বিপুলের বেকারত্ব জয়

সাতক্ষীরা শ্যামনগর থেকে মননজয় মন্ডল

বেকারত্ব একটি অভিশাপ। ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে সর্বত্র এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। বেকারত্বের ভয়াল থাবায় দুর্বল হয়ে পড়ে রাষ্ট্রকাঠামো। বেকারত্বের কারণে কোনো কাজ না পেয়ে মানুষ নানা ধরনের অবৈধ কিংবা অসামাজিক কাজে লিপ্ত হয়। সমাজে খুন-গুম, রাহাজানি, চুরি-ডাকাতি, ছিনতাইসহ নানা রকমের অনাচার অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পায়। স্থবির হয়ে যায় অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা। সরকারি ও বেসরকারিভাবে সমাজের বেকারত্ব কমানোর লক্ষ্যে নানা ধরনের উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালনা হতে দেখা গেলেও সমাজে বেকারত্বের সংখ্যা বাড়ছে দিনকে দিন। বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে অনেকেই নিজের উদ্যোগে শুরু করেছেন ছোট ছোট কাজ। তেমনি একজন আগ্রহী যুবক বিপুল গাইন (৩০)।

উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করার আগেই ঘাড়ে চাপে সংসারের মহান দায়িত্ব। আগে তো সমাজে টিকে থাকা, দুবেলা খাবার জোড়ার, তারপর না হয় অন্য চিন্তা। সেজন্য পড়ালেখার নেশা মাথা থেকে ছেড়ে ফেলে অসুস্থ বাবা মায়ের পাশে থেকে আয়ের পথ খুজতে থাকেন তিনি। নানা ধরনের কাজের সাথেও যুক্ত হন। বিশেষ করে দিনমজুরি করে চলতে থাকে দিনগুলো। বছরের কিছুটা সময় এলাকার বাইরে গিয়েও শ্রম বিক্রির কাজ করে কিছুটা সচল রাখেন সংসারের চাকা। সম্পদ বলতে মাত্র একবিঘা লবণ পানির জমিতে তেমন কোন আয় হয় না বলেই সব রকমের কাজ করতে হয়। এভাবেই চলতে থাকে তিন জনের জীবিকা।

কি করা যায়, কিভাবে চলবে আগামীর দিনগুলো এ বিষয়ে দীর্ঘ আলাপ হয় বারসিক কর্মকর্তা মননজয় মন্ডলের সাথে। আলাপ আলোচনা শেষে স্থানীয় কলবাড়ী বাজারে ভ্রাম্যমান সবজির দোকান দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সেখান থেকে শুরু হয় বিপুলের নতুনভাবে পথচলা। প্রতিদিন বাড়ি থেকে ৮ কিলোমিটার দুরে নওয়াবেকী সবজির আড়ৎ থেকে সবজি কিনে এনে কলবাড়ি বাজারে বিক্রি করেন। কলবাড়ি বাজারের মাছের সেট সংলগ্ন রাস্তার পাশে প্রতিদিন ভ্রাম্যমান একটি দোকান দেন। রোদ বৃষ্টি ঝড় উপেক্ষা করেই মৌসুমভিত্তিক নানাধরনের সবজি পসরা সাজিয়ে বসেন। বাড়ি থেকে নিয়ে আসা দুপুরের খাবার খেতে হয় দোকানে বসেই। মহামারী করোনার কারণে প্রায় ৬ মাস ব্যবসা খারাপের পর আবার ভালোই চলে বেচা কেনা। কোনদিন আটশত আবার কোনদিন সাতশত এভাবেই লাভ হতে থাকে প্রতিদিন। আগের চেয়ে ভালোই আছেন তিনি, এখন আর অন্যের বাড়িতে কাজ করা লাগে না। নিজের ইচ্ছামত স্বাধীন পেশায় আর্থিক উন্নতির পথে হাটছেন বিপুল। তিন বছর ধরেই একাধারে কাজ করেই ভালোভাবে বুঝে গেছেন ব্যবসার পলিসি। যাতে প্রতিদিনের মালামাল প্রতিদিন বিক্রয় হয়, সেদিকেই নজর রেখেই বাজারের চাহিদা অনুযায়ী সবজি তোলেন দোকানে।

এ ব্যাপারে বিপুল বলেন, ‘আমার মননজয় কাকুর পরামর্শ মোতাবেক এবং কিছু আর্থিক সহযোগিতা নিয়ে আমি এই কাজে নেমেছি। এখন ভালো আছি। তবে এই মুর্হুতে আমার একটি মটর ভ্যান দরকার। প্রতিদিন অনেক টাকা ভ্যান ভাড়া করে মালামাল পরিবহন করতে হচ্ছে। আমি ধীরে ধীরে একটি স্থায়ী দোকান করতে চাই।’ তার মা সুসমা রানী ও পিতা পবন গাইনকে সাথে নিয়েই সাতক্ষীরার উপকূলীয় শ্যামনগরের আটুলিয়া ইউনিয়নের মাগুরাকুনি গ্রামে বাস তার। নিজেকে ভালোভাবেই গুছিয়ে নেওয়ার আগেই মা বাবার অনুরোধে এক বছর আগেই বিয়েটাও সেরে ফেলেন তিনি।

কোন কাজই যে ছোট নয়, সেটাই প্রমাণিত হয় বিপুলের মত যুবদের ছোট ছোট উদ্যোগ দেখে। জীবন আমার, জীবন সাজানোর দায়িত্ব আমার, বেকারত্বকে না বলে এগিয়ে যাই সমাজ ও দেশের কল্যাণে। আর এজন্য বিপুল হতে পারে হাজারো বেকারের অনুপ্রেরণা।

happy wheels 2

Comments