আমি যতদিন ভালো থাকবো ততদিন কাজ করে যাবো

কলমাকান্দা, নেত্রকোনা থেকে আল্পনা নাফাক
অম্বলা বেওয়ার বয়স প্রায় ৮০ বছর। তিনি একজন প্রবীণ ব্যক্তি। দুই সন্তানের জননী অম্বলা বেওয়া কলমাকান্দা উপজেলার খারনৈ ইউনিয়নের খারনৈ গ্রামে তাঁর বসবাস। তিনি প্রায় ৪০ বছর আগেই স্বামীকে হারিয়েছেন। তাঁর জমি জমা বলতে আছে ২০ শতাংশ জমি। সেখানেই তিনি বাস করেন।


অম্বলা বেওয়া তাঁর বসতবাড়ির আঙ্গিনায় সারাবছর শাক সব্জি চাষ করেন। তিনি এই বয়সেও দক্ষ হাতে বিভিন্ন ধরণের শাকসবজি চাষ করছেন। শাকসব্জি গুলো তিনি নিজেই পরিচর্যা করেন। এই বিষয়ে তিনি বলেন, ‘স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকেই আমি শাকসব্জি চাষ করি ও বাঁশ বেতের কাজ করে সংসার চালিয়েছি। এখন বয়সের ভারে বাঁশ বেতের কাজ ছেড়ে দিয়েছি। শাকসব্জি আমাদের প্রতিদিনের জন্য প্রয়োজন। তাই শাকসব্জি চাষ করছি। বাজারেও শাকসব্জি বিক্রি করি।’


এখন বয়স হয়েছে। তাই তিনি ভারী কোন কাজ করতে পারছেন না। জমি প্রস্তুত, মাচা দেওয়া এইসব এখন তার ছেলে করে দেন। তবে বাড়ির কাজগুলো তিনিই করেন। বাজারে শাকসব্জি বিক্রির কাজটা ছেলেই করেন। সারাবছর নিজের উৎপাদিত শাকসব্জি দিয়েই পরিচারের চাহিদা পূরণ করেন তিনি। তিনি কিছ শাকসব্জি আত্মীয়স্বজন ও পাড়া প্রতিবেশীদের মাঝেও বিতরণ করেন।
অম্বলা বেওয়া মূলত গোবর ও হাঁস, মুরগির বিষ্ঠা দিয়ে জৈব সার তৈরি করে সম্পূর্ণ জৈব পদ্ধতিতে শাকসব্জি চাষ করেন। সব্জি গাছে পোকা ধরলে তিনি ছাই ব্যবহার করেন। বাড়ির আশপাশে বারোমাসি মরিচের গাছ রোপণ করেছেন। সেখান থেকেই তিনি সারাবছর মরিচ সংগ্রহ করে পারিবারিক চাহিদা পূরণ করেন। মায়ের সবজি চাষ সম্পর্কে তাঁর মেয়ে হালিমা বেগম বলেন, ‘মা সারাবছরই বিভিন্ন ধরণের শাকসব্জি চাষ করেন। শাক সব্জি চাষ করাতে একদিকে তার সময়ও ভালো কাটে। সেই সাথে পরিবারের শাকসব্জির চাহিদাও পূরণ হয়। আবার কিছু শাকসব্জি বিক্রি করেও কিছু টাকা আয় হয়।’ অন্যদিকে আম্বলা বেওয়া বলেন, ‘আমি যতদিন ভালো থাকবো ততদিনই এভাবে কাজ করে যেতে চাই। কিন্তু বয়স তো আর কম হলো না। তাই চাইলেও হয়তো এত কাজ আর করতে পারবো না।’


প্রবীণ ব্যক্তিরাই হল পরিবারের আদর্শ। তাদের কাজ ও অভিজ্ঞতা পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের জন্য আর্শীবাদস্বরূপ। তাই আসুন আমরা প্রবীণ ব্যক্তিদে অবহেলা না করে তাদের সাথে সংবেদনশীল আচরণ করি।

happy wheels 2

Comments