বন্যা আর ভাঙনে দিশেহারা মানিকগঞ্জের অর্ধলক্ষ মানুষ

আব্দুর রাজ্জাক, ঘিওর (মানিকগঞ্জ) ॥

একদিকে বন্যার পানির তোপ আর অন্যদিকে নদী ভাঙনের ভয়াল রুপে দিশেহারা হয়ে পরেছে জেলার হাজারো মানুষজন। ঘিওর উপজেলাসহ মানিকগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি মারাত্মক অবনতি হয়েছে। পদ্মা-যমুনার পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধির ফলে জেলার ঘিওর, দৌলতপুর, শিবালয় ও হরিরামপুর উপজেলার দেড় শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় উপজেলা সদরের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে পরেছে বিভিন্ন ইউনিয়ন। বন্যার কারণে জেলার ৮৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ৮টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ও মাদ্রাসায় পাঠদান বন্ধ রয়েছে। মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম।

Ghior, Manikgonj pic (3)

যমুনার পানি বিপদসীমার ৭৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ফলে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। জেলার প্রায় ৫০ হাজার মানুষ ইতোমধ্যে পানিবন্ধী হয়ে পড়েছে। ফলে বন্যাকবলিত লোকজন চরম দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে দিনাতিপাত করছে। এছাড়া যমুনার শাখা নদী পুরাতন ধলেশ্বরী, কালীগঙ্গা, ইছামতি, কান্তাবতীতে সমানতালে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাশাপাশি পানির তীব্র স্রোতের কারণে এসব নদীর তীরবর্তী অনেক বাড়িঘর ভাঙনের কবলে পড়েছে। কালীগঙ্গা ও ধলেশ্বরী নদীর পানি বিপদসীমা লেভেলে প্রবাহিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে শত শত আবাদি পুকুর পানিতে ভেসে গেছে। মাছ চাষিরা ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ে দিশেহারা। ঘিওর উপজেলঅর অভ্যন্তরীন রাস্তাঘাটের বেশিরভাগই পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। দৌলতপুরের সাথে বাচামারা ইউনিয়নের সড়ক যোগাযোগের একমাত্র রাস্তাটি পানিতে তলিয়ে গেছে। ডুবে গেছে বিস্তীর্ণ ফসলী জমি।

গত কয়েক দিনে থেমে থেমে বৃষ্টি এবং যমুনা, ধলেশ্বরী ও কালীগঙ্গা নদীতে বন্যার পানি বৃদ্ধির ফলে মানিকগঞ্জের ঘিওর সদর, বানিয়াজুরী, বালিয়াখোড়া, সিংজুরী, বড়টিয়া ও দৌলতপুর উপজেলার বাচামারা, বাঘুটিয়া, চরকাটারী, জিয়নপুর, খলশী, চকমিরপুর, ধামশ্বর, কলিয়া ইউনিয়নের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এছাড়া বোনা আমন ১ হাজার হেক্টর, রোপা আমন ৪ হেক্টর,বীজ তলা ১ হেক্টর তলিয়ে গেছে। বন্যায় প্লাবিত এলাকায় মানুষের খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি, জ্বালানি লাকড়ি, গো-খাদ্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে।
এদিকে যমুনা, ধলেশ্বরী, কালীগঙ্গায় পানি বৃদ্ধির সাথে নদী ভাঙন ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। গত কয়েক দিনে বর্ষার পানি বৃদ্ধি ও নদীর করাল গ্রাসে শতাধিক বাড়ি-ঘর, রাস্তাঘাট ও ৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ,আবাদি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। নদী ভাঙনের শিকার এলাকার খেটে খাওয়া মানুষ ঘর বাড়ি জিনিসপত্র নৌকা যোগে অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন যমুনা নদীর চরে নিজের ভিটে মাটি হারিয়ে অন্যের জমির উপর বাড়িঘর জিনিসপত্র নিয়ে খোলা আকাঁশের নিচে মানবেতর জীবন যাপন করছে।

Ghior, Manikgonj pic (2)

গত এক মাসে যমুনার ভাঙনে ঘিওরের কুশুন্ডা, জাবরা, পেঁচারকান্দা, কুস্তা, নারচী, মাইলাঘী এবং দৌলতপুর উপজেলার বাচামারা ইউনিয়নের চুয়াডাঙ্গা,বাচামারা ঘোষপাড়া, কল্যাণপুর ,বাচামারা উওর খন্ড,সুবুদ্দিয়া, চরকাটারী ইউনিয়নের কাঁঠাল তলি, লালপুর, চরকাটারি ডাক্তার পাড়া, বাগপাড়া, মন্ডলপাড়া, কামার পাড়া, বাঘুটিয়া ইউনিয়নের মুন্সিকান্দি, রাহাতপুর, কাশিদারামপুর, ব্রামনদী, পুড়ান পাড়া, পারুরিয়া, জিয়নপুর ইউনিয়নের বরটিয়া, লাউতারা, বৈন্যা, আমতলী, আবুডাঙ্গা, খলসী ইউনিয়নের রোহা, পাররোহা, চকমিরপুর ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর,কালিকাবাড়ি এই ৪০টি গ্রামের ২ শতাধিক পরিবারের বসতভিটা আবাদী জমি জমা বাড়িঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। সেই সাথে বাচামারা-দৌলতপুর সড়কের বৈন্যা নামক স্থানে প্রায় ৫শ’ ফুট পাকা সড়ক নদী গর্ভে বিলীন হওয়ায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে ।

এসব গ্রামে গত কয়েক দিন যাবত নদী পানি বৃদ্ধির ফলে বাড়ি-ঘরে হাঁটু-কোমর পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বাড়ির উঠানে মাচা পেতে ও কলাগাছের ভেলায় বাড়ির উঠানে অনেক গৃহবধুকে রান্না করতে দেখা গেছে। অনেকেই পার্শ্ব বর্তী নাগরপুর উপজেলার ফৈজপুর, মাইজাইলসহ চরে আশ্রয় নিয়েছে। এছাড়া যাদের টাকা পয়সা দিকে সচ্ছল তারা নৌকা যোগে আশ্রয়ের খোঁজে শহরের বিভিন্ন স্থানে চলে যাচ্ছে।

Ghior, Manikgonj pic (1)
দৌলতপুর উপজেলা চেয়ারম্যান তোজাম্মেল হক তোজা জানান, চুয়াডাঙ্গা, বাচামারা ঘোষপাড়া, কল্যাণপুর, বাচামারা উওর খন্ড, সুবুদ্দিয়া গ্রামের ৮ শতাধিক বাড়ি-ঘরে হাটু-কোমড় পানিতে তলিয়ে গেছে। আশ্রয় কেন্দ্রে কয়েক শত নারী-পুরুষ গরু-ছাগল নৌকা যোগে উদ্ধার করে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বন্যার পানিতে প্লাবিত পরিবারের বাড়িঘরের নামের তালিকা দেওয়া হয়েছে। তিনি সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাদের বন্যার্তদের পাশে এগিয়ে আসার আহবান জানান।

মানিকগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আলিমুজ্জামান মিয়া জানান, রোরো-আমন ধান এক হাজার হেক্টর, রোপার বীজতলার তিন হেক্টর ও পাঁচ হেক্টর শাকসবজি’র জমি ডুবে গেছে। এক সপ্তাহের বেশি এসব ফসল পানিতে ডুবে থাকলে ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে বলেও জানান তিনি।

happy wheels 2

Comments