পরিবেশ সুরক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে সবাইকে

শ্যামনগর, সাতক্ষীরা থেকে বিশ্বজিৎ মন্ডল

আগামীকাল ৫ জুন। প্রতিবছর ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ পালন করা হয় বিশ্বব্যাপী। এবারের  বিশ্ব পরিবেশ দিবসের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো ‘ “Connect With Nature”  যাকে বলা হচ্ছে “প্রাণ প্রকৃতির সাথে আমাদের বসবাস”। প্রাণ ও প্রকৃতির সাথে মানুষের  সামাজিক সম্পকর্  বিদ্যমান। আমাদের  গ্রামীন নানা পেশাজীবীদের উন্নয়নের সাথে সম্পর্কিত প্রকৃতির প্রতিটি প্রাণ আজ বিপন্নতার মুখে। সবুজ শ্যামলে প্রকৃতিতে ভরপুর ছিল আমাদের এই বাংলাদেশ। সবকিছু এখন দিনদিন বদলে যাচ্ছে। অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, বন্যাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগে প্রকৃতিসহ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পেশা।

2
বিশ্ব্ পরিবেশ দিবসকে সামনে রেখে আজ (৪ জুন) শ্যামনগরের বারসিক কার্যালয়ে প্রবীণ কৃষক নিরঞ্জন জোয়ারদারের সভাপতিতে টেকসই উন্নয়ন: প্রাণ ও প্রকৃতি রক্ষায় গ্রামীণ  জনগণ  শীর্ষক  আলোচনা  সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন পেশাজীবীর মধ্যে কৃষক, জেলে, কামার, মাঝি, মৌয়াল, বাওয়ালি, কবিরাজ, ধাত্রী, বাজনদার, গোয়ালা, পালকিবাহক, কুটিরশিল্প, শিক্ষক, পল্লী চিকিৎসক ও সাংবাদিকসহ বারসিক কর্মকর্তাবৃন্দ। অংশগ্রহণকারীরা তাদের জীবনে প্রাণ ও প্রকৃতির প্রতি কী অবদান আছে এবং কি কারণে এ সমস্যা তৈরি হচ্ছে এবং কিভাবে সমাধান করা যায় তা তুলে ধরেন।

আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, “প্রকৃতির সাথে আমাদের পেশাজীবীদের যে সম্পর্ক ছিল কালের বিবর্তনে তা আজ বদলে যাচ্ছে। আগে আমাদের গোলাভরা ধান ছিল, পুকুর ভরা মাছ, বিভিন্ন ধরনের ধান ও শাকসবজিতে ভরা ছিল আমাদের মাঠ। অনুকূল পরিবেশ না পাওয়ার কারণে অনেক প্রাণ আজ ইতিমধ্যে বিলুপ্ত হয়ে গেছে।” তারা আরও বলেন, “ঋতু বৈচিত্র্যও আগের মতো আর নেই। প্রাণবৈচিত্র বিলুপ্ত হওয়ার সাথে সাথে পেশারও পরিবর্তন হচ্ছে। কৃষিজমির পরিমাণ কমে যাওয়াতে কৃষক আজ তাই দিনমজুরি, ভ্যান চালক, মুদি দোকানদার, ভাটার কাজের জন্য কর্মএলাকা ত্যাগ করতে বাধ্য হচ্ছেন। জেলেরা নদীতে ও জলাশয়ে আগের মতো মাছ পাচ্ছেন না। কারণ নদীতে মাছ মারা যাচ্ছে, নদীতে নেট জাল ব্যবহার হচ্ছে, জলাশয়গুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে ও প্রভাবশালীরা ইজারা নিচ্ছে।”

1
বক্তারা জানান, তাপ বেশি, গাছে ফুলের সংখ্যা কম হওয়ার কারণে, মধু আহরণের সময় মৌ পোকার বাচ্চা মেরে ফেলায় মধুর পরিমাণও কমে যাচ্ছে। ফলে মাওয়ালিরা আগের মতো সুন্দরবনে মধু সংগ্রহ করতে পারছেন না। মূলত পরিবেশ প্রকৃতি পরিবর্তন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং মনুষ্য সৃষ্ট বিভিন্ন প্রতিকূলতার কারণে বিভিন্ন পেশাজীবীদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। ব্ওায়ালি থেকে শুরু করে চামড়া বিক্রেতা, মাঝি, বাজনদার, কর্মকার এবং কুঠির শিল্পী পর্যন্ত নানান পেশার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ততার শিকার হচ্ছেন। এছাড়া গোয়ালা, বেয়ারা, গ্রাম্য ডাক্তার, শিক্ষকসহ নানান পেশার মানুষ প্রকৃতি ও পরিবেশ থেকে প্রাণবৈচিত্র্য বিলুপ্তির কারণে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ততার শিকার হচ্ছেন বলে তারা জানান।
আলোচনা সভার বক্তারা পরিবেশকে ক্ষতি করে এমন কাজ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান। নতুন প্রজন্মকেও পরিবেশ সুরক্ষায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তারা। কারণ তারা মনে করেন নতুন প্রজন্মরা যদি এগিয়ে আসে তাহলে পরিবেশ সুরক্ষায় সচেতনতা তৈরিতে অগ্রগতি আসবে। এছাড়া পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়টি প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে সবার কাছে তুলে ধরার আহ্বান জানান তারা। আলোচনা সভায় সর্বোপরি পরিবেশ সুরক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসার আহবান জানানো হয়।

happy wheels 2

Comments