সুন্দরমন নিয়েই তারা আসেন সুন্দরবনে

গাজী আল ইমরান,শ্যামনগর,সাতক্ষীরা

প্রাকৃতির পানে মন টানে প্রাকৃতি প্রেমিকদের। প্রাকৃতি পূজারী মানুষগুলো প্রাকৃতির টানেই ঘুরতে যান দেশের বিভিন্ন স্থানে। বিশেষ করে শীতকালীন সময়ে বিভিন্ন স্থানে ঘুরতে বের হন পর্যটকরা, এটা যেন পর্যটকদের নাড়ির টান।একইভাবে সুন্দর মন নিয়েই সুন্দরবন উপভোগ করতে আসেন পর্যটকরা। পর্যটকদের মন পড়ে থাকে বনের ভিতরে। বছরের শীতকালীন সময়টা ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত হওয়ায় বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকরা আসেন সুন্দরবন দেখতে। সুন্দরবনের অপরূপ সৌন্দর্যের গভীরে ডুবে যান সুরঞ্জনারা। সুন্দরবন, পৃথিবীর একক সর্ব বৃহৎ ‘ম্যানগ্রোভ’ বা শ্বাসমূলীয় বন। নাম শুনলেই চোখের সামনে ভেসে আসে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের মূখ, ভাবতেই হিম ধরে শরীরে। তবু সুন্দরবন ভ্রমণের নেশাটা পিছু ছাড়ে না। কেবল জোয়ার ভাটার বৈচিত্র্যই নয়। সুন্দরবনের এক এক এলাকার বৈশিষ্ট্যও ভিন্নতর। তাই বার বার ভ্রমণেও তৃপ্তি মেটে না। প্রতিবারই নতুন অভিজ্ঞতা, পরিচয় হয় নতুন বৃক্ষ, মাছ আর পাখিদের সঙ্গে। সুন্দরী গাছের আচলে আটকে যায় চোখ। নানান ধরণের গাছের অপরূপ সৌন্দর্য্য ভরপুর এ মায়া ভরা বন। কোথাও এককভাবে আবার কোথাও মিশ্রভাবে গড়ে উঠেছে গেওয়া বন। গেওয়ার সৌন্দর্য আকৃষ্ট করে পর্যটকদের, ভ্রমণের সময় নদীর পাড়ের গেওয়ার অপূর্ব সমরোহে নয়ন জড়িয়ে যায় পর্যটকদের। যা মূলত জ্বালানি ও বাড়ির বেড়া হিসাবে ব্যবহার করা হয়।

IMG_9324
কিন্তু সে অভিজ্ঞতা নিতে বড় বাধা সময়, দূরত্ব এবং অর্থ। তবে এই বাধা দূর করে যারা এক দিনেই সুন্দরবন ভ্রমণের পূর্ণ স্বাদ নিতে চান তাদের জন্য একটি আদর্শ ভ্রমণ কেন্দ্র হতে পারে ‘কলাগাছিয়া ইকোট্যুরিজম কেন্দ্র’। দক্ষিণ অঞ্চল থেকে অল্প সময়ে কম খরচে সুন্দরবন ভ্রমণের স্বাদ নিতে হলে কলাগাছিয়া ইকো ট্যুরিজম সেন্টার শ্রেষ্ঠ। মুন্সিগঞ্জ থেকে নৌপথে এক ঘণ্টা ত্রিশ মিনিট এবং বুড়িগোয়ালিনী থেকে মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যেই ইঞ্জিনচালিত ছোট অথবা বড় নৌকায় চড়ে এখানে যাওয়া যায়। পাঁচতলা সমান উঁচু পর্যবেক্ষণ টাওয়ারের চূঁড়া থেকে পুরো সুন্দরবনের অনেকটা অংশ দেখার আনন্দ আপনাকে মুগ্ধ করবে। সেখান থেকে নেমে কাঠের তৈরি ট্রায়াল ধরে সোজা পথ এঁকে বেঁকে চলে গেছে বনের আরও গহীনে। কলাগাছিয়া ইকো ট্যুরিজম সেন্টার গিয়ে কাঠের তৈরি ট্রায়াল ধরে বনের মাঝে হাঁটতে হাঁটতে বানর, হরিণ, গুইসাপ ঘুরে বেড়ানোর দৃশ্য দেখা যাবে। হীরণ পয়েন্ট ছাড়াও টাইগার পয়েন্ট, বুড়িগোয়ালিনী, হারবাড়িয়া প্রভৃতি এলাকায় ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের দেখাও মিলে যেতে পারে।

