জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় হাওর ও সমতলের বৃক্ষ নার্সারি

নেত্রকোনা থেকে সুমন, অহিদুর রহমান ও শংকর ম্রং
বিশ্বে বর্তমান মোট জনসংখ্যা ৭৫৩ কোটি (২০১৭ সালের হিসাবে)। এর মধ্যে শুধুমাত্র ভারত ও চীন এ দু’টি দেশের জনসংখ্যা প্রায় ২৭৮ কোটির অধিক (২০২০ সালের তথ্য অনুযায়ী ভারতের মোট জনসংখ্যা ১৩৮ কোটি প্রায় এবং ২০১৯ সালের তথ্য অনুযায়ী চীনের মোট জনসংখ্যা ১৪০ কোটি)। ভারত ও চীনের তুলনায় বাংলাদেশের আয়তন খুবই ছোট। বাংলাদেশ ভারতের মোট আয়তনের ২২ ভাগের এক ভাগ এবং চীনের আয়তনের ৬৫ ভাগের এক ভাগ মাত্র। যেখানে ভারতের মোট আয়তন ৩২,৮৭,২৬৩ বর্গ কিলোমিটার এবং চীনের মোট আয়তন প্রায় ৯৬ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার, সেখানে বাংলাদেশের মোট আয়তন মাত্র ১,৪৯,২১০ বর্গ কিলোমিটার প্রায়। জনসংখ্যা বহুল বাংলাদেশের মোট ভূ-ভাগের ২৫% বন থাকার কথা থাকলেও বাংলাদেশে বর্তমানে বনের পরিমাণ খুবই কম। ‘দ্য স্টেট অব গোলাবাল ফরেস্ট-২০১৮’ তথ্য অনুযায়ী, দেশে মোট ভূ-খন্ডের মাত্র ১৩ শতাংশ বন রয়েছে। আবার বন ও পরিবেশ মন্ত্রনালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ১৭ শতাংশ বনভূমি (বন ও বৃক্ষ অচ্ছাদিত এলাকা)। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের মানুষ প্রতিবছর খুবই কম পরিমাণে বৃক্ষ রোপণ করায় প্রয়োজন অনুযায়ী বন গড়ে উঠছেনা। অথচ একটি গাছ কাটলে কমপক্ষে দু’টি গাছ রোপণ করার কথা বলা হয়েছে। দেশের লোক শুধু প্রয়োজনে ও অপ্রয়োজনে গাছ কেটে ফেলছে প্রতিনিয়ত। অথচ গাছ না কেটেও সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমে অনেক উন্নয়ন কার্যক্রম করা সম্ভব। আবার দেশের সকল অঞ্চল এক ধরণের নয়, কোথাও পাহাড়, কোথাও সমতল, কোথাও জলাবদ্ধতা আবার কোথাও হাওর হওয়ায় ইচ্ছে করলেও যেকোন জাতের গাছ রোপন করা যায়না।


