বন্যাপ্রবণ এলাকায় কৃষি অভিযোজন

হরিরামপুর থেকে মুকতার হোসেন

চরাঞ্চল ও বন্যাপ্রবণ সংলগ্ন নিচু এলাকায় বসবাসকারী কৃষকরা বন্যা মোকাবিলায় কৃষিতে লোকায়ত জ্ঞান প্রয়োগের মাধ্যমে নানা ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। ফসলের মৌসুম, আগাম চাষাবাদ এবং জীবনকাল সঠিক রেখে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর যাতে চাষাবাদের জন্য বিভিন্ন শস্য-ফসলের চারা পাওয়া যায় সে জন্য মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার আন্ধারমানিক গ্রামের কৃষক আব্দুস সালাম চলতি মৌসুমে বন্যাকালীন সময়ে উঁচু ভিটায় এক হাজার লাউয়ের চারা চাষাবাদ, প্রতিবেশি কৃষকদের কাছে বিতরণ ও বিক্রির জন্য অংকুরোদগম করেছেন।

এই প্রসঙ্গে মো. আব্দুস ছালাম ৪ বছর যাবৎ বন্যার আপদকালীন সময়ে তুলনামূলক উঁচু ভিটায় লাউয়ের বীজ থেকে চারা তৈরির কাজ করছেন। তিনি বলেন, ‘উচু ভিটায় প্রায় ২৫ দিন পর্যন্ত চারা রাখলেই চলে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সাথে আমি নিজে সেই চারা মূল জমিতে রোপণ করি। চলতি মৌসুমে আমি এই চারা নিয়ে ৩৩ শতক জমিতে মাচা করে লাউ চাষ করার পরিকল্পনা করেছি। বিগত বছরে আমার লাউয়ের চারা বাড়ির আশেপাশের প্রতিবেশি এবং গ্রামের অনেক মানুষকে বিনামূল্যে প্রায় ১০০ চারা বিতরণ করেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ বছর আমি লাউয়ের চারা বিক্রি করে ৩ হাজার ৫শ’ টাকা আয় করতে পারব বলে আশা করি। আমি নিজের বাড়িতে সংরক্ষিত বীজ থেকেই এই চারা তৈরি করি।’ এখন তার গ্রামের অনেক কৃষকই বাড়িতে বীজ সংরক্ষণ করছেন। গ্রামের তরুণ কৃষক-কৃষাণীদের বীজ সংরক্ষণ বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রয়োজন বলে জানান।

বলে রাখা প্রয়োজন যে, পদ্মা তীরবর্তী হরিরামপুর উপজেলার আন্ধারমানিক, বয়রা, খালপাড়া বয়রা, কর্মকারকান্দি এবং চরাঞ্চলের পাটগ্রামচর, হালুয়াঘাটা, বালিয়াচর, সেলিমপুর, জয়পুর, গঙ্গাধরদি এলাকা অতি নিচু হওয়ার কারণে প্রতিবছর কম বেশি বন্যার পানিতে বসতবাড়ি, সংলগ্ন এলাকা, আনালপালান এবং ফসলী জমি আষাঢ়-শ্রাবণ এমনকি ভাদ্র মাস পর্যন্ত পানিতে নিমজ্জিত থাকে। আব্দুস ছালামের মতো এখানকার কৃষকরা আগাম সবজি চাষাবাদের জন্য উঁচু ভিটায় কখনো বা মাটির বা বাঁশের ঝুড়িয়ে লাউ, শিম, মিষ্টিকুমড়া, করলাসহ বিভিন্ন সবজি বীজ অংকুরোদগম করেন। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথে কৃষকর সেই অংকুরিত সবজি চারা মূল জমিতে রোপণ করেন। ফলে বন্যা প্রবণ এলাকা হলেও স্থানীয় কৃষকরা এই কৌশলে আগাম সবজি চাষাবাদ করতে পারেন। আষাঢ় শ্রাবণ মাসে সাধারণত বন্যা হয়। অন্যদিকে এলাকায় আগাম লাউ চাষের জন্য ভাদ্র মাসের শেষে লাউ বীজ বপনের উপযুক্ত সময়। তাই বন্যার এই সময়টিতে চরের কৃষকরা যাদের সুযোগ আছে তারা উচু জমিতে বীজতলা বানিয়ে সেখানে অনেক পরিমাণে লাউয়ের চারা উৎপাদন করেন। ভাদ্র মাসে বন্যার পানি নেমে গেলে কৃষকরা জমি তৈরি করে অংকুরিত চারা সেই জমিতে রোপণ করেন। এতে লাউ চাষাবাদের মৌসুম বা সময়কাল বজায় রাখা যায়। ফলে উৎপাদনের অঅবহাওয়াগত সমস্যা হয় না। এভাবে বন্যার সাথে অভিযোজন করে কৃষকরা উৎপাদন কাজ অব্যাহত রেখেছেন। বন্যা মোকাবিলার এই উদ্যোগ হরিরামপুর উপজেলার আন্দারমানিক, বয়রা, খালপাড়া বয়রা, কর্মকার কান্দি এবং চরাঞ্চলের পাটগ্রামচর, হালুয়াঘাটা, বালিয়াচর, সেলিমপুর, জয়পুর ও গঙ্গাধরদি গ্রামের কৃষকরা ব্যাপকভাবে প্রয়োগ করেন।

উল্লেখ্য যে, বারসিক-হরিরামপুর রিসোর্স সেন্টার ২০১০ সাল থেকে পরিবেশ-প্রকৃতি সুরক্ষা ও কৃষকদের স্থানীয় জাতের শস্য-ফসলের বীজ সংরক্ষণ, চাষাবাদ ও প্রসারে গ্রাম পর্যায়ে বীজ মেলা, প্রশিক্ষণ কর্মশালা ও অভিজ্ঞতা বিনিময়সহ বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে।

happy wheels 2

Comments