অল্প সময়ের ভ্রমণের জন্য আকাশ নীলা ইকো ট্যুরিজম,উড়াল মোন ম্যানগ্রোভ ভিলেজ ও কারাম মুরা ম্যানগ্রোভ ভিলেজ ট্যুরিজম কেন্দ্র পর্যটন কেন্দ্রগুলোও রয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের সম্পূর্ণ তত্বাবধানে সুন্দরবনের একবারে কোল ঘেঁষে এবং চুনা নদীর পাড়ে মনোরম পরিবেশে গড়ে উঠেছে আকাশ নীলা ইকো ট্যুরিজম। মনোরম পরিবেশে গড়ে ওঠা এ পর্যটন কেন্দ্রটি মন কেড়েছে অসংখ্য পর্যটকের। ছুটির দিনে উপজেলার পর্যটকদের ব্যাপক আগমনে পরিপূর্ণ যৌবন ফিরে পায় আকাশনীলা ইকো ট্যুরিজম সেন্টার। রমজাননগর ইউনিয়নের কালিঞ্চি গ্রামে ধঝিখালি নদীর পাড়ে গড়ে উঠেছে কারাম মুরা ম্যানগ্রোভ ভিলেজ। এই স্থানটিতে আদিবাসী মুন্ডা সম্প্রাদায়ের বসবাস। মুন্ডা সম্প্রদায়ের নিজস্ব সংস্কৃতি, নাচ-গান আছে। IMG_20160707_171359এসব নাচ-গানের মাধ্যমে ট্যুরিস্টরা আনন্দ পেতে পারেন। ভিলেজটিতে ৯টি কোয়াটারসহ মোট ২৫ জন পর্যটকের আবাসিক ব্যবস্থা রয়েছে। ম্যানগ্রোভ ভিলেজটি থেকে সুন্দরবন পর্যবেক্ষণ করার জন্য রয়েছে উচু পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। এছাড়া ছবি তোলা ও ইলেকট্রোনিক্স উপায়ে সংরক্ষণের সুব্যবস্থা করেছে পর্যটন কতৃপক্ষ। কাটকা বিচ কাটকাতে ৪০ ফুট উচ্চ একটি টাওয়ার আছে যেখান থেকে সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করা যায়। একটি সুন্দর সমুদ্র সৈকত আছে এখানে। পর্যবেক্ষণ টাওয়ার থেকে ফেরার সময় হেঁটে বীচের সৌন্দর্য্য উপভোগ করা যায়। কাটকা থেকে কাচিখালী (বাঘের জায়গা) পর্যন্ত প্রচুর ঘাস জন্মে বলে অনেক জীবজন্তুর আনাগোনা রয়েছে। এখানে প্রচুর জীবজন্তও দেখা যায়।

দুবলার চর সুন্দরবনের অর্ন্তগত একটি ছোট্ট চর। এই চরের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে ছোট ছোট নদী; সেসব নদী মিশেছে বঙ্গোপসাগরে। দুবলার চর একটু ভেতরে অবস্থিত বিধায় কোনো দশনার্থী সহজে এই চরে প্রবেশ করতে পারে না। অন্যদিকে মান্দারবাড়িয়ার একদিকে সুন্দরবন অপরদিকে বঙ্গোপসাগরের মায়াবী জলরাশির অবিশ্রান্ত গর্জন যে কোন মানুষকেই দেবে অনির্বচনীয় আনন্দ। মান্দারবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত প্রকৃতির অপরূপা সুন্দরবন ও উত্তাল বঙ্গোপসাগরের এক রূপসী কন্যা, যা এখনও কিছুটা অনাবিস্কৃত এবং অস্পর্শিত। এখানে দাঁড়িয়ে দেখা যাবে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত। বুড়িগোয়ালিনীর নীলডুমুর থেকে মান্দারবাড়িয়া ৭৫/৮০ কিলোমিটার দুরে। সাতক্ষীরা থেকে বুড়িগোয়লিনির দুরত্ব ৭৫ কিলোমিটার। বুড়িগোয়ালিনির নীলডুমুর পর্যন্ত গাড়িতে যাওয়া যায়। তার পরের ৭৫/৮০ কিলোমিটার যেতে হবে ইঞ্জিন চালিত নৌকা বা স্পীড বোটে। এই ৭৫/৮০ কিলোমিটার পথের পুরাটাই সুন্দরবনের বুক চিরে যাওয়া বিভিন্ন নদী।

