প্রতিবছরই ওরা আসে; আসুন সম্মিলিতভাবে ওদের রক্ষা করি

মানিকগঞ্জ থেকে রাশেদা আক্তার

প্রতিবছরই ওরা আসে। ঝাঁকে ঝাঁকে দল বেঁধে। ওরা আসে আমাদের অতিথি হয়ে। হ্যাঁ, ওরা শীতের অতিথি পাখি। নানা রং আর আকৃতির এসব পাখির ক‚জনে মুখরিত হয় নদীপাড়, বিল-ঝিল, বন-বাদাড় সব। প্রতিবছর শীতের শুরুতে দেশের জলাশয়গুলো ছেয়ে যায় নানা রংবেরংয়ের নাম জানা না জানা পাখির ঢলে। ওদেরই আশেপাশে ভিড় জমায় বিচিত্র্য আমাদের দেশী সব দেশি পাখি। শীত কাটিয়ে ওরা আবার চলে যায় ওদের আপন ঠিকানায়। অতিথি পাখির সৌন্দর্য্য ও বিচরণ প্রকৃতিতে এক ভিন্ন মাত্রা এনে দেয়।

বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার মত মানিকগঞ্জ জেলায় শীদের আগমনের সাথে সাথে অতিথি পাখিদের আগমন ও আনাগোনা শুরু হয়েছে। মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর, শিবালয় ও দৌলতপুর উপজেলার বিলগুলোতে ভিড় জমায় অসংখ্য অতিথি পাখিসহ আমাদের দেশী পাখিরা। পাখি প্রেমিক অনেকেই ভিড় জমায় সেই সৌন্দর্য্য উপভোগ করার জন্য। আবার অনেকেই নিষ্ঠুর আচরণ করে পাখিদের প্রতি। অনেকেই শখের বশে অবাধে পাখি শিকার করছেন। বন্য প্রাণি (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২ অনুযায়ী, পাখি শিকার ও পাখি হত্যা দন্ডনীয় অপরাধ।


কেউ যাতে অতিথি পাখিসহ কোনো ধরণের পাখি শিখার করতে না পারে সে উদ্দেশ্যে পালক (পাখি ও পরিবেশ লালন করি) ও বারসিক এর যৌথ উদ্যোগে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সাথে পাখি রক্ষায় স্মারকলিপি প্রদান ও মতবিনিময় করা হয়েছে সম্প্রতি। মতবিনিময় সভায় জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ বলেন, ‘পাখি রক্ষা করা আমাদের সকলের দায়িত্ব। আপনারা পাখি রক্ষায় যে কাজ করে যাচ্ছেন এটি ভালো। আমি আমার প্রতিটি উপজেলার ইউএনওদের বিষয়টি লিখিতভাবে অবহিত করবো এবং পাখির বিচরণভূমিতে পাহারা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে বলবো। সেই সাথে কেউ যাতে কোনো ধরণের পাখি শিকার করতে না পারে, কেউ শিকার করলে তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসার ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেব।’ পাখি রক্ষায় তিনি সকলকে একসাথে কাজ করার আহবান জানান।


পুলিশ সুপার মোহাম্মদ গোলাম আজাদ খান বলেন, ‘আমি ইতোমধ্যেই শীতের অতিথি পাখি বিষয়ে সভা করেছি। আপনারা পাখি রক্ষায় কাজ করছেন, আমার কাছে এসেছেন আমি অবশ্যই বিষয়টি দেখবো। যারা পাখি শিকার করবে, পাখি হত্যা করবে তাদেরকে অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে।’ তিনি প্রত্যেক উপজেলায় তাৎক্ষণিকভাবে ফোন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ প্রদান করেন।


মানিকগঞ্জের প্রেসক্লাব সভাপতি গোলাম ছারোয়ার ছানু বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে পাখি ও পরিবেশ রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এই কাজে বারসিক অনেক সহযোগিতা করে থাকে। আমরা ইতিমধ্যে বিভিন্ন জায়গায় পাখি রক্ষায় জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে বিলবোর্ড স্থাপন করেছি। লিফলেট বিতরণ করেছি। আমরা আশা করি সকলের সহযোগিতা পাব কাজ করার ক্ষেত্রে।”

উল্লেখ্য, বারসিক ২০১৩ সালে পালক (পাখি ও পরিবেশ লালন করি) সংগঠন গঠনের মধ্য দিয়ে পাখি ও পরিবেশ রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে। পাখি আমাদের বন্ধু, প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য পাখির প্রয়োজন রয়েছে। পাখি হলো প্রকৃতির কীটনাশক। পাখি ফসলের পোকা-মাকড়, কীট-পতঙ্গ খেয়ে ফসলকে পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা করে। আমাদের নিজেদের সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্যেও পাখিদের বাঁচিয়ে রাখার প্রয়োজন আছে।

happy wheels 2

Comments