বারসিক নারী সেলের ত্রৈমাসিক সভা অনুষ্ঠিত

মানিকগঞ্জ থেকে রাশেদা আক্তার

বারসিক নারী সেল মানিকগঞ্জ এর ত্রৈমাসিক সভা নারী সেলের আহবায়ক রাশেদা আক্তারের সভাপতিত্বে বারসিক কার্যালয়, মানিকগঞ্জ এ অনুষ্ঠিত হয়েছে সম্প্রতি। নারীদের সক্ষমতা তৈরির মাধ্যমে কাজের গতিশীলতা বৃদ্ধি করে জেন্ডার সমতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে করণীয় বিষয়ে এই সভার আয়োজন করা হয়।

সভার শুরুতেই বারসিক’র আঞ্চলিক সমন্বয়কারী বিমল রায় ভিডিও ডকুমেন্টরী প্রদর্শন করেন। যেখানে দেখানো হয় একজন নারী কীভাবে অন্য নারীদের সম্পৃক্ত করে একটি নতুন সমাজ গঠন করে। যে সমাজে নারীরা তাদের পছন্দমত ঘর, বাড়ি তৈরি করে। বিভিন্ন ধরণের গয়না ও জিনিসপত্র তৈরি করে। নিজেরা বিভিন্ন ধরণের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের সাথে যুক্ত হয়। নারীরা ব্যবসা করতে শুরু করে। নারীদের একত্রিত করে ঐক্য গড়ে তোলে। নিজেদের মত করে একটি সমাজ তৈরি করে যেখানে নারীরাই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। নারীর ক্ষমতায়ন বৃদ্ধিতে বিভিন্ন ধরণের উদ্যোগ গ্রহণ করে।

এরপর বারসিক নারী সেল গঠনের পর যে ত্রৈমাসিক কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছিল তার বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনা করা হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী বেগম রোকেয়ার প্রবন্ধ অবরোধবাসীনি সম্পর্কে সকলেই তাদের মতামত তুলে ধরেন। এরপর পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন ধরণের বৈষম্য বিবেচনা করে নারীরা সাধারণত: কি কি বিষয় অন্যকে জানাতে পারেনা, কেন পারে না, না পারতে কি কি বাঁধা আছে, কাদের বাধা আছে এবং করণীয় কি? ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে লিখতে বলা হয়। সকলের আলোচনা থেকে যে বিষয়গুলো উঠে আসে তাহলো- পিরিয়ড বিষয়ক কথাবার্তা- পূজা অর্চনা, যানবাহনে চলাচলকালীন সমস্যা, রাস্তাঘাটে ইভটিজিং, পোশাকের ক্ষেত্রে নিজের পছন্দ-অপছন্দের কথা, ব্যক্তিগত সমস্যা, মানসিক সমস্যা, মানসিক নির্যাতন, শারীরিক মেয়েলী সমস্যা, সামাজিক সমস্যা, পারিপাশির্^ক সমস্যা, নিজের ভাল রাগা, মন্দ লাগা, অনেক সময় মনের কথা কেউ বুঝতে পারেনা তাই অনীহা চলে আসে ইত্যাদি সমস্যাগুলো তুলে ধরা হয়।
নারীরা কেন এধরণের কথা কাউকে বলতে পারে না তার কারণ হিসেবে সামাজিক প্রথা, রীতি-নীতি, পারিবারিক বাঁধা, পারিপাশির্^ক অবস্থা, নিজস্ব সক্ষমতার ঘাটতি, লজ্জ্বাবোধ, অন্যের প্রতিহিংসার শিকার হওয়ার ভয়, সংশয়, দ্বিধাদ্বন্দ্ব, সাহসের অভাব, কে কীভাবে নিবে, কাছের মানুষের অভাব, সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি, ধারণার অভাব, বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাব না থাকা, হীনমন্যতা, আমিই খারাপ এমন ধারণা তৈরি হবে ইত্যাদি বিষয়কে চিহ্নিত করা হয়।

এসব সমস্যা বা বাঁধা কাটিয়ে উঠার ক্ষেত্রে নিজের সক্ষমতা তৈরি করা, অন্যায় মেনে না নেওয়ার মানসিকতা তৈরি করা, আত্মশক্তি বাড়ানো, সাহসী হওয়া, মানসিকতার পরিবর্তন করা, জবাবদিহিতার সক্ষমতা তৈরি করা, তথ্য সমৃদ্ধ হওয়া, হিংসার প্রবণতা কমিয়ে আনা, না বলার সক্ষমতা তৈরি, জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধি করা, উপস্থাপনার কৌশল জানা, জেন্ডার বৈষম্য দূর করা, সম্পর্কের উন্নয়ন করা, সর্বপরি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করা প্রয়োজন বলে মনে করেন।
এরপর বারসিক নারীবান্ধব কি ধরণের কাজ করে সে বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। আলোচনা শেষে বারসিক নারী সেল আগামী তিন মাসে কী ধরণের কাজ করবে তার একটি পরিকল্পনা তৈরি করা হয়। পরিকল্পনায় বেগম রোকেয়ার সুলতার স্বপ্ন উপন্যাস পড়া, যানবাহনে যৌন হয়রানী প্রতিরোধে ১০০টি স্টিকার তৈরি করে হ্যালোবাইক ও টেম্পুতে লাগানো, মানিকগঞ্জ সদর ও সিংগাইর উপজেলার ২টি উচ্চ বিদ্যালয়ে টয়লেট নারীবান্ধব ও ব্যবহার উপযোগী করা বিষয়ে শিক্ষকদের সাথে আলোচনা করে বিষয়টি চলমান রাখা, অভিজ্ঞতা বিনিময় সফর করা নারী ও কিশোরী সংগঠনে, বারসিক নারী সেল নামে ফেসবুক আইডি ও গ্রুপ খোলা।

নারীদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করে তাদের কাজকে গতিশীল করতে হলে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের যে বৈষম্য এবং বাধা আছে দূর করতে হবে। আর এই বৈষম্য এবং বাধা দূর করতে নারীদেরই এগিয়ে আসতে হবে। তাদের না বলার সক্ষমতা তৈরি করতে হবে। নারীকে নারী হিসেবে নয়, মানুষ হিসেবে দেখার মানসিকতা তৈরি করতে হবে। সর্বোপরি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করতে হবে।

happy wheels 2

Comments