বারসিক বিগত ২০০১ থেকে নেত্রকোনা অঞ্চলে কৃষি পরিবেশ, প্রতিবেশ ও প্রাণবৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও উন্নয়নে কাজ করে আসছে। বারসিক অদ্যাবধি সময় পর্যন্ত নেত্রকোনা অঞ্চলে কৃষি প্রাণবৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও উন্নয়নে কর্মএলাকার জনগোষ্ঠীদের সচেতনতা বৃদ্ধি ও উদ্যোগ গ্রহণে উদ্বুদ্ধকরণে প্রচারণা চালিয়ে আসছে। বারসিক’র প্রচারণার ফলে কর্মএলাকার জনগোষ্ঠী, জনসংগঠন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বৃক্ষ রোপণে আগ্রহী হয়ে প্রতিবছর বৈচিত্র্যময় ফলদ, বনজ, ঔষধি, পানি সহনশীল ও গুল্ম জাতীয় গাছের চারা নিজেদের বসতভিটা, পতিত জমি, গ্রামের রাস্তা/সড়কের ধারে, বাজার ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের খালি জায়গা, হাওর রক্ষা বাঁধ ও গুচ্ছগ্রামের চারপাশে রোপন করছে। জনগোষ্ঠীর মধ্যে দিন দিন বৃক্ষ রোপণের আগ্রহ বৃদ্ধি পেলেও বনায়নে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রয়োজন অনুযায়ী বৈচিত্র্যময় গাছের চারার দুস্প্রাপ্যতা। বেশিরভাগ সময় প্রয়োজনীয় ও সঠিক উচ্চতার চারা না পাওয়া, চারা পাওয়া গেলেও চারার উচ্চমূল্য এবং এলাকায় কোন নার্সারি না থাকা। ফলে একশত টাকা মূল্যের একটি চারা কেনার জন্য হাটের দিন ১০০-১৫০ টাকা যাতায়াত বাবদ খরচ হয়ে যায়। বিশেষভাবে হাওরাঞ্চলে উঁচু ও সমতল জায়গা না থাকায় কোন নার্সারিও গড়ে ওঠেনি। হাওরের সাপ্তাহিক হাটগুলোতে দূর-দূরান্ত থেকে নার্সারির মালিকরা গাছের চারা বিক্রি করতে নেয়ায় তাদের পরিবহন খরচ বেড়ে যায়, ফলে তারা অনেক দামে চারা বিক্রি করে। অন্যদিকে সমতল এলাকায় বেশকিছু নার্সারি থাকলেও চারার মূল্য অনেক বেশি হওয়ায় জনগোষ্ঠী গাছের চারা রোপণ করতে পারেনা।
বারসিক কর্মএলাকার জনগোষ্ঠীর জন্য বৈচিত্র্যময় গাছের চারার সহজলভ্যকরণের লক্ষ্যে ব্যক্তির আগ্রহের ভিত্তিতে ২০১৮ সাল থেকে সমতল এলাকা ও হাওর এলাকায় দু’টি করে মোট চারটি নার্সারি গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করে। একটি ময়মনসিংহ জেলার তারাকান্দা উপজেলার বিসকা ইউনিয়নের সাধুপাড়া গ্রামে, একটি নেত্রকোনা সদর উপজেলার কাইলাটি ইউনিয়নের মৌজেবালি গ্রামে এবং অন্য দু’টি মদন উপজেলার মদন ইউনিয়নের হাওর ঘেষা উচিতপুর ও কুলিয়াটি গ্রামে। হাওরাঞ্চলের দু’টি নার্সারিতে কৃষকরা বৈচিত্র্যময় ফলদ, বনজ, ঔষধি, ফুল, সবজি ও পানি সহনশীল গাছের চারা এবং সমতলের নার্সারিতে শুধুমাত্র ফলদ, বনজ, ঔষধি, ফুল ও সবজি জাতীয় গাছের চারা উৎপাদন করা হয়েছে।

নার্সারির বর্তমান অবস্থা
মদন উপজেলায় দু’টি হাওর নার্সারিতে বর্তমানে ১৬ জাতের প্রায় ২০/২২ হাজারের অধিক গাছের চারা রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় দশ হাজার চারা পানি সহনশীল হিজল ও করচের চারা। হাওরাঞ্চলের কৃষকসহ সকল শ্রেণীর জনগোষ্ঠী বর্তমানে দু’টি নার্সারি থেকে বৈচিত্র্যময় চারা সংগ্রহ করে নিজ নিজ বসতভিটায় রোপণ করছেন। হাওরাঞ্চলের কৃষকরা এখন যেকোন সময় নার্সারিতে গিয়ে তাদের পছন্দের চারা সংগ্রহ করতে পারছেন। চারার জন্য কৃষকদেরকে এখন আর সাপ্তাহিক হাটের জন্য বসে থাকতে হয়না। এখন চারা কৃষকদের নাগালের মধ্যে হওয়ায় চারা পরিবহনে তাদেরকে এখন আর বেশি টাকা ব্যয় করতে হয়না। যেকোন সময় নারী-পুরুষ যে কেউ নার্সারি থেকে চারা সংগ্রহ করতে পারছেন। দু’টি নার্সারিতে বর্তমানে যেসব জাতের চারা রয়েছে তার মধ্যে পেঁপে, পেয়ারা, জাম, কাঁঠাল, সুপারি, লেবু, বেল, করমচা, জলপাই, কৃষ্ণচুড়া, কাঞ্চনফুল, হরিতকি, নিম, গর্জন, মেহগনি, হিজল, করচ উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও মৌসুমভিত্তিক সবজি চারা যেমন-মরিচ, চুকাই, টমাটো, বেগুন, লাউ, শিম, কুমড়া, মিষ্টিকুমড়া ইত্যাদি উৎপাদন করা করে নিয়মিত বিক্রি করা হচ্ছে।


