নিজ উদ্যোগে দুই কিলোমিটার রাস্তায় বৃক্ষ রোপণ করলেন তরুণরা

অসীম কুমার সরকার, (রাজশাহী) তানোর থেকে

‘এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়।’ কবির সেই চিরায়িত কথাটিই যেন মনে করিয়ে দেয় তানোর পৌর এলাকার গোকুল-মথুরা গ্রামের একদল যুবকদের উদ্যম আর উদ্দীপনা দেখে। ইতিমধ্যে এই যুবকরা মিলে দাঁড় করিয়েছেন একটি সামাজিক সংগঠন ‘স্বপ্নচারী’। photo-1 (1)বছর খানেক আগে মাত্র তিনজন যুবক মিলে এই সংগঠনটি পথচলা শুরু হলেও এখন পরিধি বেড়েছে অনেক দূর। বর্তমানে তিন গ্রামের সদস্য নিয়ে এখন যুব সংগঠনটির সদস্য সংখ্যা ৪৫জন। শিশু বিকাশ কেন্দ্র, হতদরিদ্র শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে পাঠদান (৩য়, ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণি), আইন সহায়তা কেন্দ্র, বৃক্ষ রোপণ, জ্বালানি, পানি সাশ্রয় কর্মশালা, অচাষকৃত শাক সবজির গুণগত ও স্বাস্থ্যগত বিভিন্ন দিক, পরিবেশবান্ধব চুলা তৈরি ও ব্যবহারসহ বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজে  যুব সংগঠনটি বিশেষ ভূমিকা রেখে চলছে।

তাদের এই সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজের ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি গোকুল-মথুরা গ্রাম থেকে (রাজশাহী-নওগাঁ মেন) সড়ক পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার পাকা রাস্তার দু’ধারে নিম, বট, পাইকোড়, বহড়া, হরিতিকি বৃক্ষ রোপণ করেন তারা। তাদের এই কাজের প্রত্যক্ষ স্বাক্ষী হিসেবে এসময় হাজির ছিলেন উপস্থিত ছিলেন তানোর পৌরসভা মেয়র মো. মিজানুর রহমান মিজান, গোকুল-মথুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নাজমুল ইসলাম, সমাজ সেবক আলহাজ্ব রফিকুল ইসলাম, মো. লতিফ সরদার, অবসর প্রাপ্ত সার্জেন্ট মো. আলাল উদ্দীন, যুব সংগঠনের সভাপতি মো. রুবেল হোসেন মিন্টু, সহ-সভাপতি মো. সাফিউল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মো. মিলন পারভেজ, ‘বারসিক’র গবেষক সহযোগী অমৃত কুমার সরকার, মো. শহিদুল ইসলাম শহিদসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ।

photo-2 (1)
যে কাজটি করার কথা ছিল পৌরসভার সে কাজটি করলো গোকুল-মথুরা গ্রামের কিছু যুবক। এর আগেও এই দুই কিলোমিটার রাস্তা দু’পাশে মাটি দিয়ে ভরাট করেছে তারা। যাতে রাস্তা ভেঙে না যায়। গোকুল-মথুরা ঈদগাহে বিনাশ্রমে গ্রামের মানুষদের সঙ্গে নিয়ে মাটি উত্তোলন, নিজ উদ্দ্যোগে  যুবকরা মিলে গোকুল-মথুরা গ্রামে পৌরসভার ড্রেন পরিস্কার, মাদক ও বাল্যবিবাহ বন্ধে প্রতিটি বাড়ি গিয়ে পরামর্শ ও বিভিন্ন আইনি সহায়তা প্রদানসহ নানাবিধ সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন।

এ নিয়ে ‘স্বপ্নচারী’ যুব সংগঠনের সভাপতি মো. রুবেল হোসেন মিন্টু বলেন, ‘আমরা গোকুল-মথুরা গ্রামকে বাল্য বিবাহমুক্ত ঘোষণা করেছি। সে লক্ষ্যে কাজ করছি। বৃক্ষরোপণ, আইন সহায়তাসহ বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজ আমরা গ্রামের যুবকরা মিলে করি এবং ভবিষ্যতে শিক্ষা, সংস্কৃতিতে তানোর উপজেলার মডেল গ্রাম হিসেবে গোকুল-মথুরাকে দাঁড় করানোই আমাদের লক্ষ্য।’

নিজ গ্রামের যুবকদের এমন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড নিয়ে বারসিক বরেন্দ্র অঞ্চল প্রতিনিধি গবেষক শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘নিজেদের প্রয়োজনীয় কাজ তারা নিজেরাই করছে অন্যের উপর ভরসা না করে। এটা যেমন একটা চমৎকার দিক। তেমনি তাদের এমন কর্মকান্ড দেখে পাশ্ববর্তী গ্রামের যুবকরাও অনুপ্রাণিত হবে। আর এইভাবেই প্রতিটি গ্রামে যদি এমন যুব সংগঠন থাকে তাহলে পরিবেশবান্ধব গ্রাম উন্নয়নে আমরা সাফল্য অর্জন করবো।’

happy wheels 2

Comments