IMG_20160625_121045সুন্দরবনের সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলতে কোন অংশে কম নয় নদীগুলো। এগুলোর রূপের বর্ণনা একেবারে না করলেই নয়। সুন্দরবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের বড় নদীগুলোর একটি খোলপেটুয়া। গঙ্গার স্রোতধারাই পদ্মা হয়ে বয়ে গেছে এই নদীতে। সাতক্ষীরার আশাশুনি আর শ্যামনগর উপজেলাজুড়েই এই নদীর বিস্তৃতি। পদ্মপুকুর থেকে যে খোলপেটুয়া দক্ষিণ-পূর্বে গেছে সেথানে ইংরেজি ওয়াই আকৃতি নিয়েছে। নীলডুমুরের পূর্ব পাড়ে গাবুরা ইউনিয়ন আর দক্ষিণেই শুরু সুন্দরবন। নীলডুমুর, মুন্সিগঞ্জ, পদ্মপুকুর, গাবুরার মানুষের জীবনে অনেক গল্পই বইয়ে দিয়েছে এই খোলপেটুয়া। এ অঞ্চলের অনেকেরই প্রাণ দিতে হয়েছে এই নদীতে। আবার অধিকাংশ মানুষের জীবিকাও চলে এই নদীর ভর করে। পূর্ণিমায় যৌবন ভরা জোছনায় এক অপূর্ব রূপে সাজে এই নদী। মাছেরা ভেসে ওঠে আনন্দে। মোহনায় ধরা পড়ে প্রচুর মাছের পোনা। মুখে হাঁসি ফুটে ওঠে জেলেদের। এই নদীতে সারা বছর ধরেই কাঁকড়া পাওয়া যায়। সুন্দরবন ঘেঁসে জাল ফেললে মাছও অনেক। এ নদীগুলোর বুক চিরে ঘুরে বেড়ায় বেলে হাঁসের দল। বৈশাখ-জৈষ্ঠ্যের খোলপেটুয়ার বিধ্বংসী চেহারাকে অনেকটাই প্রতিরোধ করে সুন্দরবন। এ যেন ভাইয়ের প্রতি ভাইয়ের টান। দক্ষিণ থেকে আসা ঝড়কে আর উত্তরে যেতে দেয় না। পৌষে নদীর ওপর সকালের সূর্যটাকে লাল বর্ণের দেখায়। কুয়াশাকে ঠেলে রোদ ছড়াতে অনেক সময় নেয় সূর্য। সেই আলো অবশ্য খুব বেশি তাপ ছোড়ে না। নদীর ওপরের কুয়াশার সঙ্গে লুকোচুরি খেলতে থাকে সূর্য। খোলপেটুয়ার বাঁকে বাঁকে সূর্যের রূপ পরিবর্তন হতে থাকে। যত বেলা গড়াতে থাকে তত পরিষ্কার হতে থাকে চারপাশ। সকালের রোদকে আলিঙ্গন করে খোলপেটুয়া। সুন্দরবনের পাড় ধরে খোলপেটুয়ার বাঁক ধরে ঘুরতে থাকলে হরিণের দৌড়, লাফ দিয়ে গাছের পাতায় মুখ দেওয়া, বানরের বাঁদরামি আনে চঞ্চল ভাব। গাবুরা আর পদ্মপুকুরের বাসিন্দারা পাড়ি দেয় খোলপেটুয়া। নৌকা এসে ভেড়ে, আবার ঘাট থেকে ছেড়ে যায়। ব্যস্ত হয়ে ওঠে নদী। শীতে খুব বেশি ঢেউয়ের শব্দ শোনা যায় না। বরং ইঞ্জিনের মোটরের শব্দই ঘাটে বেশি।

