কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় দরকার সমন্বিত নীতিমালা

ঢাকা থেকে ফেরদৌস আহমেদ উজ্জল
ইউএস এইড এবং এফসিডিও এর অর্থায়নে এবং কাউন্টার পার্ট ইন্টারন্যাশনাল এর কারিগরি সহযোগীতায় ‘ঢাকাকলিং’ কনসোর্টিয়াম প্রকল্পের আওতায় বারসিক’র উদ্যোগে আজ ২২ নভেম্বর ‘কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে অনলাইন সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। বারসিক’র উদ্যোগে নগর গবেষক ও বারসিকের সমন্বয়ক মো: জাহাঙ্গীর আলমের সভাপতিত্বে ও ফেরদৌস আহমেদের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় ধারণাপত্র উত্থাপন করেন লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ। এসময় প্যানেলিষ্ট হিসেবে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন পরিবেশ অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)’র সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো: আব্দুস সোবহান, এ্যাড সৈয়দ মাহবুবুল আলম ও সাংবাদিক এমরান হোসেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রকল্প সম্পর্কে উপস্থাপন করেন ডিএসকের প্রজেক্ট ম্যানেজার মো: রকিবুল ইসলাম।


প্যানেল আলোচক প্রকৌশলী আব্দুস সোবহান বলেন, ‘পরিবেশ সংরক্ষণ আইন হলো একটা সমন্বিত আইন যেখানে পরিবেশ সংরক্ষণের সার্বিক বিষয়াবলী রয়েছে। ২০১৮ সালে পরিবেশ নীতি করা হয় নতুন করে। সেই নীতিমালার ৫টি প্রধান বিষয়ের একটি হলো বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। সরকার পরিবেশ নীতিমালায় এটাকে খুবই গুরুত্ব দিয়ে সংযুক্ত করলেও তার বাস্তবায়ন নেই বললেই চলে। যাদের উপর দায়িত্ব তারাই ব্যর্থ।’ তিনি আরও বলেন, ‘সিটি কর্পোরেশন, নৌ পরিবহন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ যারা কঠিন বর্জ্য উৎপাদন করে তাদের সকলকে সাথে নিয়ে সমন্বিত নীতিমালা করতে হবে। শুধু তাই নয় এক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তরকে সঠিক তদারকির কাজটাও সুচারুভাবে করতে হবে।’


নীতি বিশ্লেষক এ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, ‘সমন্বিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নীতির কোন বিকল্প নেই। বর্জ্যকে পৃথক করে তার সঠিক ব্যবস্থাপনা এখন অতীব জরুরি।’ আর স্থানীয় সরকারের হাতে জরিমানাসহ নানান ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানান তিনি। এছাড়া তিনি আরও বলেনন, নাগরিকদের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে হবে এবং নিশ্চিত করতে হবে।
বিশিষ্ট সাংবাদিক এমরান হোসেন বলেন, ‘বর্জ্য ব্যবস্থাপনা একটি বড় বিষয়। বিশ^ব্যাপী এটা নিয়ে অনেক কাজ হয়। আমাদের দেশেও ছোট ছোটভাবে এ কাজ হচ্ছে। তবে সব উদ্যোগকে কাজে লাগাতে পারলে আমাদের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে এগিয়ে যেতে পারে।’


পাভেল পার্থ তার ধারণা পত্রে বলেন, ‘আমরা যখনি বলি সভ্যতা, বিশেষ করে নগরসভ্যতা, তখন এর চাকচিক্য আর স্থাপনা বা বিলাসবহুল জীবনই শুধু নয় এর সাথে চলে আসে বর্জ্য বা আবর্জনার প্রসঙ্গ। দেখা গেছে কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ জীবন থেকে কোনো এলাকা যখনি নগরায়ন ও শিল্পায়নের ফলে পরিবর্তিত হয়েছে তখনি বর্জ্য এক তীব্র সংকট হিসেবে দেখা দিয়েছে। কারণ বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে নগর ও শিল্পএলাকা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এক মৌলিক বিবেচনা হিসেবে নেয়া হয়নি। আজ তাই দেশের রাজধানীসহ বড় মেট্রোপলিটন, সিটি কর্পোরেশন, বিভাগ, জেলা এমনকি উপজেলা সদরগুলোও আজ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে ভীষণ দুর্বিপাকে আছে। প্রতিটি শহর এলাকায় প্রবেশের আগে এক বিশ্রি দুর্গন্ধ টের পাওয়া যায়। শহরের সকল বর্জ্য আবর্জনা শহরে ঢোকার রাস্তার আশেপাশে ফেলা হচ্ছে। সামগ্রিকভাবে এখনো দেশে সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে ওঠেনি। এর ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সকল শ্রেণি-পেশার নগরবাসীকেই। বিশেষ করে নগরের নি¤œআয়ের মানুষজন এবং বিশেষত যারা বস্তিএলাকায় বসবাস করছেন তাদের অধিকাংশের আবাসস্থল এরকম বর্জ্য ডাম্পিং এলাকায় এবং এরাই বর্জ্যবিষয়ক সবচে বেশি সমস্যার মুখোমুখি হয়। মোট বর্জ্যরে একটা বড় অংশ হচ্ছে কঠিন বর্জ্য। পরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ভেতর দিয়ে যে বর্জ্য সম্পদে পরিণত হতে পারে এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নগরবাসীকে যুক্ত করলে গড়ে ওঠতে পারে সঠিক পরিকল্পিত স্বাস্থ্যকর বর্জ্যব্যবস্থাপনা। সেক্ষেত্রে নগরের নি¤œআয়ের বস্তিবাসীদের নিয়ে সমাজভিত্তিক কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এখন সময়ের দাবি।


বস্তিবাসী নেত্রী হোসনে আরা বেগম রাফেজা বলেন, আমরা সর্বদাই চেষ্টা করছি বস্তিবাসীদের সচেতন করতে। বস্তিবাসীরা সবসময় আন্দোলনই করে কিন্তু সকল সুবিধা নেয় ক্ষমতাসীনরা। আমরা কাউন্সিলরকে বলি ময়লার বিল কমাতে আর কাউন্সিলর বলে বিল বাড়াবে।’ তিনি সকল বস্তিবাসীদের সংগঠিত হয়ে কাজ করার জন্য আহবান জানান।


অনলাইন আলোচনায় আরও আলোচনা করেন, কাপ এর নির্বাহী পরিচালনক খন্দকার রেবেকা সান ইয়াত, ঢাকা কলিং প্রকল্পের টেকনিক্যাল এডভাইসার সুমন আহসানুল ইসলাম, পবার সম্পাদক মেসবাহ উদ্দিন সুমন, বস্তিবাসীদের প্রতিনিধি হোসনে আরা বেগম রাফেজা, হান্নান আখন্দ, বিল্লাল হোসেন, হারুণ আর রশিদ প্রমূখ। আরও উপস্থিত ছিলেন কাপের মাহবুবুল হক, ডিএসকের ফারহা হাদিয়া, বারসিক’র সুদিপ্তা কর্মকার, সাবিনা নাঈম প্রমূখ।

happy wheels 2

Comments