সিজু গাছ: আদিবাসীদের বাড়ি সুরক্ষার প্রাকৃতিক বেড়া

কলমাকান্দা, নেত্রকোনা থেকে গুঞ্জন রেমা

আদিবাসীরা প্রকৃতিকে শ্রদ্ধা করেন এবং পরিবেশের ভারসাম্য সুরক্ষায় সর্বদা সচেষ্ট থাকেন। তাঁরা প্রকৃতির একান্ত কাছাকাছি থেকে প্রকৃতিকে চিনেছেন, জেনেছেন এবং প্রকৃতির প্রতিটি উপাদান সংরক্ষণ করার চেষ্টা করে আসছেন।Gunjon-2 যার জন্যই তো তাঁরা তাদের নিজেদের কল্যাণে প্রকৃতি থেকে নানান উপাদান নানান কাজে ব্যবহার করে আসছেন সেই আদিকাল থেকে। প্রকৃতির অফুরন্ত ভান্ডার থেকে তাঁরা প্রয়োজনবোধে খুঁজে নিচ্ছেন খাবার, ঔষধ ও আসবাব তৈরির উপকরণ। ভান্ডার শেষ যেন না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখেন তারা। তাই তো যেটুকু প্রয়োজন ততটুকুই তাঁরা সংগ্রহ করেন। বাকি সম্পদগুলো প্রকৃতির মাঝেই সংরক্ষণ করছেন। প্রকৃতির এই ভান্ডার যেন অফুরান থাকে সেজন্যই প্রকৃতির প্রতি তাঁদের এই মমত্ববোধ।

Gunjon-1
আদিবাসীদের জন্য প্রকৃতির অন্যান্য দানগুলোর মধ্যে সিজু অন্যতম। সিজু দেখতে অনেকটা ড্রাগন ফলের গাছের মত। এটি এক ধরনের ক্যাকটাস জাতীয় উদ্ভিদ। এর বৈজ্ঞানিক নাম হলো ঊঁঢ়যড়ৎনরধ ধহঃরয়ঁড়ৎঁস। সিজু দিয়ে সীমান্তবর্তী আদিবাসীরা বাড়ির চারপাশ সুন্দর করে বেড়া দেওয়ার জন্য ব্যবহার করে আসছেন আদিকাল থেকে। বাড়ির সীমানার চারপাশে সারিবদ্ধভাবে রোপণ করে বেড়া তৈরি করে বাড়ি সুরক্ষা করছেন তারা।

সিজু গাছে কাটা থাকার ফলে কেউ সহজে ভাঙতে পারে না বা নষ্টও করতে পারে না। সিজু এমনই একটি উদ্ভিদ যা সব মাটিতেই ভালো জন্মে। তাই আদিবাসীরা পাহাড়ি ও সমতল উভয় স্থানেই প্রয়োজবোধে সিজু গাছ রোপণ করেন বাড়ির চারপাশে বাড়ি সুরক্ষা করার জন্য। তাদের ভাষ্যমতে, এটি দিয়ে বেড়া দিলে খরচ যেমন কম হয় তেমনি দীর্ঘস্থায়ীও থাকে। কারণ একবার রোপণ করলে সেটা অনেক দিন পর্যন্ত থাকে যদি কেটে ফেলা না হয়।

IMG_20170212_144254
সিজু গাছটি আদিবাসীরা প্রতিবছরই সুন্দর ও সমান করে ছাঁটেন। যাতে করে বেশি উচু না হয়। কারণ উচু হয়ে গেলে পরে বাতাসে ভেঙে যাওয়ার ভয় থাকে। এর রোপণ পদ্ধতি সম্পর্কে আদিবাসীরা বলেন, “এটির ডাল রোপণ করলেই হয়। এছাড়াও কোন বাড়তি যতœ করতে হয় না। সারা বছরে কোন প্রকার সেচ না দিলেও চলে।”

সীমান্তবর্তী কটিপয় গ্রাম যেমন কালাপানি, গোবিন্দপুর, পাতলাবন, বটতলা, সন্যাসীপাড়া, চন্দ্রডিঙ্গা গ্রামের কিছু সংখ্যক পরিবারের এর ব্যবহার লক্ষ্য করা গেছে। তাদের মধ্যে অনেকেই একথা স্বীকার করেছেন যে, সিজু দিয়ে বেড়া তৈরি করাতে তাদের প্রতিবছর বাড়ির সীমানা বেড়া দিতে কোন প্রকার টাকা খরচ করতে হচ্ছে না। তাই এটি একটি উত্তম বেড়ার গাছ বলে আখ্যা দিয়েছেন।

প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা এই গাছটি খুবই প্রয়োজীয়। তবে এ গাছটির সংরক্ষণে কেউ তেমন আগ্রহী নয়। এটি একটি পরিবেশবান্ধব গাছ। তাই প্রকৃতিতে প্রাণবৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং বাড়ির বেড়া দেওয়ার কাজসহ অন্যান্য কাজে ব্যবহারের জন্য সিজু গাছটিকে সংরক্ষণ প্রয়োজন।

happy wheels 2

Comments