বিলুপ্তির পথে হাওয়ার মিঠাই

মানিকগঞ্জ থেকে আব্দুর রাজ্জাক ॥

হাওয়ার মিঠাই! শিশুদের মন ভোলানো পছন্দের অন্যতম খাবার। মুখে দিলে নিমিষেই হাওয়ার মতো মিলিয়ে যায়। এক সময় গ্রামে গ্রামে হাঁক ডেকে বিক্রি করতো হাওয়াই মিঠাই ফেরিওয়ালারা। তবে বড়দের পছন্দের খাবারের তালিকায়ও জায়গা রয়েছে বাহারি রঙয়ের, হরেক আকৃতির হাওয়ার মিঠাইয়ের।
Manikgonj 01
কালের পরিক্রমায় এখন তা প্রায় বিলুপ্তির পথে। দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে হাওয়াই মিঠাইয়ের ফেরিওয়ালাদের সংখ্যা। কারণ বর্তমান সময়ে প্রযুক্তি এখন হাতের মুঠোয়। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় এখন মানুষের দ্বোরগোড়ায় হাজারো নামি-দামি খাবার। আবার অস্বাস্থ্যকর ও নিম্নমানের খাদ্য হিসেবে গণ্য করে তা শিশুদের খেতে দেন না অনেক অভিভাবক। তাই পরবর্তী প্রজন্মকে এ পেশায় দিক্ষীত করতে চান না হাওয়ার মিঠাইওয়ালারা।

বিশেষ প্রক্রিয়ায় চিনিকে তাপ দিয়ে বিশেষ মেশিনে হাত দিয়ে ঘুরিয়ে হাওয়ায় মিঠাই তৈরি করা হয়। সাদা ও গোলাপি দু’ধরনের হাওয়ায় মিঠাই হয়ে থাকে। গ্রামে ভ্যানের উপর হাওয়ায় মিঠাই তৈরির সরঞ্জাম নিয়ে হাওয়ায় মিঠাই তৈরি করতে দেখা যায়। কাঁচ দিয়ে ঘেরা বাক্সে ছোট ছোট গোলাকার এবং বড় আকারে হাওয়াই মিঠাই পলিথিনে মুড়িয়ে বাঁশের সাথে বেঁধে ফেরিওয়ালারা বিক্রি করেন।

মানিকগঞ্জের বালিরটেক এলাকার জব্বার মৃধা। প্রায় এক যুগ ধরে হাওয়াই মিঠাই তৈরি ও বিক্রির পেশার সাথে জড়িত। এ কাজ করেই তার ৬ সদস্যের জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। তিনি বলেন, “হাওয়াই মিঠাই এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। তবে বংশপরম্পরায় ধরে রাখতে এ ব্যবসা চালিয়ে আসছি।” পরবর্তী প্রজন্ম এ পেশায় আসবে কিনা এমন প্রশ্নে জব্বারের সোজাসাপটা উত্তর, “যত দিন পারবো এ ব্যবসা  আমি চালিয়ে যাবো তবে আমার সন্তানদের এ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত করবো না।” কারণ হিসেবে তিনি মনে করেন, “এ পেশার লোকজনদের মানুষ সম্মানের চোখে দেখে না; এছাড়াও এ পেশার ভবিষ্যৎ নেই বললেই চলে।”

হাওয়ার মিঠাইওয়ালা দৌলতপুরের আয়নাল মিয়া জানান, একেকটি হাওয়াই মিঠাই তৈরি করতে ২৫ গ্রাম চিনি খরচ হয়। চিনিসহ অন্যান্য খরচ বাবদ প্রায় পাঁচ টাকার মতো হয়। আর বিক্রি হয় প্রতিটি দশ টাকা করে। হাওয়ার মিঠাই মূলত দু’ধরনের তৈরি করা হয়। সাদা এবং গোলাপি রঙের। গোলাপিটা তৈরিতে একটু বেশি খরচ হয়। এতে গোলাপি রঙ মেশানো হয়। তিনি আরো জানান, এক কেজি চিনি দিয়ে প্রায় ৪৫ থেকে ৫০ পিস হাওয়াই মিঠাই তৈরি করা যায়। হাওয়াই মিঠাই গ্রামের বিভিন্ন স্কুলের গেটে, ছোট বাজার এবং বিভিন্ন মেলায় গিয়ে বিক্রি করা হয়।Manikgonj 02

সম্প্রতি ঘিওর উপজেলার রাথুরা গ্রামে হাওয়াই মিঠাই কেনার সময় জয়া, লিজা, রিতু, জেবিন, তামিমসহ কয়েকজন শিশু বলেন, “হাওয়াই মিঠাই; মজাই আলাদা। এটি খেতে আমাদের খুব ভালো লাগে।”

ঘিওর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক রাম প্রসাদ সরকার দীপু বলেন, “একটা সময় গ্রাম-গঞ্জের রাস্তায় পিতলের ঘণ্টায় টুং টাং আওয়াজ হলেই বুঝা যেত হাওয়াই মিঠাই আসছে। ঘণ্টার আওয়াজ শুনে শিশুরা ছুটে যেত; পুরানো লোহা জাতীয় পদার্থ, প্লাস্টিক, পরিত্যক্ত ব্যাটারি, ছেড়া জুতা, হাঁস-মুরগির ফোঁড়ের বিনিময়ে মিলতো হাওয়াই মিঠাই। আর এখন কালেভদ্রে দেখা মিললেও লাগে নগদ টাকা।”

happy wheels 2