একজন সফল ফলচাষী ডাঃ মোঃ ওসমান গণি

::গুঞ্জন রেমা, কলমাকান্দা থেকে

একজন সফল ফলচাষী ডা: মো: ওসমান গণিকলমাকান্দা উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের হরিপুর  গ্রামের একজন সফল ফল চাষী ডা: মো: ওসমান গণি। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ফলের বাগান ও নার্সারি  করে পরিবারে একটা বাড়তি আয়ের উৎস গড়ে তুলেছেন। ফলজ বৃক্ষরোপণ ও পরিচর্যায় কৃতিত্ব প্রদর্শনের স্বীকৃতি স্বরুপ “জাতীয় ফল প্রদর্শনী- ২০১৪” পুরষ্কার লাভ করেন। ১৮ জুন ২০১৪ সালে ফার্মগেট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আয়োজিত ফলের মেলাতে অংশগ্রহণ করে কৃষি মন্ত্রনালয়ের সচিব ড: এস এম নাজমূল ইসলাম এর কাছ থেকে এই জাতীয় পুরষ্কার গ্রহণ করেন। ফলজ গাছের প্রতি যে  তাঁর কত  গভীর অনুরাগ তা তাঁর বাড়ি দেখলেই বোঝা যায়।  বাড়ির আনাচে কানাচে-আঙ্গিনায়-পুকুর পাড়ে, সবখানে ফলজ গাছের বাহার। এখানে রয়েছে কয়েক প্রজাতির পেয়ারা, মালটা, লেবু, লিচু, সফেদা, আঙ্গুর, করমচা, মিষ্টি তেঁতুল, ডালিম, পিস ফল, বিভিন্ন জাতের উন্নতমানের আম, আমড়া, কমলা, আপেল, ড্রাগনফল, বাউকুল, রাম্বুটান ইত্যাদি। এসব ফলের চারা তিনি বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করেছেন, এমনকি বিদেশ থেকেও সংগৃহীত হয়েছে কিছুকিছু ফলের চারা। যেমন পেয়ারার চারা সংগ্রহ করেছেন আমেরিকা থেকে আর রাম্বুটান মালয়েশিয়া থেকে। তিনি ১৯৯২ সালে কাজের সন্ধানে গিয়েছিলেন মালয়েশিয়া। সেখানে  রাম্বুটান ফল দেখে মুদ্ধ হয়ে ১৯৯৩ সালে দেশে ফেরার সময় দুটি চারা সঙ্গে নিয়ে আসেন। সেই দুটি রাম্বুটান চারা আজ বৃক্ষে পরিণত হয়েছে। ফল দিচ্ছে প্রতিবছর । ফল বিক্রি করে হচ্ছেন লাভবান। প্রতি কেজি রাম্বুটান বিক্রি করেন ৩০০ টাকায়। রাম্বুটান ফল থেকে চারা উৎপাদন করে প্রতি চারা ২০০ টাকা দরে আবার জোর কলম এর চারা ২০০০ টাকা দরে বিক্রি করেন। শুধু রাম্বুটানই নয়, সব ফলেরই চারা উৎপাদন করে সেখানে গ্রাফটিং করে বিক্রি করেন তিনি। এ  বছর ৫০ হাজার টাকা আয় করেছেন শুধুমাত্র ফলের চারা ও কলম চারা বিক্রি করে। বিভিন্ন ফল বিক্রি করে আয় করেছেন ১ লক্ষ টাকা।

এই ফলের বাগান ও নার্সারি করার আগ্রহটা কিভাবে আপনার মনে উদয় হল? প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বাগান করাটা শুরু করি ফুল দিয়ে। পরে ফলের বাগান করার চিন্তা মাথায় আসে। অনেক আগে থেকেই আমি ফলের বাগান করার পরিকল্পনা করি। কিন্তু কিছু সীমাবদ্ধতার জন্য করতে পারিনি। তারপর একটা দুইটা করে চারা কিনে শুরু করি ফলের বাগান। এখন আমার প্রতিটি ফল গাছে ফল ধরছে যা দেখলে খুব ভালো লাগে। আমি এখন মোটামুটি একজন সফল ফলচাষী।  আমি ফলের বাগান ও নার্সারী করে আয়ের একটা উৎস তৈরি করতে পেরেছি। সে আয় দিয়ে আমার পরিবারের খরচ চালাতে পারছি। সেই সাথে আমার পরিবারের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে পারছি । এমন কি এলাকার পুষ্টি চাহিদা পূরণেও ভূমিকা রাখতে পারছি।