মদন উপজেলার উচিতপুর গ্রামের অরব আলী তালুকদার ২০১৯ সালের শেষভাগে বারসিক’র সহযোগিতায় তালুকদার নার্সারি নামে হাওর নার্সারি গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়ে এ পর্যন্ত আম, কাঁঠাল, করমচা, পেয়ারা, আমরা, জলপাই, হিজল, করচ, নিম, মরিচ, বেগুন, পেঁপে, লাউ, কাঞ্চন ফুল, কৃষ্ণচুড়াসহ ১৫ ধরণের প্রায় চৌদ্দ হাজার চারা উৎপাদন করেছেন। এর মধ্যে হিজল ও করচের চারা ৭৫০০, নিম ১৫০০, পেয়ারা ১৫০০, বেগুন ৮০০, মরিচ ৫০০, আম ৫০, জলপাই ৯০০, আমড়া ২০, করমচা ২০, পেঁপে ২০০টি। ২০০টি কাঞ্চন ফুল ১৫০টি, কৃষচুড়া ১০০টি, পেঁপের চারা ৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। চারা উৎপাদনের মত উচুঁ জমি না থাকায় এবং বসতভিটা খুবই ছোট হওয়ায় কৃষক আরব আলী বাঁশ দিয়ে দো’তলা মাঁচা পদ্ধতিতে বেড তৈরি করে তাতে মরিচ, বেগুন ও পেঁপে চারা উৎপাদন করেছেন। বর্তমানে তার হিজল ও করচের চারা প্রায় ৪/৫ ফুট লম্বা হয়েছে। পাইকাররা ইতিমধ্যে চারাগুলো কিনে নেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু আগামী মৌসুমে গ্রামের রাস্তার পাশে এবং হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধে রোপণের জন্য চারাগুলো আরও বড় করছেন বলে আরব আলী জানান। মরিচ ও বেগুন চারা ইতিমধ্যে ২ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। আরব আলী নার্সারিতে উৎপাদিত চারা লক্ষাধীক টাকার উপড়ে বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন। তিনি উৎপাদিত হিজল ও করচের চারা মধ্য থেকে দুই/তিনশত চারা হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধে রোপণের জন্য বিনামূল্যে দিবেন বলে জানান। নার্সারিতে পানি সহনশীল গাছের চারা উৎপাদনের খবর পেয়ে অনেক প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে চারার চাহিদা জানিয়েছেন বলে আরব আলী জানান। তিন হাজার হিজল করচের চারা নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ড ৩০ টাকা দরে মোট নব্বই হাজার টাকায় কিনে নিয়েছে হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধে বনায়নের জন্য। দিরাই, সাল্লা ও খালিয়াজুড়ি উপজেলা পাইকার প্রতিটি ২৫ টাকা দরে কিনে নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। শুধুমাত্র হিজল ও করচের চারা বিক্রি করে উদ্যোক্তা আরব আলী প্রায় দুই লক্ষাধিক টাকা এবছর আয় করতে পারবেন বলে জানান।


কুলিয়াটি গ্রামের কৃষাণী জেসমিন আক্তার ২০১৯ সাল থেকে বারসিক’র উপকরণ সহযোগিতা নিয়ে বাড়ির উঠানের তিন শতাংশ জমিতে ‘দানা নার্সারি ’ নামে একটি নার্সারি স্থাপন করে বৈচিত্র্যময় ফলদ, বনজ, ঔষধি ও ফুলের চারা উৎপাদন করে আসছেন। দানা নার্সারিতে আম, কাঁঠাল, সুপারী, পেঁপে, পেয়ারা, জলপাই, করমচা, কৃষ্ণচুড়া, কাঞ্চন, হিজল, মেহগনি, গর্জন, করচ, নিম, হরিতকি, বহেরা, মরিচ, বেগুন, চালকুমড়া, মিষ্টিকুমড়াসহ ২০ জাতের প্রায় ৭৩০০টি গাছের চারা রয়েছে। এ পর্যন্ত তিনি প্রায় দেড় লক্ষাধিক টাকার চারা বিক্রি করেছেন এবং প্রায় ১২০০টি চারা (পেঁপে, সুপারি, পেয়ারা ও সবজি চারা) গ্রামের জনগোষ্ঠীর মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করেছেন। গোবিন্দশ্রী গুচ্ছগ্রামে পানি সহনশীল গাছের বনায়নের জন্য তিনি যুব সংগঠনকে ১০০টি হিজল ও করচ গাছের চারা দিয়ে সহযোগিতা করেছেন।


