উপকূলে নতুন জাতের বেতোশাক

সাতক্ষীরার শ্যামনগর থেকে গাজী আল ইমরান

উপকূল অঞ্চলে আগেকার দিনে হরেক রকমের অচাষকৃত সবজির দেখা মিললেও অতিরিক্ত লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় সেই ঐতিহ্য হারাতে বসেছে উপকূল। ব্রক্ষ্মি, কলমি, দস্তা কচু, হেলাঞ্চ, সাঞ্চি, বেতোশাক, ডুমুর, বউনুটি, শাপলা, ঘ্যাটকল, কাটানটিশাক ,কচু, তেলাকুচা পাতা, কলমি, হেলেঞ্চা,শাপলা-শালুক সহ বিভিন্ন অচাষকৃত সবজি হার মশা পাওয়া গেলেও তা আজ খুব কম চোখে মেলে।

এর মধ্যে বেতোশাক শীতকালীন বিভিন্ন সবজি ক্ষেতের মধ্যে জন্মে থাকে। আমাদের বাসভূমির আশেপাশে জন্মায় বলে এই বেতো শাকের আরেক নাম বাস্তক। এর গাছ হয় ছোট, গাছের পাতা অনেকটা তুলসী পাতার মতো, কিন্তু পাতাগুলোর ধার বেশ ঢেউ খেলানো। গতকাল শ্যামনগর উপজেলার ধুমঘাট এলাকায় বঙ্গবন্ধু কৃষি পদক প্রাপ্ত কৃষাণী অল্পনা রানী মিস্ত্রি’র সবজি ক্ষেতে দেখা মিলেছে নতুন জাতের বেতোশাক।

সাধারণ এলাকার বেতো শাক ১ উচ্চতা হলেও এই বেতো শাকের উচ্চতা প্রায় ৭ ফুট দেখা যায়। পাতাগুলো সাধারণ বেতোশাকের চেয়ে আকারে বড় এবং কান্ডগুলো কিছুটা হালকা লালচে। একটি গাছের সবজি ৫ থেকে ৬ জন সদস্যের পরিবারে এক বেলার সবজি হিসেবে রান্না করা যাবে বলে মনে হয়। অল্পনা রানী মিস্ত্রি এই শাক সম্পর্কে বলেন, ‘আমার বাড়িতে প্রায় ২৫ জাতের অচাষকৃত সবজির প্লট রয়েছে, যা একেবারেই হারিয়ে যেতে বসেছে। আমি এগুলো টিকিয়ে রাখার জন্য বাড়িতে প্লট আকারে চাষ করেছি।‘ তিনি বলেন, বিগত কয়েকদিন আগে আমার এক নিকট আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়ে এই বড় জাতের বেতোশাক দেখতে পেয়ে নিয়ে আসি এবং সেই গাছ থেকে বীজ সংরক্ষণ করি। তবে সেসময় গাছটি এতো বড় ছিলোনা।’ তিনি আরও বলেন, ‘সেই সংরক্ষিত বীজ আমি বুনলে পরে যে গাছ হয়েছে প্রায় ৭ ফুট লম্বা যা একটি শাক একটি পরিবারের এক বেলা সবজির চাহিদা পূরণে সক্ষম হবে বলে মনে করি। আমি চেষ্টা করছি এই শাক থেকে বীজ রেখে কিভাবে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা যায়।’

বেতো শাকের গুনাগুণ সম্পর্কে অল্পনা রানী মিস্ত্রি’র স্বামী কৃষক গঙ্গারাম মিস্ত্রি বলেন, ‘বেতো শাক বায়ু, পিত্ত ও কফনাশক এবং অগ্নিবল বৃদ্ধিকারক। এছাড়া এটি ক্ষারধর্মী। এর মধ্যে কৃমিনাশক শক্তি রয়েছে। আধ পোয়া ঘোলের সংগে এক চামচ বেতো শাকের রস দিয়ে খেলে হেঁচকি বন্ধ হয়ে যাবে। কারো আমাশয় হলে বেতো শাককে প্রথমে শুকিয়ে গুড়ো করে নিয়ে তার সঙ্গে অল্প দই মিশিয়ে খেলে ভালো হয়ে যায়।‘ তিনি আরও বলেন, ‘বেতো শাক মুখে রুচি আনে। তাছাড়া যাঁর অরুচিতে ভুগছেন তাঁরা শাক হিসেবে এটি যদি খাবার প্রথমেই খান তাহলে রুচি আসবে। একনাগাড়ে কিছুদিন বেতো শাক খেলে শুকনো কাশি দূর হবে। ছোট কৃমির সমস্যা দূর করতে হলে রোজ সকালে তাহালে ২ বা ৩ চা চামচ শাকের রস অল্প গরম করে খাইলে কৃমি মুক্ত হওয়া যায়।’ বেতোশাকের আরো গুনাগুণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘বেতোশাক যদি রোজ দুপুরে খান তাহালে মুত্রগ্রন্থি ও লিভারের ক্রিয়া স্বাভাবিক ও শক্তিশালী হবে।’

happy wheels 2

Comments