করোনাকালীন সবজি বাগানের আনন্দে একজন দূর্গা রাণী মন্ডল

সিংগাইর, মানিকগঞ্জ থেকে রিনা আক্তার
শখ মানুষের চিত্তবিনোদনের অন্যতম মাধ্যম। এছাড়াও শখ হচ্ছে একজন মানুষের প্রিয় কাজ যা তিনি তার অবসর সময়ে করতে পছন্দ করেন। শখের কাজগুলো অনেকের কাছেই পেশা নয়, এটি অর্থ বয়ে আনে না বরং অর্থ সাশ্রয় করে, এটি মানুষকে আনন্দ দেয় এবং একঘেয়ামি দূর করে বলে আমরা মনে করি। বিভিন্নজনের শখ বিভিন্ন রকম হতে পারে যেমন-বাগান করা, বই পড়া, ছবি আঁকা, গান করা প্রভৃতি। এমনই শখের বসে বাড়ির আঙ্গিনায় ছোট পরিসরে সবজি বাগান করেছে দূর্গা রানী মন্ডল।


দূর্গা রানী মন্ডল(১৯) মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর উপজেলার আঙ্গারিয়া গ্রামের বাসিন্দা। সে একজন শিক্ষার্থী, সিংগাইর সরকারি ডিগ্রী কলেজ ও বিশ^বিদ্যালয় থেকে এ বছর এইচএসসি পাশ করেছে। সেই সাথে সে অঙ্কুর কিশোরী ক্লাবের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছে। তার পরিবারের সদস্য ৫ জন। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে দূর্গা রানী সবার ছোট। তার বাবার নাম কালীপদ মন্ডল (৫৫)। তিনি পেশায় একজন কৃষক, তার মায়ের নাম দিপালী রানী মন্ডল (৪৫)। তিনি একজন গৃহিনী।


দূর্গা রানীর ছোট বেলা থেকেই বিভিন্ন গাছ লাগানের ঝোঁক ছিল। করোনাকালীন সময়ে তার কলেজ বন্ধ থাকায় সে সারাদিন বাড়িতে থাকায় তার মাথায় বাগান করার ইচ্ছা জাগে। তখন সে নিজে তার উঠানের একপাশ মাটি দিয়ে কিছুটা উচু করে। সেই জায়গায় সে বিভিন্ন সবজির চারা রোপণ করে যেমন: বেগুন, পুঁইশাক, মরিচ, পাটশাক, লালশাক, পেঁপে, লাউ, করলা। এছাড়াও সে পুরোনো মাটির হাঁড়ি, প্লাস্টিকের বালতি, বাশের ঝুঁড়ির মধ্যে মাটি আর চুলার অবশিষ্ট ছাই ও শুকনো গোবর দিয়ে মিশ্র বানিয়ে সেখানে আলু, পিঁয়াজ, রসুন মিষ্টি কুঁমড়া, মরিচ এর বীজ রোপণ করে। সে তার সবজি বাগানের আগাছা পরিষ্কার করা থেকে সব রক্ষণাবেক্ষণ নিজেই করে।

এই প্রসঙ্গে দূর্গা রানী মন্ডল বলে, ‘আগে নিজের পড়াশুনা ও টিউশনের জন্য তেমন একটা বেশি সময় পেতাম না। কিন্তু করোনার কারণে সবকিছু বন্ধ থাকায় আমি আমার শখের দিকে মন দিতে পেরেছি। আমি বাগানে কোন রাসায়নিক সার প্রয়োগ করিনা। আমার নিজের বানানো সারই এই সবজিতে দিই। বাড়ির রান্নার জন্য আনা সবজির উৎকৃষ্ট অংশ, গোবর দিয়ে বানানো মিশ্রটায় বাগানে দিই।। এতে করে বাগান থেকে যে সবজিটি আমি পাই তা একদম বিশুদ্ধ ও টাটকা।’ তার প্রতিবেশীরাও বিভিন্ন সময় তার কাছ থেকে বিভিন্ন শাকসবজি নেন।


দূর্গা রানী বলে, ‘বাগান করা আমার শখ, তবে বাগান করাটা শ্রেফ শখেই আটকে নেই। পরিবারের সবজির জোগানও যখন বাগান থেকেই হয়, তখন বাগান করার প্রতি আগ্রহ আরো বেড়ে যায় আমার। বাগান করে পরিবারের পুষ্টি চাহিদাও কিছুটা পূরণ হয়। এছাড়া বাগানে সময় কাটানোর সুযোগও তৈরি হয়।’ বাগানে নিয়মিত কাজ করা শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ভালো বলে সে মনে করে। কারণ বাগানে গাছ লাগানের ফলে অক্সিজেনসমৃদ্ধ বিশুদ্ধ বাতাস পাওয়া যায়। সেখানে হাটলে শরীরের জীবনীশক্তি উজ্জীবিত হয়। বুক ভরে বিশুদ্ধ ঘ্রাণ নিলে মনটাও চনমনে হয়ে উঠবে। বাগানে নিয়মিত কাজ করলে শারীরিক পরিশ্রম হয় বিধায় এটি একটি চমৎকার ব্যায়াম। এছাড়া গাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত থাকলে মনের বিষন্নতাও দূর হয়।


দূর্গা রানী মন্ডল জানায়, তাকে দেখে সংগঠনের অনেকেই অবসরে এবং পতিত জায়গায় বাগান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কেউ কেউ শুরুও করে দিয়েছে। এখন সে শুধু একা নয়; তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও সবজি বাগানে সময় সুযোগে কাজ করেন।

happy wheels 2

Comments