প্রাণসায়ের খালে ফিরে আসুক নব প্রাণ

সাতক্ষীরা থেকে আসাদুল ইসলাম

এক সময়ের জোঁয়ার-ভাটা খেলা সাতক্ষীরা শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হওয়া প্রাণসায়ের খাল আজ প্রাণহীন একটি বর্জ্য স্তুপের নর্দমা। প্রাণহীন প্রাণসায়ের আজ শহরবাসীর জন্য দুঃখে পরিণত হয়েছে। খালের দু’ধারে দখল করে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠা এবং বাজার ও বসতবাড়ির বর্জ্য ফেলার কারণে এক সময়ের জোঁয়ার-ভাটা খেলা খালটি আজ অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। আর খালের পানি প্রবাহিত না হওয়ায় এবং বর্জ্যরে স্তুপের কারণে খালের পচাঁ পানি দূর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। ফলে আজ এই খাল শহরের পরিবেশ দূষণের জন্য অন্যতম কারণ।
News2
১৮৬৫ সালের দিকে জমিদার প্রাণনাথ রায় চৌধুরী সাতক্ষীরার ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারিত করার জন্য বেতনা ও মরিচাপ নদীকে সংযুক্ত করে সাতক্ষীরা শহরের মধ্য দিয়ে এই খাল খনন করেন। আর তখন থেকে এটি সাতক্ষীরার ব্যবসা-বাণিজ্যে বড় ভূমিকা রাখতে শুরু করে। সেই সময় থেকে এই খালে জোঁয়ার-ভাটা হতো। আর কলকাতা সহ বড় বড় শহর থেকে পাল তোলা নৌকা, স্টিমার চলতো এই খাল দিয়ে।

কিন্তু ১৯৯০ সালের দিকে বন্যা প্রতিহত করার নামে খালের দুই সংযোগ স্থল এল্লারচর ও খেজুরডাঙ্গী এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের অপরিকল্পিত ভাবে সুইজ গেট দেওয়ার ফলে খালের স্বাভাবিক জোঁয়ার-ভাটা বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে খুব দ্রুত প্রাণহীন হয়ে পড়ে সাতক্ষীরার প্রাণ হয়ে থাকা প্রাণসায়ের খাল। ফলে সাতক্ষীরা শহর যেমন পরিবেশ দূষণের হুমকির মুখে পড়ে, তেমনি ব্যবসা-বাণিজ্যে বিরুপ প্রভাব পড়ে।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এল্লারচর থেকে খেজুরডাঙ্গী পর্যন্ত প্রায় ১৩ কিলোমিটার খাল আজ শুধু নামে মাত্র খাল। এটি আজ নর্দমায় পরিণত হয়েছে। খালের মূল অংশ দখল হয়ে গেছে। বিশেষ করে সাতক্ষীরা শহরের মধ্যে থাকা প্রাণসায়ের খালের অবস্থা খুবই খারাপ। শহরের বড়বাজার থেকে নারকেলতলা পর্যন্ত প্রায় ২-৩ কিলোমিটার অংশটুকু পুরোটাই ময়লা-আবর্জনায় ভরা।
News4
খালের দুপাশে থাকা আবাসিক বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ময়লা-আবর্জনা ফেলা হয় এই খালের মধ্যে। শহরের বড়বাজার এলাকায় বাজারের ময়লা আবর্জনাও ফেলা হচ্ছে এখানে। বিশেষ করে মাছ ও মাংসের বাজারের পঁচা আবর্জনা এখানে ফেলা হচ্ছে। বড়বাজার ব্রীজের নিচে আবর্জনা ফেলতে ফেলতে উচ্চু স্তুপে পরিণত হয়েছে। এর ফলে নারকেল তলা থেকে বড়বাজার পর্যন্ত খালের দুপাশ দিয়ে দূর্গদ্ধে যাওয়া যায় না।

