কল্যাণপুরের বাঁশের সাঁকো সংস্কারে যুবদের উদ্যোগ

সাতক্ষীরা, শ্যামনগর থেকে বিশ্বজিৎ মন্ডল
সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার শ্যামনগর সদর ইউনিয়নের কল্যানপুর ও কালমেঘা গ্রাম সংলগ্ন কল্যাণপুর খালের উপর নির্মিত বাঁশের সাঁকোটি বেশ কিছুদিন ধরে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। বিগত সময়ে স্থানীয় জনগোষ্ঠী ও যুবরা মিলে বেশ কয়েকবার সংস্কার করেছেন। সর্বশেষ সংস্কার হয় ২০১৮ সালে পাশ^বর্তী যাদবপুর গ্রামের আগ্রহী কয়েকজন যুব এবং কালমেঘা কৃষক সংগঠনের সহায়তায়। বর্তমান সময়ে এখান দিয়ে যাতায়াত করা খুবই কষ্টকর হয়ে পড়ছে এলাকাবাসীদের জন্য। বর্তমান যে বর্ষা মৌসুম এই সময়ে পারাপার খুবি ঝুকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বর্ষা শুরুর আগে থেকে স্থানীয় জনগোষ্ঠী বেশ কয়েকবার স্থানীয় সরকারের সাথে যোগাযোগ করেও কোন সুফল আসেনি।


এই সাঁকোটি দিয়ে উপজেলার কালমেঘা, কল্যাণপুর, সৈয়দালিপুর, সোয়ালিয়া, যাদবপুর, রামজীনপুর ও চিংড়াখালী গ্রামের মানুষের যাতায়াতের অন্যতম একটি পথ। এছাড়াও চিংড়াখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীসহ কল্যাণপুর গ্রামের নারীদের কালমেঘা গ্রাম থেকে পানি সংগ্রহ এবং কালমেঘা, যাদবপুর, কল্যাণপুর চিংড়ি চাষীদের দিন রাতের চিংড়ি ঘেরে যাতায়াতসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে এই সাঁকোটি ব্যবহার হয়।


সম্প্রতি সাকোঁটি সংস্কারের জন্য কোন উপায় না পেয়ে কল্যাণপুর ও কালমেঘা গ্রামের স্থানীয় জনগোষ্টী সাঁেকাটি সংস্কারের জন্য যাদবপুর গ্রামের যুব টিমের সাথে যোগাযোগ করেন। যুব টিমের নিকট পূর্বের ন্যায় সাঁকোটি সংস্কারের জন্য সহায়তা চান স্থানীয়রা। বিষয়টি নিয়ে স্বেচ্ছাসেবক যুব টিমের যাদবপুর ইউনিটের সভাপতি শেখ কামরুজ্জামান সাঁকোটি সংস্কার নিয়ে স্থানীয়দের সাথে আলোচনা করেন এবং স্থানীয়রা তারা কিভাবে সহায়তা করতে পারেন তা জানার চেষ্টা করেন। সেখানে স্থানীয় জনগোষ্ঠী নিজেদের থেকে কিছু বাঁশ ক্রয় করার কথা জানান এবং যুবরা বাকিটা বারসিকের নিকট থেকে সংগ্রহ করে দেওয়ার কথা জানান। সাথে যুব টিম স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে সংস্কার করে দেওয়ার কথা বলেন।


এরপর আগস্ট ২০২২ মাসে যুবদের গৃহীত উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য তাদের চাহিদা অনুযায়ী সাঁকোটি সংস্কারের জন্য বারসিক থেকে উপকরণ (বাঁশ ও সুতা) সহায়তা করা হয়। পরে সেগুলো এবং স্থানীয় জনগোষ্টীর সংগৃহীত উপকরণ দিয়ে যাবদপুর গ্রামের যুবরা স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে সাথে নিয়ে কল্যাণপুর গ্রামের বাঁশের সাঁকোটি সংস্কার করে দেয়।


এ বিষয়ে যুব টিমের সভাপতি শেখ কামরুজ্জামান বলেন, ‘আমরা যুবরা এলাকার উন্নয়নের জন্য নানান ধরনের কাজ করে থাকি। এলাকার মানুষের কোন সমস্যা হলে সেটি সমাধানের জন্য আমরা যুবরা এগিয়ে আসি। বিগত সময়েও আমরা এই সাঁকোটি সংস্কার করেছিলাম। পুনরায় আবারও এটি আমরা বারসিক’র সহায়তায় সংস্কার করেছি। এলাকার মানুসের যে একটা সমস্যা সমাধান করতে পেরেছি এটা আমাদের যুবদের কাছে অনেক বড় পাওয়া।’


কল্যাণপুর গ্রামের স্থানীয় মুজিবর রহমান, গৌরপদরা জানান যে, ‘সাঁকোটি সংস্কার হওয়াতে আমাদের বড় উপকার হলো। না হলে বর্ষার সময়ে আমাদের নানান ভোগান্তি পোহাতে হতো। বিশেষ করে পানি সংগ্রহ এবং ছেলে মেয়েদের স্কুলে আসা যাওয়া। যেখানে স্থানীয়ভাবে কোন সহায়তা পেলাম না সেখানে যুবরা যে এগিয়ে এসেছে এটা আমাদের জন্য খুবই ভালো। যুবরা যদি এভাগে এগিয়ে যায় তাহলে তো আমাদের উন্নয়ন হবেই।’

happy wheels 2

Comments