আসুন আমরা পাখিসহ প্রাণীদের ভালোবাসি, তাদের সুরক্ষা করি

মানিকগঞ্জ থেকে বিমল চন্দ্র রায়
পাখি নিয়ে গান, কবিতা, রূপকথাসহ অনেক মিথ প্রচলন আছে। পাখির বাসা থেকে ডিম নিয়ে আসা, কাকের ডিম চুরি করতে গিয়ে ঠোকর খাওয়া, পাখি শিকার করা, পাখি ধরাসহ আমাদের নানান বৈচিত্র্যময় অভিজ্ঞতা রয়েছে। আমাদের অনেকের অভিজ্ঞতা রয়েছে দলবেঁধে শীতের সকালে বন্দুক নিয়ে পাখি শিকার করা, বক মারতে যাওয়া। এই পাখি শিকার করা কিংবা পাখিসহ অন্যান্য প্রাণী হত্যা করার কারণে আজ পাখিসহ অন্যান্য প্রাণীর সংখ্যা কমে গেছে। অনেক পাখি ও প্রাণী বিলুপ্ত হয়েছে। আমাদের দেশে বুলবুলিসহ অনেক পাখি খুব একটা দেখা যায় না, সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা কমে গেছে!


তবে বর্তমানে পাখিসহ প্রাণীদের সুরক্ষায় বিশ্বের অনেক মানুষই সচেতন হয়েছেন। তাই তো দেখা যায়, বিশ্বব্যাপী প্রাণবৈচিত্র্য সুরক্ষার জন্য নানান দিবস পালিত হচ্ছে প্রতিবছর। এর মধ্যে রয়েছে জীববৈচিত্র্য দিবস, পরিবেশ দিবস ইত্যাদি। এছাড়া পাখিসহ অন্যান্য প্রাণবৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও রক্ষার জন্য বনভূমি, জলাভূমিগুলো সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বাংলাদেশ ২০১২ সালে বন্যপ্রাণি (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন নামে একটি আইন প্রণয়ন করেছে যেখানে স্পষ্ট করে বন্যপ্রাণি, পাখিসহ অন্য প্রাণি হত্যা, বিক্রয়, ক্রয়, মাংস সংরক্ষণ, পরিবহন, খাওয়া, পালন করা আইনগত নিষিদ্ধ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।

পাখির প্রতি মানুষের ভালোবাসা বৃদ্ধি বিষয়ে একটি ঘটনার আপনাদের সামনে তুলে ধরছি। এখন দলবেঁধে পাখি শিকার করতে যুব বা প্রভাবশাশীদের যেতে দেখা যায় না। প্রশাসনিক নানান উদ্যোগ আছে। গত সপ্তাহে দুইজন ব্যক্তির একটি দুধের বাইল্যা হাঁসের বাচ্চা নিয়ে উদ্বেগ ও উৎকন্ঠা দেখেছি। বাইল্যা হাঁসের বাচ্চাটি কাছের কোন গাছের পাখির বাসায় ছিল। কোন কারণে পড়ে গেছে বাড়ির উঠানে, সেটিকে চাল দিয়ে খাওয়ানোর চেষ্টা এবং কাক ও পিপড়া থেকে রক্ষা করে তাকে একটি নিরাপদ আশ্রয়ে রাখার নানান উদ্যোগ গ্রহণ করেন ওই দু’জন ব্যক্তি। তাঁরা আমার সহায়তাও কামনা করে যাতে আমি মানিকগঞ্জে ‘পালক’ নামের একটি সংগঠনকে বিষয়টি অবহিত করি। কারণ সংগঠনটি পাখির জন্য নিরাপদ আবাসস্থল, শিকার ও হত্যা বন্ধ বিষয়ে ২০১৩ থেকে কাজ করছে। আমি পালক’র কয়েকজন সদস্যকে বিষয়টি জানাই। তাদেরকে বাইল্যা হাঁসের বাচ্চাটি উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয়ে রাখার অনুরোধ করি। তবে যেহেতু বাচ্চাটি দুধের তাই তাকে চাল দেওয়া হলেও বাচ্চাটি খায়নি। তার মানে মা বাইল্যা হাঁসটি বাচ্চাকে খাবার খাওয়ায়ে দেয়। এই অবস্থায় বাচ্চা বাইল্যাটিকে সেখান থেকে সরানো উচিত হবে না তা আমরা সবাই উপলদ্ধি করি। এর কিছুক্ষণ পরই মা বাইল্যা হাঁসটি তার বাচ্চাটিকে নিয়ে যায়। তা দেখে ওই দু’জন ব্যক্তি যেন হাফ ছেড়ে বাঁচেন; তাদের আনন্দ দেখে বেশ ভালো লাগলো। একটি শিশু পাখিকে বাঁচানোর জন্য তারা কতটা না আন্তরিক ছিলেন।


আমরা সবাই যদি এভাবে পাখিসহ অন্যান্য প্রাণীদের প্রতি সহমর্মী হই, তাদের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করি তাহলে পৃথিবীতে এখনও অনেক পাখি ও প্রাণীকে রক্ষা করা সম্ভব হবে। প্রতিটি পাখি ও প্রাণীই পরিবেশ ও প্রকৃতির এক একটি উপাদান। এসব উপাদান বিলুপ্ত হলে পৃথিবী তার ভারসাম্য হারাবে। তাই আসুন আমরা পাখিসহ প্রাণীদের ভালোবাসি, তাদের সুরক্ষা দিই।

happy wheels 2

Comments