দূর্যোগে পূর্বপ্রস্তুতি আর আনন্দে উদযাপিত হলো কৃষকের পহেলা বৈশাখ

রাজশাহী থেকে শহিদুল ইসলাম
আজ ১লা বৈশাখ ১৪২৪, ১৪ এপ্রিল ২০১৭। রাজশাহীর পবা উপজেলার কৃষকগণ আনন্দ উৎসব আর বাংলা নতুন বছরের দূর্যোগের পূর্বপ্রস্তুতি নিয়েই শরু করলো নতুন বছরের দিনটি। ১লা বৈশাখ বাঙ্গালীর হাজার বছরের আপন সংস্কৃতি। বৈশাখ মানে গ্রামের কৃষকদের নতুন পরিকল্পনা। দেশের খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার পিছনে প্রথম এবং প্রধান অবদানকারী বাংলাদেশের গ্রামের কৃষকগণ। খাদ্য উৎপাদনকারী গ্রামের কৃষক খাদ্যযোদ্ধাগণ এখানো বাংলা মাসের তারিখ ও ঝতু গুনে গুনে, দিন কাল হিসাব করে ফসল বোনেন এবং ঘরে তোলেন। বীজ প্রক্রিয়াজাত, বীজ শোধন, বীজের পরিচর্চাও করেন বাংলা মাসের দিন আর ক্ষন দেখে। কিন্তু কালের বিবর্তনে এবং জলাবায়ু পরিবর্তনের আঞ্চলিক অভিঘাতে ঋতুুর পরিবর্তন বা ঋতুও হারিয়ে গেছে বটে। কিন্তু অভিজ্ঞ কৃষকের অভিজ্ঞতা হারিয়ে যায় নি।
IMG_9154
প্রকৃতির নানা ঘাত প্রতিঘাত আর সংকটের মধ্যে দিয়েই একজন কৃষক অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। কৃষক তার নিজস্ব অভিজ্ঞতাবলেই বৈরী আবহাওয়া ও দূর্যোগকে মোকাবেলা করেন। আর এই কাজটিতে অনেক বেশী অভিজ্ঞতা এবং সুচারু ভাবে করেন একজন নারী কৃষক। উপযোগি বীজ এবং দূর্যোগকালিন সময়ে নারীর সৃষ্টিশীল উদ্যোগ টিকিয়ে রাখে একটি পরিবার, একটি সমাজ তথা দেশকে। সেই অভিজ্ঞতা এবং নিজেদের সক্ষমতাগুলো নারী ও পুরুষ কৃষকগণ তুলে ধরলেন রাজশাহীর পবা উপজেলার বড়গাছি কুটিপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠের পহেলা বৈশাখ উদযাপন। ১লা বৈশাখের আনন্দ ভাগাভাগি এবং নতুন বছরের কৃষির প্রস্তুতি, বীজ ও অভিজ্ঞতা বিনিময়সহ নারীর সক্ষমতা ও সমস্যা সম্ভাবনার দিকগুলো  প্রদর্শণী ও আলোচনা হয়। রাজশাহীর পবা উপজেলার প্রায় ২০০ শত নারী ও পুরুষ কৃষকসহ নানা পেশাজীবীর মানুষ অংশগ্রহণ করেন।

IMG_9096সকাল থেকেই বিকাল অবধি কাটে কৃষক পরিবারের নানা আয়োজন। তরুণসহ শিক্ষার্থীদের লোকজ ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, গল্প, কবিতা পাঠ, মুকাভিনয়, স্বাধীনতার যুদ্ধের নাটক, গম্ভীরা গান, বীজ প্রদর্শণী, বীজ বিনিময়, নারীর হাতের কাজের প্রতিযোগিতা, সংলাপ, মতবিনিময়সহ নানা আচার-অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়েই ১লা বৈশাখের দিনটি পার করেন কৃষকগণ। দিনের শেষে পরন্ত বিকালে বীজ বিনিময় এবং পুরষ্কার বিতরণ করা হয়। সে সময় কৃষিতে নারীর অবাদান এবং স্বীকৃতি বিষয়ক সংলাপসহ তাপমাত্রা বৃদ্ধি, দূর্যোগ ও ঝুঁকি মোকাবেলায় গ্রামীণ নারীর উদ্যোগ ও করণীয় শীর্ষক মতবিনিময় হয়। মতবিনিময় কালে নারীরা বলেন, “খরার সময় টিউবয়েল গুলোতে পানি থাকে না, অনেক দুর থেকে পানি আনতে হয়। এর ফলে নানামূখী সামাজিক এবং স্বাস্থ্যগত সমস্যায় ভোগেন নারীগণ।”  অতিরিক্ত তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে নারীদের চর্মরোগসহ নানা ধরনের রোগবালাই বেড়ে গেছে। একই সাথে নারীগণ কৃষিতে প্রদানকৃত ভর্তুকি সরাসরি নারীকে দেবার দাবি জানান। কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবার মান আরো উন্নত করারও দাবি জানান।

IMG_9171সংলাপ ও মতবিনিময়কালে প্রধান অতিথি হিসেবে নারী ও নারীর অবদান বিষয়ক কথা বলেন পবা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোসাঃ খায়রুন্নেসা। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন  পবা থানার অফিসার ইনচার্জ পরিমল কুমার চক্রবর্তী, পাশাপাশি আরো পবা প্রেস ক্লাবের সভাপতি মোঃ নাজমুল হোসাইন, চারবার রাষ্ট্রীয় পদক প্রাপ্ত কৃষক মোঃ রহিমুদ্দিন সরকার, বিভাগীয় জয়িতা প্রাপ্ত নারী মোসাঃ রহিমা বেগম, পবা উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়িতা নারী মোসাঃ মনিরা বেগম, বড়গাছি কৃষক ঐক্যের সভাপতি মোঃ আঃ জব্বার মিয়াসহ প্রমুখ ব্যক্তি বর্গ। নারী ও পুরুষ কৃষকগণ গ্রীষ্মকালিন বীজ প্রদর্শণী এবং বিনিময় করেন। মেলায় সর্বোচ্চ ৭৫ ধরনের বীজ প্রদর্শন করেন মোছাঃ মুনিরা বেগম । এছাড়াও মেলায় নারীগণ গ্রীষ্ম মৌসুমের নানা জাতের দেশীয় প্রজাতির ফল, মুল, অচাষকৃত উদ্ভিদ বৈচিত্র্য প্রদর্শণ করেন। মেলায় পরিবেশবান্ধব কৃষি এবং দূর্যোগে পূর্ব প্রস্তুতি বিষয়ক গম্ভীরা গান প্রদর্শন করেন বড়গাছি লোকসাহিত্য দল। আলোচনা শেষে অতিথি বৃন্দ খেলাধুলাসহ প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে পুরুষ্কার তুলে দেন।

happy wheels 2

Comments