‘নানান সমস্যার পরও বীজ সংরক্ষণ করে যাচ্ছি’

শ্যামনগর, সাতক্ষীরা থেকে বিশ্বজিৎ মন্ডল
‘আগে একটা সময়ে প্রায় সবার বাড়িতে কমবেশি নানান ধরনের বীজ সংরক্ষণে রাখতাম। আর সে বীজ আমাদের নিজেদের প্রয়োজন মিটিয়ে একে অন্যের মধ্যে বিনিময় করতাম। এতে করে আমাদের মধ্যে পারস্পারিক এক ধরনের সম্পর্ক তৈরি হতো। একে অন্যের বাড়িতে গিয়ে দেখা যে, আমার দেওয়া বীজ থেকে কেমন ফসল উৎপাদন হচ্ছে? আমি বীজ এভাবে রেখেছিলাম, গাছের কোন সময়ের কোন ফলটি বীজের জন্য সংরক্ষণ করবো তা যেন আগে থেকেই নির্বাচন করা হতো। আর এসব বিষয়গুলো যেন দিনকে দিন শুধু গল্পের মতো হতে চলেছে।’
উপরোক্ত কথাগুলো বলেছেন শ্যামনগর উপজেলার কাশিমাড়ি ইউনিয়নের জয়নগর গ্রামের বীজ গ্রহণকারী কৃষাণীরা। গতকাল বারসিক’র সহায়তায় এবং জয়নগর কৃষি নারী সংগঠনের উদ্যোগে জয়নগর গ্রামে গ্রীষ্মকালীন সবজির বীজ সহায়তার সময় বীজ গ্রহণকালে উপরোক্ত কথাগুলো বলেছেন তারা।

তারা আরও বলেন, ‘এখন আমাদের এখানে নানান ধরনের দুর্যোগ হয়ে থাকে। কখনও নদী ভাঙন, কখনো অতিবৃষ্টি, কখনও খরা, কখনো জলাবদ্ধতা, কখনো ঝড়। যার কারণে বীজ সংরক্ষণ করার চেষ্টা করেও শেষ পর্যন্ত তা করা সম্ভব হয়ে ওঠেনা। তারপরও আমারা আশা ছাড়িনি। শত প্রতিকূলতার মধ্য দিয়েও বীজ সংরক্ষণ করার চেষ্টা করি। কখনো সফল হই আবার কখনো বিফল হই। এ বিফলতার কারণে আমাদের বাজারের বীজের উপর নির্ভরতা বেড়ে যাচ্ছে। তাই এসবের কারণে আমরা বীজ সংরক্ষণে প্রতিবন্ধকতার শিকার হচ্ছি।’

উপকূলীয় এলাকায় বিগতে সময়ে নানান ধরনের দুর্যোগের কারণে অনেক পরিবার বীজ সংরক্ষণ করতে পারেনি। যার কারণে বীজ সহায়তার জন্য বারসিক’র নিকট নানানভাবে সহায়তা চান কৃষক ও কৃষাণীরা। তাদের দাবির প্রেক্ষিতে চলতি মাসে এলাকার শতবাড়ি ও স্থানীয় বাজার থেকে ৬ প্রকার স্থানীয় গ্রীষ্মকালীন সবজি বীজ (বরবটি, ঢেড়স, মিষ্টিকুমড়া, উচ্ছে,খিরাই, ডাটাশাক) ও চৈুতীমুগ ডাল বীজ ক্রয় করা হয়, যা শ্যামনগর উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের (শ্যামনগর সদর, কাশিমাড়ি, মুন্সিগঞ্জ, আটুলিয়া ও ইশ্বরীপুর) ১২টি গ্রামের (কালমেঘা, চিংড়াখালী, গোবিন্দপুর, জয়নগর, বাদঘাটা, বড়কুপোট,হাওলভাঙ্গি, মথুরাপুর, ধল, হরিনগর, সিংহরতলী ও কেওড়াতলী) ৮২টি পরিবারের মাঝে সহায়তা করা হয়।

happy wheels 2

Comments