লোকসঙ্গীতকে বিশ্ব দরবারে পৌঁছাতে চান মানিকগঞ্জের লোকসঙ্গীত শিল্পী সিদ্দিকুর রহমান

আব্দুর রাজ্জাক, মানিকগঞ্জ থেকে  

মানিকগঞ্জের সংস্কৃৃতিতাঙ্গনে সিদ্দিকুরের নাম এখন মুখে মুখে। সুরেলা কন্ঠে-নিজস্ব ভঙ্গিমায় গান পরিবেশন আর লোকসঙ্গীত শিল্পীদের জীবনমান উন্নয়নে নিজের কর্ম প্রতিভায় হয়ে উঠেছেন দেশের লোকসঙ্গীত শিল্পীর উজ্জল নক্ষত্রদের একজন। লোকগানের তীর্থস্থান বলে খ্যাত মানিকগঞ্জের আউল বাউলদের গান শুনে শুনেই গানের প্রতি আগ্রহ জন্মেছিল তাঁর। সঙ্গীত সাধনায় মন বেঁধেছেন শিশুকালে। শৈশব থেকেই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান গেয়ে গেয়ে এসেছেন এ পর্যন্ত। সুনাম ও যশ কুড়িয়েছেন প্রচুর। পারিবারিক সাঙ্গীতিক আবহে তার বেড়ে ওঠা।  শৈশব ও কৈশোরে গান গাওয়ার অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন প্রথমে তাঁর বাবা ও ভাইয়েরা।

সিদ্দিকুর রহমান ১৯৭৮ সালের ৪ঠা ফেব্রুয়ারি মানিকগঞ্জের বাগজান গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। সাত সন্তানের জনক মরহুম ইব্রাহীম ও মাতা ফুলজান বেগমের ৫ম সন্তান সিদ্দিক। পল্লী গীতি, ভাটিয়ালি, দেহতত্ত্ব, মুর্শিদি, ইসলামি ইত্যাদি গানের শিল্পী হিসেবে তার খ্যাতি নিজ জেলা-দেশের সীমানা পেরিয়ে অসংখ্য দর্শক-শ্রোতার মন জয় করেছেন তিনি।

siddikur
মানিকগঞ্জ শিল্পকলা একাডেমীর ওস্তাদ কালিপদ ভৌমিকের কাছে তাঁর আনুষ্ঠানিক গানের প্রথম হাতেখড়ি। ছোটকালে মানিকগঞ্জের কালুশাহ একাডেমীসহ বিভিন্ন সঙ্গীত একাডেমীতে তিনি গান শিখেছেন। তারপর সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। এরপর সরকারি সঙ্গীত কলেজ, ঢাকা থেকে লোকসঙ্গীত বিষয়ে কৃতিত্বের সাথে বি.মিউজ ও এম.মিউজ ডিগ্রীতে লাভ করেন প্রথম স্থান। ২০০৫ সালে সিদ্দিকুর রহমান বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রিয়েলিটি শো ক্লোজ আপ ওয়ানে অংশগ্রহণ করেন ও ২০তম স্থান দখল করেছিলেন। ২০০৬ সালে তিনি মানিকগঞ্জের সেরা মানিকগঞ্জের মানিকদের একজন নির্বাচিত হন। নিজের লেখা গানে নিজের সুরে উপস্থাপন দক্ষতা শ্রোতাদের মনে যোগ করেছেন সংগীত উপভোগের ভিন্ন মাত্রা।

বাংলা লোকসঙ্গীতকে বিশ্বের দরবারে পৌঁছানোর লক্ষ্যে বিভিন্ন দেশের বড় বড় লোকসঙ্গীত উৎসবে সঙ্গীত পরিবেশন করে ব্যাপক প্রশংসিত হন তিনি। সিদ্দিকুর রহমান বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের একজন তালিকাভূক্ত শিল্পী হিসেবে এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে নিয়মিত সঙ্গীত পরিবেশন করছেন। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন এলাকার আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা লোকসঙ্গীত সংগ্রহ করেন তিনি, তুলে ধরেন হাজারো দর্শক শ্রোতাদের সামনে। এছাড়াও অবহেলায় পড়ে থাকা প্রতিভাবান লোকসঙ্গীত শিল্পীদের জীবনমান উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। গানের অবসরেই ছুটে যান দেশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত।

সিদ্দিকুর রহমান নেপাল ও ভারতের বিভিন্ন স্থানে পারফর্ম করে প্রশংসা কুড়িয়েছেন। তিনি বেশকিছু সম্মাননায়ও অভিষিক্ত হয়েছেন। ২০০৪ সালে লোক সংগীতে দেশ সেরা হয়ে পান বঙ্গবন্ধু গোল্ড এ্যাওয়ার্ড। ব্যক্তি জীবনে অত্যন্ত মিশুক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, “আমি গান করি গণ মানুষের। বেছে নিয়েছি তাই লোকসঙ্গীতকে। গণমানুষের ভালোবাসার চেয়ে বড় পুরস্কার আর কিছু নেই।”

বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে অগোচরে থাকা লোকসঙ্গীতকে তিনি বিশ্ব সঙ্গীতায়নে তুলে ধরার লক্ষ্যে আমরণ কাজ করে যাবেন বলে তিনি অঙ্গিকার করেন।

happy wheels 2