পুষ্টি চাহিদা পূরণে ভূমিকা রাখবে ‘শতবাড়ি’

হরিরামপুর থেকে মুকতার হোসেন

হরিরামপুর চরাঞ্চলে লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নে হরিহরদিয়া গ্রামে বাড়ি সানজিদা বেগম। স্বামী স্ত্রী দু’জন সারদিন কৃষিকাজ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করেন। তারপরও ক্লান্ত ও পরিশ্রন্ত দেখা যায়নি তাঁকে কখনও। সবসময় হাসি মুখেই কৃষি কাজ আপন করে নিয়েছেন। তাঁর বসতবাড়ির আঙ্গিনাসহ প্রতিটি জায়গা যেন উপযুক্ত ব্যবহার করেছেন। বাড়ির আশেপাশে, উঠানে, আলানে পালানে বৈচিত্র্যময় ফসল চাষে ভরপুর করে রেখেছেন। যার পিছনে অবদান রেখেছেন সানজিদা বেগম। মৌসুমভিত্তিক সবজি চাষ, চারা উৎপাদন, বীজ সংরক্ষণসহ যাবতীয় কৃষি কাজে রয়েছে তার হাতের ছোঁয়া। বাড়িটিকে একটি কৃষি সমৃদ্ধ বাড়ি হিসেবে গ্রামে পরিচিতি লাভ করেছেন।

এই বিষয়ে সানজিদা বেগম বলেন, ‘আমার বাড়িতে প্রায় সব ধরনের ফলমূল গাছ আর মৌসুমভিত্তিক সবজি উৎপাদন করে থাকি। বাজার থেকে কোন ধরনের খাদ্য কিনতে হয় না। চরে প্রতিবছর বন্যা হয়। জমিতে পলি পড়ে মাটি উর্বর থাকে। তাই সব ফসলই ভালো হয়। গোবর সার ও জৈব বালাই নাশক ব্যবহার করি। ফসল উৎপানে আমাদের একদিকে খরচ কম হয় অপরদিকে পুষ্টিগুণ বেশি থাকে বাজারে চরের ফসলের দাম বেশি পাই। তাই পুষ্টি চাহিদা পূরণে ‘শতবাড়ি’ অনেক ভুমিকা রাখবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার বাড়িতে ৩৩ শতক জমিতে মাচায় পটল চাষ করেছি। বন্যার আমাদের জমিতে পানি উঠে নাই। ক্ষতিগ্রস্ত হয় নাই। সপ্তাহে ২ মণ করে পটল বাজারে বিক্রি করতে পারি। প্রতি মণ পটলের মুল্য ১৮০০-২০০০ টাকা করে বিক্রি করি। আমাদের কাছ থেকে পটলের পট নিয়ে কৃষকরা নিজ গ্রাম আশেপাশের গঙ্গাধরদি, বালিয়াচর, নতুনহাট, নটাখোলা, মানিকগঞ্জ বানিয়াজুরি, ঘিওর, বাঠইমুড়ি ও ঢাকা মোহাম্মদপুর পর্যন্ত মাচায় পটল চাষ করেছে।

বৈশি^ক মহামারী করোনায় যখন মানুষ আতংকিত ঠিক সময়ে বারসিক হরিরামপুর চরাঞ্চলে কৃষকদের উদ্যোগে শতবাড়ি তৈরির কাজ শুরু করেন। তারই ধারাবাহিকতায় হরিরামপুর চরাঞ্চলে লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নে হরিহরদিয়া গ্রামে শতবাড়ির তালিকভুক্ত কৃষকদের নিয়ে আলোচনা সভা আয়োজন করা হয়। আলোচনায় বারসিক মানিকগঞ্জ আঞ্চলিক সমন্বয়কারী বিমল রায় কারোনার ২য় ধাপ থেকে নিজেদের সুরক্ষায় জন্য সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি শতবাড়ির লক্ষ্য উদ্দেশ্য তুলে ধরে বলেন, ‘মানিকগঞ্জ জেলায় বারসিক’র কর্মএলাকা মধ্যে থেকে ১০০ শতবাড়ির কৃষক নির্বাচন করা হয়েছে। তার মধ্যে হরিরামপুর চরাঞ্চলে ২০ জন কৃষক শতবাড়ির তালিকায় আওতায় ভুক্ত করা হয়েছে।’

বিমল রায় জানান, ‘শতবাড়ি’ হবে গ্রামের মধ্যে একটি কৃষি প্রাণবৈচিত্র্যসমৃদ্ধ বাড়ি। যে বাড়ি গ্রামের ফোকাস স্থানে হতে পারে পাড়ার মাঝখানে বা রাস্তার ধারে থাকতে পারে। যেখানে সকল প্রকার সবজি, ফলমূল গাছ, স্থানীয় জাতের হাঁস-মুরগি, গরু ছাগল, খাদ্য উদ্ভিদ নিরাপদ খাবার উৎপাদন করবেন এবং খাবেন। এই খাদ্য মানুষের ভিটামিন পুষ্টি চাহিদা পূরণে ভূমিকা রাখবে। এছাড়া এই শতবাড়ি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কৃষকদের সক্ষমতা বৃদ্ধি, নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন, সংরক্ষণ, কৃষি উপকরণসহ যাবতীয় প্রয়োজন অনুভূত হলে বারসিক সেগুলো সহায়তা হিসেবে প্রদান করবে।

ইতিমধ্যে হরিরামপুর চরাঞ্চলে শতবাড়ির তালিকাভুক্ত কৃষকরা তাদের বাড়িটিকে গ্রামের মধ্যে একটি মডেল বাড়ি হিসেবে গড়ে তুলতে কার্যক্রম শুরু করেছেন। এই প্রসঙ্গে হরিহরদিয়া গ্রামের শতবাড়ির তালিকাভুক্ত কৃষক লুৎফর রহমান বলেন, ‘আমার বাড়িতে বছরব্যাপী বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি চাষ করি। আমি বাড়ির পাশে উঁচু ভিটায় মাচায় পটল চাষ করে সারাবছর তরকারি চাহিদা পূরণ করি। গ্রামের অনেক মানুষ আমার কাছে আসে কৃষিকাজের পরামর্শের জন্য। আমার বাড়িতে আম, কাঁঠাল, পিয়ারা, কদবেল, জামবুরা, পানি ফল, পটল বেগুন, মরিচ, টমোটো, আলু, ধান, গম, পায়রা, গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি রয়েছে। যা বাজার থেকে টাকা খরচ করে কিছু কিনতে হয় না। আমি চাই, গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে যেন কোন জায়গা ফাকা না রাখা হয়। সকল জায়গা সুষ্ঠু ব্যবহার করা হয়।

happy wheels 2

Comments