“পাকা জামের মধুর রসে” রঙিন করি মুখ. .

আব্দুর রাজ্জাক, মানিকগঞ্জ ॥

 

. . . .  “পাকা জামের মধুর রসে রঙিন করি মুখ”. . .

পল্লী কবি জসীম উদ্দীনের মামার বাড়ি কবিতার কবিতার এই পংক্তির সঙ্গে পরিচিত নয় এমন বাঙালি খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। আর রসে ভরা এই কালো জাম এক সময় বিখ্যাত ছিল মানিকগঞ্জে। গ্রাম-গঞ্জের বাড়ির আঙিনা থেকে শুরু করে জেলার প্রায় সর্বত্রই এক সময় প্রচুর জাম গাছ চোখে পড়তো। তবে নির্বিচারে বৃক্ষ নিধনের ফলে ঘিওর উপজেলাসহ মানিকগঞ্জের পথে ঘাটে, হাটবাজারে ও সড়কের পাশে জাম গাছ এখন তেমন দেখা যায় না। গ্রীষ্মকালীন এই জাম ফল এখন চলে গেছে দামি ফলের তালিকায়। তাই মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ঔষধি গুণসম্পন্ন পাকা জামের মধুর রসে এখন আর মুখ আগের মতো রঙিন হয় না।
manikgonj jam pic
জেলার বিভিন্ন হাট-বাজার, বাসষ্ট্যান্ড খুচরা ও পাইকারী বিক্রি হয় জাম। আবার অনেক ব্যবসায়ীরা গাছ থেকেই জাম কিনে থাকেন। পরে পাইকাররা এসব জাম বিক্রি করে আশুলিয়ার বাইপাইল ও রাজধানীর কারওয়ান বাজার আড়তে। এছাড়াও ফেরিওয়ালারা স্কুল কলেজের সামনে, বাসস্ট্যান্ডসহ বিভিন্ন জনবহুল স্থানে ফেরি করে বিক্রি করে কালো জাম। বড় বড় গাছ ও বাগান কেটে সাফ করে ফেলায় এখন এই কালো জামের উৎপাদন কিংবা ফলন কমে গেলেও একেবারে হারিয়ে যায়নি। প্রতি কেজি জাম গড়ে ৮০-১০০ টাকা দরে বিক্রি  হচ্ছে।

ঘিওরের শ্রীবাড়ি এলাকার পাইকারী জাম ব্যবসায়ী মো. আরিফ হোসেন জানান, জেলার বিভিন্ন হাট বাজার কিংবা বসত বাড়ি থেকে জাম কিনে তিনি আশুলিয়ার বাইপাইল আড়তে বিক্রি করেন। খরচ বাদে কেজি প্রতি ১০/২০ টাকা লাভ হয়।

পুষ্টিকর কালো জামের নানা গুনাগুণের কথা উল্লেখ রয়েছে চিকিৎসাশাস্ত্রে। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, ফিলিপাইন ও ইন্দোনেশিয়ায় কালোজামের ব্যাপক কদর রয়েছে। মূলত এই জাম ফলের অনুকরণেই মিষ্টি ব্যবসায়ীরা কালো জাম তৈরি করে। সাধারণত ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে জাম গাছে ফুল ধরে এবং মে-জুন মাসে ফল পাকে।
manikgonj jam pic 1
আমাদের দেশে প্রধানত দুই জাতের জাম পাওয়া যায়। জাত দুটি হলো ক্ষুদি জাত- খুব ছোট এবং কালোজাম বা মহিষে জাত- বেশ বড় ও মিষ্টি। জাম গাছের কাঠ অত্যন্ত শক্ত হয়। ভালো মানের আসবাব ও ঘরের জানালা-দরজা তৈরিতে জাম কাঠের কদর বেশি।

ঘিওর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আশরাফ উজ্জামান জানান, জাম একটি পরিচিত ফলদ বৃক্ষ। জামের রয়েছে নানা ঔষধি গুণ। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে ব্যাপকহারে জাম গাছের চারা রোপণ করা হচ্ছে। স্থানীয় ভালো জাতের বীজ নির্দিষ্ট স্থানে রোপণ করে বা এক বছর বয়সের চারা রোপণ করে জামের আবাদ করা যায়।

মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. আব্দুল করিম বলেন, “জাম মানবদেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী ফল। মুখের ক্যানসার প্রতিরোধে কার্যকরী। ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ রোগীদের জন্য জাম অনেক উপকারী। কারণ জাম ফল রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ও রক্তে চিনির মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও গর্ভবতী মা, শিশুদের জন্যও এই ফল ভীষণ উপাদেয়। জামের ভিটামিন ‘এ’ দৃষ্টিশক্তিকে করে শক্তিশালী।”

বিশিষ্ট হামদার্দ চিকিৎসক ডা. মো. জুলফিকার হোসেন জানান, জামের কচিপাতা পেটের পীড়া নিরাময়ে সাহায্য করে। জামের বীজ গুড়া করে বহুমুত্র রোগের ওষুধ হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। বিট লবণ মাখিয়ে পাকা জামের রস খেলে পাতলা অরুচি, পায়খানা ও বমিভাব দূর করে।

happy wheels 2

Comments