ, পেঁয়াজ উৎপাদন, জৈব বালাইনাশকের ব্যবহার, বেগুন, টমেটো, ফুলকপি, মরিচ, বাঁশের কঞ্চি নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম চলমান রেখেছেন। কৃষক পর্যায়ের উদ্যোগগুলো ইতিমধ্যে মাছরাঙা টেলিভিশন প্রচারিত হয়েছে। আলোচনায় আরো আরও অংশগ্রহণ করেন কৃষক পর্যায়ে গবেষক সেন্টু মিয়া, মনোয়ার হোসেন, সেলিনা বেগম, রোকেয়া বেগম ও নান্নু প্রামাণিক প্রমুখ।


মানিকগঞ্জ কৃষক গবেষকদের বার্ষিক সভায় বারসিক আঞ্চলিক সমন্বয়কারী বিমল রায় কৃষকদের উদ্যোগুলোকে তিনি প্রশংসা করে বলেন, ‘কৃষক ও কৃষি অফিস, কৃষিতে সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন চলমান রেখেছেন, যা মানিকগঞ্জের কৃষিকে সমৃদ্ধ করতে সহায়তা করবে। বারসিক হরিরামপুর চরাঞ্চলে মানুষের জীবন-জীবিকায়নের ডকুমেন্টশন তথা মানিকগঞ্জ অঞ্চলের কৃষক-নেতৃত্বে কৃষি: অর্জন, অভিজ্ঞা ও শিখনগুলোকে বিভিন্ন প্রকাশনায় তুলে ধরেছে, যা থেকে অন্যান্য এলাকার কৃষকরা তথ্য উপাত্ত নিয়ে উপকৃত হতে পারবেন।


কৃষি কমিটির বার্ষিক সমন্বয় সভা শেষে কমিটির সদস্যরা স্ব স্ব এলাকার কর্ম পরিকল্পনা তৈরি করেন। পরিকল্পনায় যে বিষয়গুলো উঠে আসে।

happy wheels 2

Comments