কীটনাশক ব্যবহার না করেও জৈব উপায়ে পোকামাকড় দমন করা যায়

সিংগাইর থেকে অনন্যা আক্তার ও সন্জিতা কিত্তুনীয়া,
বারসিক’র উদ্যোগে সম্প্রতি মানিকগঞ্জে জৈববালাই নিবারক বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রশিক্ষণে কর্মএলাকার ১৮ (৪ জন নারী ১৬ জন পুরুষ) জন কৃষক-কৃষাণিসহ উক্ত উপস্থিত ছিলেন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা কাজী ফেরদৌস, বারসিক কর্মকর্তা শিমুল বিশ্বাস ও মাসুদুর রহমান প্রমুখ।


প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মাসুদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে কৃষি কাজ অনেক আধুনিক হয়েছে। এতে আমাদের যতটা সুবিধা হচ্ছে তার দ্বিগুণ হচ্ছে ক্ষতি। দিন দিন আমরা বাজার নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি, এতে আমাদের উৎপাদন খরচ ও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে যদি আমরা বাড়িতে বীজ রাখি, সার তৈরী করি তাহলে আমাদের উৎপাদন খরচ কমে যাবে এবং আমাদের ফসল হবে নিরাপদ।’ পরবর্তীতে মাসুদুর রহমানের নেতৃত্বে নয়াবাড়ী কৃষক কৃষাণী সংগঠনেরসহ সভাপতি কৃষক ইব্রাহীম মিয়া হাতে কলমে ১০ লিটার পানিতে ১০০ গ্রাম তুতে এবং ১০০ গ্রাম পাথর চুন দিয়ে বোর্দো মিক্স্রার এবং জৈব বালাইনাশক (উপাদান নেপথলিন ১২টি, গুল ৪কৌটা, ৫লিটার পানি) তরীও ব্যবহারের বিভিন্ন দিক শেখানো হয়।


কৃষি উপসহকারী কর্মকর্তা ফেরদৌস বলেন, ‘কীটনাশকের ব্যবহার না করেও আমরা পোকা দমন করতে পারি যেমন, বর্তমানে পোকা দমনে ফেরোমন ফাঁদ একটি নিরাপদ অবিষাক্ত ও পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি বা কৈৗশল, এতে মাটির গুণগত মান ঠিক থাকবে, পরিবেশের কোন ক্ষতি হবে না।’


প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করে স্বরুপপুর গ্রামের কৃষাণী নমিতা রানী বলেন, ‘আমার খুব ভালো লেগেছে এবং আমি খুব উপকৃত হয়েছি। আমি জৈব বালাইনাশক দিয়ে সবজি উৎপাদন করবো ও গ্রামের অন্য কৃষকদের এটা তৈরীতে পরামর্শ দিব।’ কাশিমপুর গ্রামের কৃষক দিলীপ সরকার বলেন, ‘প্রশিক্ষণ মানেই নতুন কিছু শেখা। এই প্রশিক্ষণ আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে, এখন থেকে আমি বড়িতে জৈব বালাইনাশক তৈরি করবো। এতে সুস্থ থাকবে আমাদের পরিবেশ এবং ফসল হবে নিরাপদ।’ সানাইল গ্রামের কৃষক অর্জন বিশ^াস বলেন, ‘আমরা যদি জৈব উপায়ে ফসল উৎপাদন করি তাহলে আমাদের ফসলের পাশাপাশি মাটিও ভালো থাকবে।’ নয়াবড়ী কৃষক কৃষাণী সংগঠনের সভাপতি ইমান আলী বলেন, ‘আমি বেশ কয়েক বছর যাবত বারসিক’র সঙ্গে রয়েছি, তারা আমাদের জৈব সার ও জৈব বালাইনাশক তৈরী ও ব্যবহার হাতে কলমে শিখিয়েছে। বর্তমানে আমি জৈব উপায়ে ফসল চাষ করি, বাড়িতে বীজ রাখি। এতে আমার উৎপাদন খরচ কম লাভ বেশি।’


এর আগে প্রশিক্ষণের শুরুতে শিমুল কুমার বিশ^াস কৃষকদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন এবং প্রশিক্ষণের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে তাদের সুস্পষ্ট ধারণা প্রদান করেন। তিনি বলেন, ‘বর্তমান কৃষির পুরোটাই বাজারনির্ভর। কৃষির উপকরণ ও প্রযুক্তি এখন আর কৃষকের নিয়ন্ত্রণে নাই। ফলে একদিকে কৃষিতে বাড়ছে উৎপাদন খরচ, অন্যদিকে বাজার নির্ভর তথা আধুনিক বা রাসয়নিক কৃষির মাধ্যমে উৎপাদিত পণ্যে গুণগত মান নষ্ট হচ্ছে।’

happy wheels 2

Comments