নেত্রকোনা সদর উপজেলার মৌজেবালি গ্রামের কৃষক আবুল কালাম বারসিক’র উপকরণ ও কারিগরি সহযোগিতায় বিগত এক বছরে দুই শতাংশের নার্সারীতে আম, কাঁঠাল, পেঁপে, পেয়ারা, লেবু, করমচা, নিম, কৃষ্ণচুড়া, কাঞ্চনফুল, বেগুন, মরিচ, লাউ, মিষ্টিকুমড়াসহ ১৩ জাতের চারা উৎপাদন করেছেন। বিগত এক বছরে তিনি ৬টি জাতের ২০০০টি চারা প্রায় ১২ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। চারা বিক্রির টাকা তিনি তিন মেয়ের লেখাপড়া (কলেজ ও হাইস্কুল) ও সংসারে ব্যয় করেছেন। বর্তমানে আবুল কালামের নার্সারিতে ৭টি জাতের (আম, কাঁঠাল, জাম, মেহগণি, নিম, লেবু ও কৃষ্ণচুড়া) প্রায় ৩০০০টি চারা রয়েছে। জমির পরিমাণ খুবই সামান্য হওয়ায় তিনি নার্সারিতে চারার উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পারছেন না বলে জানান। তবে তিনি বিক্রির জন্য শীত মৌসুমের বৈচিত্র্যময় সবজির চারা উৎপাদন করার উদ্যোগ নিয়েছেন। তিনি সহযোগিতা পেলে আগামীতে বৈচিত্র্যময় ফলের চারা উৎপাদন করবেন বলে জানান।


ময়মনসিংহ জেলার তারাকান্দা উপজেলার সাধুপাড়া গ্রামে স্কুল শিক্ষার্থী আব্দুল কাইয়ুম (১৮) লেখাপড়ার পাশাপাশি শখের বসে বিভিন্ন ধরণের ফলের বীজ সংগ্রহ করে নিজের জন্য চারা উৎপাদন করত। উপজেলার কাশিগঞ্জ বাজার সংলগ্ন গ্রামের আলী আহম্মদ নার্সারি পরিদর্শন করে বীজ থেকে এবং গ্রাফটিং করে চারা উৎপাদন পদ্ধতি দেখে কিশোর কাইয়ুম এর মধ্যে নার্সারি করার ইচ্ছা জাগে। পরবর্তীতে বাবার সাথে আলোচনা করে বাড়ির পেছনের সামান্য জমিতে চারা উৎপাদনের কাজ আরম্ভ করে। ২০১৭ সালে বারসিক’র সহযোগিতায় সাধুপাড়া জনউন্নয়ন কেন্দ্রে কৃষকদের জন্য গ্রাফটিং/কলম/কাটিং এর মাধ্যমে উন্নত জাতের ফলের চারা উৎপাদন বিষয়ে হাতে-কলমে ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ আয়োজন করা হলে কিশোর শিক্ষার্থী আব্দুল কাইয়ুম তাতে অংশগ্রহণ করে গ্রাফটিং এর কাজটি ভালোভাবে রপ্ত করে। পরবর্তীতে নিজের উৎপাদিত ফলের চারাগুলোতে পছন্দের ফলের কাটিং করে গ্রাফটিং এর মাধ্যমে উন্নত চারা তৈরি করতে সক্ষম হয়। ২০২০ সালে বারসিক’র সহযোগিতায় আব্দুল কাইয়ুম নেত্রকোনা কর্মএলাকার আরও দু’জন কৃষক-কৃষাণীর সাথে টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর উপজেলার “সুমি নার্সারি’তে নার্সারি ব্যবস্থাপনা বিষয়ে তিনদিনের হাতে-কলমে ব্যবহারিক প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করে। সুমি নার্সারিতে সে শত রকমের ফল, কাঠ ও ফুলের চারা সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জনসহ গ্রাফটিং এর ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ পায়। এছাড়াও কাইয়ুম ইউটিউব ও টেলিভিশনের কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন অনুষ্ঠান দেখে বীজ থেকে এবং গ্রাফটিং করে চারা উৎপাদনের আধুুনিক পদ্ধতিগুলো সম্পর্কে জ্ঞার্নাজন করে। সুমি নার্সারি থেকে সে বেশকিছু পছন্দের ফল ও মসলার (তেজপাতা) চারা সংগ্রহ করে নিয়ে আসে। পরবর্তীতে বারসিক’র উপকরণ সহযোগিতা নিয়ে সে প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা তার নিজের নার্সারিতে প্রয়োগ করে বিভিন্ন ধরণের ফলের গ্রাফটিং চারা উৎপাদন করে আসছে। তার নার্সারিতে গ্রাফটিংকৃত চারাগুলোর মধ্যে-আম, কাঁঠাল, জাম, পেয়ারা, লিচু, লেবু, সফেদা, জাম্বুরা উল্লেখযোগ্য। সেপ্টেম্বর ২০২১ পর্যন্ত ২০ জাতের ৬০০০টি গাছের চারা (বীজ থেকে ও কলম) উৎপাদন করেছে এবং গ্রামবাসীদের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণ ও নিজে রোপণের পরও প্রায় ৬০০০ টাকার চারা বিক্রি করেছে বলে কাইয়ুম জানায়। চলতি বছরে সাধুপাড়া কৃষক সংগঠন ও সোনার বাংলা যুব সংগঠনের সাধুপাড়া গ্রামটিকে জাম গ্রাম হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ বাস্তবায়নে রাস্তায় ধারে রোপণের জন্য কাইয়ুম তার নার্সারি থেকে ৫১টি জাম ও নিমের (নিম-২) চারা প্রদান করে। বর্তমানে কাইয়ুম এর নার্সারিতে ২০ জাতের ১২ শতাধিক গাছের চারা (বীজ থেকে উৎপাতি ও গ্রাফটিং চারা) রয়েছে। চলতি মৌসুমে নার্সারি থেকে কাইয়ুম প্রায় ২৫০ জন জনগোষ্ঠীর মধ্যে ১০০০টি চারা বিনামূল্যে বিতরণ করেছে বলে জানায়। ভবিষ্যতে কাইয়ুম ব্যাপক আকারে নার্সারি করে সেখানে দেশি বিদেশী শতাধিক প্রজাতির গাছের চারা উৎপাদন করে জনগোষ্ঠীর জন্য চারার সহজলভ্যতা সৃষ্টি করবে, যাতে জনগোষ্ঠী এলাকায় বৈচিত্র্যময় কাঠ, ফলদ ও ঔষধি গাছের বাগান করতে পারে জনগোষ্ঠী নিজেদের পরিবারের সদস্যদের জন্য বৈচিত্র্যময় খাদ্য নিশ্চিত হয়।


