এদেরও মানুষের মত প্রাণ আছে

সিংগাইর, মানিকগঞ্জ থেকে আছিয়া আক্তার
বুকের ভেতরটা হু হু করে কেদে উঠলো, একই অনাচার! নিজের গায়ে ব্যাথা লাগলে বুঝি, অন্যেরটা কেন বুঝি না, দেখেও না দেখার ভান করে থাকি। আমরা মানুষ কত নিষ্ঠুর ও জঘন্য। লোকমুখে শোনাগল্প, ছবি দেখা এক জিনিস আর নিজ চোখে দেখা আরেক জিনিস। নিজের চোখে না দেখলে হয়তো বুঝতামই না কষ্টটা।


আমার শ^শুর বাড়ি ঘিওর এলাকায় হওয়াতে, ঘিওর বাজারের আশপাশ বেশ পরিচিত। মা-বাবা শ্বশুর-শ্বাশুরি ছোট বোন একসাথে ঘুরতে বের হই। বাবার ইচ্ছে হলো বাজার দেখার, সবাই গেলাম সেখানে। বাজারের ভেতরে গিয়ে কতক্ষণ পর পরই দেখা মিলে ঘোড়ার। ছোট বোন তো খুব খুশি, ‘মেজো দেখো এখানে কত ঘোড়া। আমাদের সিংগাইর এলাকায় ঘোড়া নেই তা না ,তবে খুব কম। এতো ঘোড়া দেখে, তাই ছোট বোনের এতো আনন্দ। একটু পর আসলো একটা ঘোড়ার গাড়ি, কমপক্ষে দশ বস্তা জিনিসপত্র, সাথে তিনজন লোক বস্তার উপরে বসা। নিমিষেই আমার মা, শ্বাশুরি আর আমার মুখটা কালো হয়ে গেলো। আমার মা বলে উঠলো এই সব আমার সহ্য হয় না। কি কষ্ট দিচ্ছে এদের। মানুষ কি বুঝে না এদেরও মানুষের মত প্রাণ আছে। রক্তে মাংসে গড়া এরা। লক্ষ্য করলাম, নিমিষেই মায়ের চোখ দুটো পানিতে ছলছল করছে। মা বলতে লাগলো ‘আল্লাহ এই ঘোড়াগুলোকে নিয়ে যেতে পারে না। মা আর ঘোড়া দুজনের কষ্ট। আমাকে খুব মর্মাহত করলো!


আমার শ্বাশুরির কাছে জিজ্ঞেস করলাাম, ‘গাড়ি দিয়ে এই বস্তাগুলো আনে না কেন’? জবাবে আমার শ্বাশুরি বললেন ‘বররা নামক একটা এলাকা আছে, ওই দিকে কাচা রাস্তা গাড়ি দিয়ে আনবে কি করে।’ আচ্ছা তাহলে কম করে ব্স্তা দিয়ে আনতে পারেনা জানতে চাইলে উত্তর আসে ‘সবাই তার নিজেরটা বুঝে। দুই বস্তা করে বেশি আনলে পাঁচবারে দশ বস্তা আসে একটা গাড়ি ভাড়া বেচে যায়।’


আমার শ্বাশুরি বলেন, ‘আমার নিজের চোখে দেখা এক ঘোড়ার কাহিনী। আমি আমার বাবার বাড়ি যাচ্ছি, রাস্তায় দেখি একটা ঘোড়ার গাড়িতে অনেকগুলো সিমেন্টের বস্তা, গাড়িসহ ঘোড়া কাদায় আটকে পড়ছে, গাড়িওয়ালা তো সমানতালে ঘোড়াকে চাবুক দিয়ে জোরে জোরে বাড়ি মারছে। ঘোড়ার দু চোখ দিয়ে অঝড়ে পানি পড়ছে। ওঠার জন্য খুব চেষ্টা করছে. কিন্তু কিছুতেই উঠতে পারছে না । এক পর্যায়ে গাড়িসহ ঘোড়া কাত হয়ে পরে গেলো। গাড়িওয়ালা কিভাবে জানি পড়লো সিমেন্টের বস্তার নিচে। অনেক মানুষ জড়ো হলো লোকটাকে টেনে উঠালো।’


অমানবিক কাজ করলে তার সাথে এমনটাই হওয়া স্বাভাবিক। সে যদি কম করে মালামালা গাড়িতে বহন করতো তাহলে নিশ্চয়ই তার সাথে এমন হতো না। যদি ঐ সব জায়গায় গাড়ি চলাচলের ব্যবস্থা না থাকে তাহলে যেন অন্তত কম করে মালামাল বহন করা হয়। সেই দাবি তুলতে চাই আমরা।

happy wheels 2

Comments