এই গরমে উপকারী পুষ্টিগুণে ভরা বাঙ্গি খান

আব্দুর রাজ্জাক, মানিকগঞ্জ ॥

গ্রাষ্মীকালীন ফলগুলোর মধ্যে বাঙ্গি বা ফুটি অন্যতম। চাষ পদ্ধতি সহজ হওয়ায় ফলন হয় সন্তোষজনক। স্বল্প খরচে ভালো মুনাফা প্রাপ্তিতে দিনদিন এর আবাদ বেড়ে চলেছে মানিকগঞ্জে। এখানকার উৎপাদিত বাঙ্গি জেলার বিভিন্ন হাট বাজার, স্টেশন কিংবা অভিজাত ফল বিক্রি স্থান ছাড়াও চলে যাচ্ছে রাজধানীর ঢাকার বিভিন্ন মোকামে। হাতের নাগালে পাওয়া বাঙ্গির দামও থাকে সহজলভ্য। তাই সব শ্রেণীর মানুষই কম বেশি ক্রয় করে এই ফল। কৃষকের লোকসান হওয়ার ঝুঁকির সম্ভাবনা থাকে খুবই কম। মাত্র ৯০ দিনে বিঘা প্রতি ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা মুনাফা পাওয়ায় অনেক কৃষক বাঙ্গি চাষের দিকে ঝুঁকছেন। যে কারণে ক্রমে বাড়ছে এর বাণিজ্যিক আবাদ।

বাঙ্গি আকারে ছোট-বড় বেশ কয়েক রকমের হয়। কাঁচা ফল সবুজ এবং পাকলে হলুদ রঙের হয়। একটু বেশি পেকে গেলে বাঙ্গি সহজে ফেটে যায়। সুগন্ধযুক্ত সাধারণ স্বাদের বাঙ্গি পুষ্টিগুণে অনন্য। বাজারে এখন নানা আকৃতির বাঙ্গির দেখা পাওয়া যাচ্ছে। বাঙ্গি নানা স্বাস্থ্য উপকারী গুণে ভরপুর। ফলিক এসিড রক্ত তৈরিতে সাহায্য করে। এজন্যে বাঙ্গি বেশ উপকারী। বাঙ্গিতে নেই কোনো চর্বি বা কোলস্টেরল। দেহের ওজন কমাতে, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে এর ভূমিকা অনেক। গরমে মানুষের সানবার্ন, সামার বয়েল, হিট হাইপার পাইরেঙিয়া (অতিরিক্ত গরম বা রোদের তাপ লাগলে এসব রোগ হয়) হয়। বাঙ্গির রস এসব রোগ দূর করে ত্বক ও শরীরের তাপমাত্রা ঠিক রাখে। ফলে ত্বকের মসৃণতাও নষ্ট হয় না। এসিডিটি, আলসার, নিদ্রাহীনতা, ক্ষুধামান্দ্য, নারীর হাড়ের ভঙ্গুরতা রোধ করে বাঙ্গি। তাই বাঙ্গি খাওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসরা।
manikgonj pic
জেলার ৭টি উপজেলাইে কমবেশি চাষ হয় বাঙ্গির। জেলার হরিরামপুর, দৌলতপুর, শিবালয় চরাঞ্চলেও প্রচুর বাঙ্গি উৎপাদিত হয়। ঘিওর হাট, ঝিটকা হাট, বরংগাইল মোকাম, মানিকগঞ্জ আড়ত, বালিটেক, সাটুরিয়া, জামশা হাট, কাটিগ্রাম, মিতরা, বায়রা, টেপড়া, বানিয়াজুরী বাসষ্ট্যান্ড, হাটিপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিন পাইকারী ও খুচরা বিক্রি হয় প্রচুর পরিমাণ বাঙ্গি। হরিরামপুর চর এলাকার গ্রামগুলোতে এ বছর প্রচুর পরিমাণে বাঙ্গি চাষ করার ফলে উপজেলার ঝিটকা, লেছড়াগঞ্জ, নয়ারহাট, আন্ধারমানিক বাজার, বাহিরচর বাজার, মানিকনগর বাজার, বাহাদুরপুর বাজার, কান্ঠাপাড়া ও লাওতা বাজারে এসব ফসল বিক্রি করা হয়।

ঘিওরের কৃষক মুন্নাফ মিয়া জানান, বাঙ্গি চাষ চাষ খুবই লাভজনক। বাঙ্গি ফল উঠে বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে। এ ফসল চাষে বাড়তি কোন ধরনের খরচ নেই বললেই চলে। সাথী ফসল হিসেবে এটি আবাদ করায় মূল ফসলের জন্য খরচ দিয়েই বাঙ্গি চাষ করা যায়। উৎপাদন খরচ বলতে শুধুমাত্র জমি চাষ ও আগাছা বাছাই করা। কাকজোর গ্রামের কৃষক আজরফ খান জানান,  ৩০ শতক জমিতে বাঙ্গি চাষ করলে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা লাভ হয়। আকারভেদে প্রতিটি বাঙ্গি পাইকারী ১০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হয়। অনেক পাইকাররা ক্ষেত থেকেই বাঙ্গি কিনে নিয়ে যান।

মানিকগঞ্জ বাসষ্ট্যান্ড ফল আড়তের মহাজন মো. সেলিম মিয়া জানান, গ্রীষ্মকালীন মৌসুমি ফল বাঙ্গিও চাহিদা ব্যাপক। দামও বেশ ভালো। প্রতিদিনই মানিকগঞ্জ থেকে প্রচুর পরিমাণ বাঙ্গি আশুলিয়ার বাইপাইল ও ঢাকার কারওয়ান বাজারের আড়তে যায়। মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালের আর.এম.ও ডা. মোঃ লুৎফর রহমান জানান, এ ফলে রয়েছে উচ্চ পরিমাণের ভিটামিন সি এবং বিটা ক্যারোটিন। বিটা ক্যারোটিন ও ভিটামিন সি-র সংমিশ্রণে শরীরের কাটাছেঁড়া দ্রুত শুকায়। এতে চিনির পরিমাণ খুব কম। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যও বাঙ্গি যথেষ্ট উপকারী। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আঁশ বা ডায়াটারি ফাইবার, যা খাবার হজমে সাহায্য করে। নিয়মিত বাঙ্গি খেলে চুল হয় স্বাস্থ্যজ্জ্বোল ও সুন্দর।

ঘিওর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আশরাফ উজ্জামান জানান, বাঙ্গি বা ফুটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য পুষ্টি সহায়ক। বর্তমানে বাঙ্গির ভরা মৌসুম চলছে। ফাঁকা জমির পাশাপাশি বিভিন্ন শস্যের সাথে সাথী ফসল হিসেবে বাঙ্গি চাষ চাষ করে কৃষকরা আর্থিক লাভবান হচ্ছেন। বাঙ্গি চাষ ও এর ভালো ফলনের জন্য কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ ও সহায়তা প্রদান করেন মাঠকর্মীরা।

happy wheels 2

Comments