IMG_20161225_121922
তবে সুন্দরবন পর্যটনে পর্যাপ্ত বনরক্ষী প্রয়োজন, পর্যটকরা যখন ট্যুরে যাই, তখন পর্যাপ্ত গার্ড থাকে না। গার্ড সংকট দেখা দেওয়ার কারণে পর্যটকরা সুন্দরবনের ভেতরে যেতে পারেন না। সুতরাং ফরেস্ট বিভাগে পর্যাপ্ত সংখ্যক গার্ড প্রয়োজন। তাছাড়া গহীন সুন্দরবন যেমন-হিরণ পয়েন্ট, নীল কমলসহ আরো কিছু স্থানে ভ্রমণ করতে গেলে কিছু সমাস্যার মুখে পড়তে হয় পর্যটকদের। সাতক্ষীরা অঞ্চলের মানুষকে সুন্দরবনে ঘোরার জন্য খুলনা থেকে অনুমতি নিয়ে আসতে হয়। এটা খুবই কষ্টদায়ক। দুই-তিন দিন ঘুরে পর্যটক হিসেবে মানুষ অনুমতি পায়। অনুমতি পেলেও বলা হয়, গার্ড প্রস্তুত নেই। এ প্রসঙ্গে গত ২৪ শে ডিসেম্বর শ্যামনগর উপজেলার মুিন্সগঞ্জ টাইগার পয়েন্টে এক আলোচনা সভায় পর্যটন কর্পরেশনের চেয়ারম্যান ড. অপরুপ চৌধুরী বলেন, “অতি শিঘ্রই এই সমাস্যা সমাধান করা হবে এবং পর্যটকরা যাতে মুন্সিগঞ্জ থেকেই গহীন বন ভ্রমণের অনুমতি নিতে পারে সে ব্যবস্থা করা হবে।” সাথে সাথে গার্ড পেতে যাতে কোন সমাস্যা না হয় সে বিষয়ে দূত পদক্ষেপ গ্রহণ করার আশ্বাস দেন তিনি। এ প্রসঙ্গে মুন্সিগঞ্জ বন টহল ফাড়ির ভারপ্রাপ্ত ইনচার্জ মনিরুল ইসলামের সাথে সাক্ষাতকালে, বলেন, “এ বিষয়ে এখনো কোন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়নি; প্রক্রিয়া চলমান তবে বুড়িগোয়ালিনি থেকে পাশ নেওয়া গেলে পর্যটকেরা স্বাচ্ছন্দে ঘোরাফেরা করতে পারবেন।” নিরাপত্তা বিষয়ে তিনি জানান, এখন নিরাপত্তা নিয়ে আর কোন সমাস্যা নেই। নিরাপত্তা গার্ড এবং ট্যুর গাইডের মাধ্যমে পর্যটকদের নিরাপত্তা সুন্দরবন ঘুরে দেখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পর্যটকদের আগমন বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “পর্যটকদের আগমন আগের থেকে অনেক বেড়েছে।” এ বিষয়ে কদমতলা স্টেশন কর্মকর্তা শ্যামপ্রসাদ বলেন, “রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকায় পর্যটকদের আগমন আগের চেয়ে অনেকাংশে বেড়েছে।” বিদেশি পর্যটকদের নিরাপত্তা বিষয়ে শ্যামনগর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বিদেশি পর্যটকদের জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক নিরাপত্তা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে, গার্ড হিসাবে একজন এস আই এবং দুই জন কনস্টেবল দিয়ে থাকি।

IMG_20161219_135722
সুন্দরবন ভ্রমণের ক্ষেত্রে ট্যুরিস্ট ভেসেল বা নৌযান ছাড়াও সুন্দরবনের অভয়ারণ্যে হিরণ পয়েন্টের নীলকমল এবং টাইগার পয়েন্টের কচিখালী ও কাটকায় বন বিভাগের রেস্ট হাউজে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। যার ফি নীলকমলে দেশি পর্যটকদের জন্য প্রতি কক্ষ তিন হাজার টাকা,চার কক্ষ ১২ হাজার টাকা। কচিখালী প্রতি কক্ষ তিন হাজার টাকা, চার কক্ষ ১০ হাজার টাকা। কটকা প্রতি কক্ষ দুই হাজার টাকা, দুই কক্ষ চার হাজার টাকা। বিদেশিদের ক্ষেত্রে নীলকমলে পাঁচ হাজার ও ২০ হাজার টাকা, কচিখালীতে পাঁচ হাজার ও ১৫ হাজার টাকা এবং কাটকায় পাঁচ হাজার ও ১০ হাজার টাকা। সুন্দরবনের পাশে সাতক্ষীরা শহরে সাধারণ মানের হোটেল ও শ্যামনগরের মুন্সিগঞ্জে সুশীলনের রেস্টহাউস, বরসা রিসোর্ট সেন্টার, আকাশ নীলা ইকো ট্যুরিজম সেন্টার (কাজ প্রায় শেষের পথে)ও ডরমেটরিতে, কারাম মুরা ম্যানগ্রোভ ভিলেজে একক, পরিবার ও গ্রুপ নিয়ে থাকার সুবিধা রয়েছে। এসমস্ত মানসম্পন্ন হোটেল ছাড়াও সাধারণ মানের হোটেলে সুন্দরবনে ভ্রমণকারীরা অবস্থান করে থাকেন।

happy wheels 2