নারীর প্রতি সহিংসতা কেন কমছে না?

মানিকগঞ্জ থেকে রিনা আক্তার, আছিয়া আক্তার ও বিমল চন্দ্র রায়
এতো এতো সভা, আলোচনা, নাটক, মতবিনিময় করেও কেন বন্ধ করা যাচ্ছে না ইভটিজিং? বাবা- মায়ের চাপে, বাবা-মা বøাকমেলিং করে তুমি যদি এখন বিয়ে না করো তবে আমরা বিষ খাবো, আত্মহত্যা করবো ও অন্যান্য ভয় দেখায় তাই নিজেকে বলি দিতে হয়। প্রতিবেশী আত্মীয়স্বজনসহ অনেকে বলে, মেয়ের বয়স হয়ে যাচ্ছে তাকে বিয়ে দিয়ে দাও, এই বযসে বিয়ে দিলে ভালো পাত্র পাওয়া যাবে। অনেক মেয়ে বাল্য বিয়ের শিকার হয়। বাল্য বিয়ের ফিরানোর চেষ্টা করা হয়। মেয়েরা ধর্ষনের শিকার হয়, বিয়েতে যৌতুক দিতে হয়, মেয়েরা ঘওে বাইওে বের হলে ইভটিজিং এর শিকার হয়, তাকেই মেনেই চলতে হচ্ছে। বাবা, মাকে বুঝাতে হবে আমরা বাল্য বিয়ে করবো না। পড়াশুনা করে বড় হয়ে চাকুরী বা আয়মূলক কাজ করে বিবয়ে করবো। বাবা-মা আমাদের ভালো চায়, তারাও অনেক সময় অনেক দিক বিবেচনা করে বিয়ের আযোজন করে। তবে আমাদের সকল প্রতিকূলতাকেই জয় করে এগিয়ে যেতে হবে।


উপরোক্ত বক্তব্যটি গতকাল মানিকগঞ্জ জেলা নারী উন্নয়ন কমিটি ও বারসিক কর্তৃক আয়োজিত অনলইন সভায় অংশগ্রহণকারী একজন কিশোরী শিক্ষার্থীর। অনলাইন সভায় জেলা নারী উন্নয়ন কমিটির সভাপতি, জেলা পরিষদ সদস্য নারীনেত্রী ও উদ্দোক্তা শামিমা আক্তার চায়না এর সভাপতিত্বে প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট নারী নেত্রী, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কাজী সুফিয়া আক্তার। বক্তব্য রাখেন সমাজ সংগঠক অধ্যাপক শাহিন আক্তার, উন্নয়নকর্মী ও সমাজ সংগঠক রাশেদা আক্তার, শিক্ষার্থী সাথী আক্তার, রিমা আক্তার, সুমা সরকার, সাধনা মন্ডল, নিজা আক্তার,উন্নযনকর্মী আছিয়া আক্তার ও রিতু দাস প্রমুখ। করোনাকালে নারীর প্রতি কি ধরনের প্রভাব পড়েছে? এই বিষযে একটি গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন বারসিক কর্মকর্তা জাহাঙ্গির আলম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বারসিক আঞ্চলিক সমন্বযকারী বিমল চন্দ্র রায়।


গভায় কাজী সুফিয়া আক্তার বলেন, ‘নারীদেরকে সাহসী হতে হবে। প্রযুক্তির ব্যবহার করে, টিকটক করে অনেক মেয়ের সর্বনাশ হয়ে যাচ্ছে। বিদেশে পাচার হযে যাচ্ছে। নারীরা সমাজের বিভিন্ন স্তরে নানান নিগ্রহের শিকার হন, সেখান থেকে বের হতে হলে তাকে লড়াই করতে হবে, শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। পত্রিকায় আমরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ঘটনার খবর পাই। অনেক ঘটনার বিচার হয়, অনেক ঘটনার বিচার হয় না। আইন থাকার পরও প্রতিকার পাওয়া যায় না, নিজেকে সচেতন থাকতে হবে যে কোন ধরনের প্রলোভন হতে।’


রাশেদা আক্তার বলেন, ‘নারীদের বিশেষ করে কিশোরীদের সাথে অনেক বিষযে কাজ করতে গিযে দেখা যায় অনেক ধরনের সমস্যার মধ্যে তাদের যেতে হচ্ছে। বিভিন্ন বয়সে ও বিভিণœ প্রান্তিকতায় নারীর নানান বৈষম্য ও নির্যাতন আছে। আমরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন সভা, মতবিনিময় করে চেষ্টা যাচ্ছি কিছু করার। বাল্য ি য়ের অভিশাপ থেকে নিজেকে মুক্ত থাকতে হবে। বাল্যবিয়ে বন্ধে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। সরকারি বিভিন্ন হেল্পলাইন ব্যবহার করে আমরা নিজেরা ও অপরকে বাল্যবিবাহ হতে রক্ষা করতে পারি।’

বিমল রায় বলেন, ‘বারসিক উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান হিসেবে নারী পুরুষের সমতাভিত্তিক, নারীর প্রতি যে কোন বৈষম্য ও নির্যাতনমুক্ত একটি জেন্ডার সমতার সমাজ বিনির্মাণের সংগ্রামে সরকারের সহযোগি হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে।


উল্লেখ, বারসিক ২০২০ সালে সিংগাইর উপজেলায় ৯০ জন বিভিন্ন স্তরের অংশগ্রহণকারীর প্রশ্নমালা ভিত্তিক সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে করোনাকালিন ঘওে ও বাইরে নারীর অবস্থা ও অবস্থান বিষয়ক একটি গবেষণা পরিচালনা করে। প্রশ্নমালার একটি প্রশ্ন ছিল করোনাকালে নারী নির্যাতন, ইভটিজিং, যৌন হয়রানি, বিবাহবিচ্ছেদ, বাল্যি য়ে, ধর্ষণ, যৌতুক, হত্যা, বৃদ্ধি পেয়েছে কি না? গবেষণায় অংশগ্রহণ করে ৭৮% অংশগ্রহণকারী জানান এসব সহিংসতা বলে বৃদ্ধি পেয়েছে।

happy wheels 2

Comments