এছাড়া শহরের মধ্যে খালের দু’পাশে অবৈধ ভাবে দখল করে বিভিন্ন স্থাপনা ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। যার ফলে খাল দিন দিন অস্তিত্ব সংকটে পড়ছে। খালের দু’ধারে গড়ে ওঠা এসব অবৈধ স্থাপনা দিন দিন বেড়েই চলেছে। পাকাপুলের মোড় সংলগ্ন মুক্তিযোদ্ধা মার্কেটের পাশে খালের ভেতরেই কাঠের দোকান তৈরী করা হয়েছে। এছাড়া বড়বাজার থেকে নারকেলতলা পর্যন্ত প্রায় ২-৩ কিলোমিটার এর মধ্যে ৬টি পাকা ব্রিজ থাকা সত্ত্বেও অবৈধ ভাবে বাঁশের সাঁকো তৈরী করা হয়েছে বেশ কয়েকটি স্থানে। যেগুলো খালের পানি চলাচলে বাঁধা সৃষ্টি করছে। তারপর আবার এগুলো নষ্ট হয়ে গেলে বাশেঁর খুটি গুলো অপসরণ না করে নতুন করে আবার সাঁকো তৈরী করা হচ্ছে। যার ফলে ওই সব খুঁটিতে ময়লা বেধে খাল ভরাট হচ্ছে।
News1
কিন্তু, খালটি খননের ব্যবস্থা করা হয় এবং এল্লারচর ও খেজুরডাঙ্গী এলাকায় খালের সংযোগ স্থলের সুইজ গেট অপসরণ অথবা স্লুইজ গেট দিয়ে স্বাভাবিক পানি চলাচলের ব্যবস্থা করে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং ময়লা আবর্জনা ফেলা বন্ধ করা যায় তাহলে প্রাণসায়ের আবার প্রাণ ফিরে পাবে।

সাতক্ষীরা পলাশপোল গ্রামের সাবিহা ইসলাম জানান, “প্রানসায়ের এর এখন আর প্রাণ নেই। এখন প্রাণসায়ের শহরের পরিবেশ দূষণ করছে। শহরের সব ময়লা এখানে ফেলা হয়। এর পাশ দিয়ে যাওয়া যায় না। প্রচন্ড দূর্গন্ধ ছড়ায়। তারপর আবার পৌরসভার কিছু কিছু ডাস্টবিন খাল সংলগ্ন হওয়া খাল দূষণের আরো একটি কারণ। আবার শহরে পর্যাপ্ত ময়লা ফেলার জায়গা না থাকায় এর মধ্যে অনেকে ময়লা ফেলে। তবে এটি যদি দখল মুক্ত করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয় তবে প্রাণসায়ের আবার প্রাণ ফিরে পাবে।”

সাতক্ষীরা নাগরিক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক আনিসুর রহিম বলেন, “সাতক্ষীরার তৎকালীন জমিদার শহরকে সুন্দর করা জন্য এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রাসারের জন্য এই খাল খনন করেন। এবং এই খালকে কেন্দ্র করে সাতক্ষীরার ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটে। কিন্তু পরবর্তীতে এল্লারচর ও খেজুরডাঙ্গী এলাকায় খালের সংযোগ স্থলে অপরিকল্পিত ভাবে স্লুইজ গেট দেওয়ার ফলে খালটি মরা খালে পরিণত হয়। এবং তা ধীরে ধীরে অস্তিত্ব  সংকটে পড়ছে। তাই যত দ্রুত সম্ভব খালের দু’ধারে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে এবং ময়লা ফেলা বন্ধ করে এই খালকে রক্ষা করতে হবে। সাথে সাথে খালের দুপাশে সুন্দর করে রাস্তা এবং বাগান করা যায় তাহলে খালের দখল মুক্ত হবে এবং সাথে সথে বিনোদনের অন্যতম জায়গা হয়ে উঠতে পারে এই খাল।

happy wheels 2

Comments