মৌমাছি রক্ষায় আসুন কীটনাশক পরিহার করি

ঘিওর, মানিকগঞ্জ থেকে সুবীর কুমার সরকার
প্রাণ-প্রকৃতি ও পরিবেশকে সুরক্ষিত এবং বিশ্বের সব ধরনের প্রাণ ও উদ্ভিদ সম্পদ রক্ষায় জনসচেতনতা গডতে হবে। এটা বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, প্রাণী ও উদ্ভিদ আমাদের পরিবেশ ও প্রতিবেশকে অনবরত সুরক্ষা করে গেছে। আমাদের অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক, শিক্ষা এবং বিজ্ঞানভিত্তিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রাণী ও উদ্ভিদ অবদান রেখে চলেছে। মূলত প্রাণী ও উদ্ভিদের কল্যাণেই মানবজাতি আজও ভালো আছে, উন্নতি হচ্ছে এবং সভ্যতার অগ্রগতি হয়েছে। তাই এসব প্রাণী ও উদ্ভিদকে বাঁচিয়ে রাখা এবং সংরক্ষণ করা আমাদের সবার দায়িত্ব।


আমরা জানি, আমাদের দেশের এক বিরাট জনগোষ্ঠী প্রাকৃতিক পরিবেশের নানা উপাদানের ওপর নির্ভরশীল। এসব জনগোষ্ঠী প্রাকৃতিক সম্পদের নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করে। তারা নির্ভর করেন নদ-নদীর উপর, পশু পাখির উপর,কীটপতঙ্গ ও পোঁকামাকড়ের উপর, গাছের উপর এবং তারা নির্ভর করছেন ফলমূল, শাকসবজির। কিন্তু ক্রমবর্ধমান অতিরিক্ত জনসংখ্যার ফলে দিন দিন মানুষ অধিক হারে প্রাকৃতিক উপাদান আহরণ করছে। ফলে এসব প্রাকৃতিক পরিবেশে টিকে থাকা প্রাণীরা খাদ্যের সংকটে পড়ছে। আমরা জানি যে, একটি মৌমাছির প্রধান চাহিদা উপযুক্ত ফুল ও পর্যাপ্ত খাদ্য। মৌমাছিদের ফুলের অভাবে বাসস্থান ও খাদ্যর সংকটে পড়তে হচ্ছে। দিনে দিনে মৌমাছিদের পরিবার সংকুচিত হচ্ছে, অনেকের বাসস্থান কোনো রকমে টিকে থাকলেও অবক্ষয় হয়েছে মারাত্মকভাবে। খাদ্যের জোগান হ্রাস পাচ্ছে কারও কারও। অন্যদিকে ফসলে কীটনাশক ব্যাবহারে মৌমাছি সহ কীটপতঙ্গর ক্ষতি হচ্ছে।


মৌমাছি আর ফুলের সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে ঘিওর উপজেলার নালী, বানিয়াজুরী, বালিয়াখোড়া, পয়লা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের কৃষকরা সরিষা, কালিজিরা, তিলসহ যে সব ফুলে মৌমাছি বসে সেই ধরনের ফসলের চাষের পরিমাণ বৃদ্ধি করছে। গাংডুবী কৃষক সংগঠনের সভাপতি প্রফুল্ল কুমার মন্ডল (৬৮) বলেন, ‘মৌমাছি ফসলে পরাগায়ন ঘটায় তাই মৌমাছি যাতে টিকে থাকে তার জন্য আমাদের সকলের কীটনাশক ব্যবহার কমাতে হবে। আর মৌমাছি যে সব গাছে চাক বানায় যেমন হিজল, কড়ই, বাবলা, বৈন্না, গাব, ডুমরা, তেতুঁল সেই ধরনের গাছ ধংস না করে যাতে টিকে থাকে তার ব্যবস্থা করতে হবে।’


উল্লেখ্য যে, বারসিক একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠন হিসেবে প্রতিষ্ঠাকাল থেকে প্রাণ, প্রকৃতি ও পরিবেশ সুরক্ষায় কাজ করে আসছে। সংগঠনটি কর্মএলাকার জনগোষ্ঠীর মাঝে উদ্ভিদের গুরুত্ব এবং পরিবেশ সুরক্ষায় তাদের সম্পৃক্ত করে নানান কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। বারসিক মনে করে উদ্ভিদ ও প্রাণীর মধ্যে একটি আন্তঃনির্ভরশীল সম্পর্ক রয়েছে। এ সম্পর্ককে বাঁচিয়ে রাখতে ও শক্তিশালী করতে হলে শুধুমাত্র একক প্রজাতির উদ্ভিদ চাষসহ নানান পরিবেশ বিনাশী কর্মকান্ড পরিহার করতে হবে। পরিবেশ রক্ষায় সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করতে হবে। পরিবেশ ব্যবস্থাপনায় তাদের অভিজ্ঞতা, দক্ষতা এবং লোকায়ত জ্ঞানকে গুরুত্ব দিতে হবে।

happy wheels 2

Comments