শিশুকাল থেকেই বৃক্ষরোপণের অভ্যাস থাকা দরকার

রাজশাহী থেকে ইসমত জেরিন

 

ছোটবেলা থেকেই শিশুদের মধ্যে গাছ লাগানোর অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত বলে মনে করেন বটতলী আদিবাসী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মো. গোলাম আযম। বেশ সম্প্রতি গোদাগাড়ী উপজেলার গোগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের বটতলী গ্রামের বটতলী আদিবাসী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বারসিক ও বিদ্যালয় কর্তৃক আয়োজিত জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি প্রশমণে বৃক্ষরোপণ উৎসবে উপস্থিত সকল শিক্ষার্থী ও অতিথিদের মাঝে আলোচনায় এ কথাগুলো বলেন। তিনি মনে করেন একটি শিশু ছোট থেকে বড় হবার সাথে সাথেই তার মধ্যে পরিবেশের সকল উপাদান সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করার সুযোগ তৈরি হয়। সেই পরিবেশেরই একটি অন্যতম উপাদান হলো গাছ।

DSC00152

গাছ আমাদের অক্সিজেন দেয়, গাছের ফল আমাদের পুষ্টি যোগায়, গাছের ছায়ায় পথিক বিশ্রাম নিতে পারে, গাছই পশুপাখির আবাসস্থল এই বিষয়গুলো একটি শিশু তখনই ভালো করে বুঝতে পারবে যখন সে নিজে গাছ লাগিয়ে সেই গাছকে একটু একটু করে তার নিজের মতো করে বেড়ে উঠতে দেখবে বলে মনে করেন শিক্ষক গোলাম আযম। শিশুরা তাদের নিজের লাগানো গাছে পানি দেয়া, গাছ পরিচর্চা করার মধ্য দিয়েই গাছের প্রতি তাদের মমত্ববোধ তৈরি হবে। গাছেরও প্রাণ আছে সেই বিষয়টি বুঝতে শিখবে। আর এই মমত্ববোধ থেকেই শিশুটি বড় হয়ে অকারণে গাছের পাতা, ফুল ছিড়বে না, অকারণে গাছ কাটবে না। যদিও গাছ কাটে তবে তার পরিবর্তে আরো গাছ লাগাবে।আমাদের উচিত তাই ছোটবেলা থেকেই শিশুদের মধ্যে গাছ লাগানোর অভ্যা্স গড়ে তোলা।

একটি দেশের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য কমপক্ষে মোট ভূমির ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকা প্রয়োজন কিন্তু বাংলাদেশে আছে ১৭ শতাংশেরও কম বনভূমি। জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে প্রতিনিয়ত আমরা উজার করছি গাছপালা, ধ্বংস করছি বনজঙ্গল, বিনষ্ট করছি প্রাণবৈচিত্র্য। ফলে বৈশ্বিক উষ্ণতা ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবকে আরো বেশি ত্বরাণিত হচ্ছে। আমরা জানি বিশ্বের যে সকল দেশ জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাংলাদেশ তার মধ্যে অন্যতম। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এরই মধ্যে খরায় তাপমাত্রা বৃদ্ধি, শীতের তাপমাত্রা বৃদ্ধি, বন্যা, উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ততার পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়া, ভূমিকম্প, বজ্রপাতসহ বিভিন্ন ধরনের দূর্যোগের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে।

DSC00164

সাম্প্রতিক সময়ে পার্বত্য জেলার রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও চট্রগ্রামের পাহাড় ধ্বসে প্রাশ শতাধিক মানুষ মারা গেছে। গাছ মাটিকে শক্ত করে ধরে রাখে অথচ আমরা নির্বিচারে সেই পাহাড়ের গাছ ও পাহাড় কেটে বসত বাড়ি তৈরি করেছি ফলে অতিবৃষ্টির কারণে পাহাড়ি ঢলে প্রাণ হারালো শতাধিক মানুষ। এছাড়াও ২০১৭ সালে দেশের বিভিন্ন স্থানে বজ্রপাতেও অনেক মানুষ মারা গেছে। তানোর, গোদাগাড়ী উপজেলার গ্রামের সাধারণ মানুষের তথ্য মতে, আগে গ্রামে বিভিন্ন ধরনের বড় বড় গাছ যেমন-বটগাছ, নারিকেল গাছ, খেঁজুর গাছ, সুপারি গাছ ছিল কিন্তু এখন সেই গাছগুলো আর নেই। তখন বজ্রপাতও কম হতো কিন্তু এখন মানুষ সেই গাছগুলো কেটে ফেলার কারণে বজ্রপাত এখন সরাসরি মানুষের শরীরে এসে পড়ছে।

আলোচনায় বক্তারা আরো বলেন, “আমাদের মাঝে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নরসুন্দর কার্তিক পরামাণিকের মতো, নাটোর সিংড়া উপজেলার আতাউল গণির মতো বৃক্ষপ্রেমী মানুষ বাড়াতে হবে। যাদের নেশা ও ভালবাসায় হচ্ছে বৃক্ষরোপণ করা।” তারা বলেন, “আজ বটতলী গ্রামে বটতলী আদিবাসী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বৃক্ষরোপন উৎসবের মাধ্যমে ৪০০জন শিক্ষার্থীকে ফলজ বৃক্ষপ্রদানের মাধ্যমে বৃক্ষরোপণের অভ্যাস তৈরির সাথে সাথে কার্তিক পরামাণিকের মতো যারা বৃক্ষপ্রেমী মানুষ রয়েছে তাদের মতো করে তৈরির প্রচেষ্টা করা হয়েছে।” পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মো. হাসান ওয়ালিদ বলেন, “এই পেয়ারা গাছ পেয়ে আমার খুব আনন্দ লাগছে এবং আমি আজকে বাড়িতে গিয়ে বাড়ির উঠানে এই গাছ লাগাবো।”

DSC00172

গাছ আমাদের অক্সিজেন দেয়, বায়ু দূষণ থেকে পরিবেশ রক্ষা করে, মাটির উর্বরা শক্তি বাড়ায়, বৃষ্টির জন্য অনূকূল পরিবেশ তৈরি করে, ক্লান্ত পথিকের বিশ্রামের জায়গা তৈরি করে, পরিবারের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে, কলম, খাতা, কাগজ আসবাবপত্র তৈরিতে সাহায়্য করে, বিপদের সহায় হয়, রান্নায় জ্বালানি কাঠের যোগান দেয়, জৈব সার তৈরিতে ভূমিকা রাখে, বিভিন্ন দূর্যোগ থেকে রক্ষা করে, বিভিন্ন পশূ পাখির খাদ্য ও আবাসস্থলের যোগানদাতা। আসুন গাছের এই র্নিভরশীলতার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বেশি করে গাছ লাগাই, নিজে বাঁচি আর এই পৃথিবীকে আগামী দিনের শিশুদের বাসযোগ্য হিসেবে গড়ে তুলি।

happy wheels 2

Comments