হাওরাঞ্চলে ও সমতলে নার্সারি স্থাপন করে চারটি কৃষক পরিবার নিজেরা যেমন বৈচিত্র্যময় গাছের চারা এবং বৈচিত্র্যময় সবজির চারা রোপন করতে পারছেন, তেমনি উৎপাদিত গাছের চারা ও সবজির চারা বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি এলাকার জনগোষ্ঠীর জন্য চাহিদামত চারার যোগান দিতে সক্ষম হচ্ছেন। ফলে এলাকায় বৃক্ষ ও সবজি বৈচিত্র্য দিনি দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। নার্সারির ফলে দু’টি কৃষক পরিবারের চারজন প্রবীণ নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। আগামী বছর হাওরাঞ্চলে পানি সহনশীল গাছের বনায়নে চারার সংকট নার্সারিতে উৎপাদিত চারার মাধ্যমে লাঘব হবে বলে আশা করা যায়। হাওরাঞ্চলের স্বেচ্ছাসেবী জনসংগঠনগুলো এলাকার প্রাণবৈচিত্র্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রত্যেকটি পরিবারে বৈচিত্র্যময় ফলজ, ঔষধি গাছের চারা রোপণে সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলোকে উদ্বুদ্ধ করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদিক শিক্ষার্থী আব্দুল কাইয়ুম তালকদার বলেন, ‘বিগত সময়ে আমরা হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধে বনায়নের জন্য পার্শ্ববর্তী উপজেলা থেকে পানি সহনশীল হিজল ও করচের চারা অনেক দামে কিনে এনে বনায়ন করেছি। চারা পরিবহনে আমাদের অনেক খরচ হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে গ্রামেই নার্সারি হওয়ায় চারা পরিবহনে কোন খরচ হবেনা এবং পছন্দমত চারা বাছাই করে বাঁধে লাগাতে পারবো। এলাকায় বনায়ন করে হাওরের পরিবেশ আমরা উন্নয়ন করতে সক্ষম হবো।’

happy wheels 2

Comments