তিনি তাঁর ফল বাগনে কোন প্রকার রাসায়নিক কীটনাশক স্প্রে করেন না। এ কারণে তাঁর ফলের চাহিদা থাকে সবসময়। তিনি সব কিছু হিসাব করে কাজ করেন, তাই তাঁর বাগানে যে ফল ভর মৌসুমে পাওয়া যায় তা খুব কম পরিমাণে রোপণ করেছেন। যেটা আগামজাত কিংবা মৌসুমের শেষে পাওয়া যায়, তাই নির্বাচন করে বাগান সাজিয়েছেন- যেন দামটা একটু বেশি পাওয়া যায়।

একজন সফল ফলচাষী ডা: মো: ওসমান গণির ফল গাছজাতীয় পুরষ্কার প্রাপ্তির ব্যাপারে তিনি বলেন, আমি কখনো ভাবিনি এমন একটা পুরষ্কার আমার ভাগ্যে জুটবে। নিজ উদ্যোগ ও স্বপ্নকে বাস্তবে রূপায়নের জন্যই আমার এমন বাগান করা। এতে পুরষ্কারের কথা আমি কখনো চিন্তাই করি নি। একদিন কলমাকান্দা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে কর্মকর্তারা আমার বাড়ি পদির্শনে আসেন। উনারা আমার নাম লিখে নেন। জানতে চান আমার ফল বাগান করার ব্যাপারে। পরে একদিন আমাকে বলা হয় যেন আমি ঢাকাতে একটা ফলের মেলাতে অংশগ্রহণ করি । সেখানেই আমাকে এ পুরষ্কার প্রদান করা হয়। পুরষ্কার পাওয়ার পর আমি খুবই আনন্দিত হয়েছিলাম। সাথে সাথে বাড়িতে জানিয়ে দেই যে আমি ফলজ বৃক্ষরোপণ ও পরিচর্যায় অবদান রাখার জন্য জাতীয় পুরষ্কার পেয়েছি। তখন বাড়ির সবাইও খুবই খুশি হয়েছিল। আজও গা শিউরে ওঠে সে মূহুর্তটি মনে পড়লে।  জায়গার স্বল্পতার জন্য আমি বাগানটি বড় করতে পারছি না। যদি কোথাও ভালো জায়গার ব্যবস্থা করা যেত তবে বড় আকারে বাগান করার ইচ্ছা ছিল।

প্রতিদিন বিভিন্ন স্থান ও অফিস থেকে অনেক মানুষ এ বাড়ি পরিদর্শন করতে আসেন বলে তিনি জানান। তাদের আসাতে আপনার কেমন লাগে তা জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, এক কথায় আমার অনেক ভালো লাগে। অনেকে আসেন ফল নিতে আবার অনেকে ফলের চারা নিতে। কিছু কিছু মানুষ আসেন নার্সারি বিষয়ে জানতে বা পরামর্শ নিতে । তিনি বলেন নাসারি বিষয়ে আমার কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। আমি যা করি শুধুমাত্র নিজের অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর করে করি।

নিজে ফল বাগান করছেন অন্যকেও ফল বাগান করার জন্য উদ্বুদ্ধ করে যাচ্ছে ডা: মো: ওসমান গণি । যার প্রমাণ মিলে তাঁর পাড়া প্রতিবেশীদের বাড়িতে ফলের গাছ দেখে যা তার দেখা দেখি অনেকে ফলের বাগান করতে শুরু করছেন। ফল প্রেমী এই মানুষটার একটা বড় শখ হল যেখানে কোন ভালো জাতের ফল গাছের সন্ধান পাওয়া যায় সেখানে সে শত কষ্ট করে হলেও-হাজার টাকা খরচ করে হলেও সেই ফলের চারা সংগ্রহ করেন। সম্পূর্ণ জৈব পদ্ধতিতে ফল উৎপাদন করে মানুষের হাতে বিষ মুক্ত ফল তুলে দিয়ে একদিকে যেমন নিজে কিছু অর্থ আয় করছেন, তেমনি  ভিটামিন ও পুষ্টি চাহিদা পূরণে অগ্রণী ভুমিকা পালন করে যাচ্ছেন ফল ও বৃক্ষপ্রেমী মানুষটি।

happy wheels 2

Comments