‘মাদককে না, ক্রীড়াকে হ্যা বলুন’

‘মাদককে না, ক্রীড়াকে হ্যা বলুন’

বরেন্দ্র অঞ্চল থেকে শহিদুল ইসলাম

সময়টা বড়ো নিষ্ঠুর । কমে যাচ্ছে খেলার মাঠ । আগের মতো আর খেলাধুলা হয় না। তরুণরা পার্কে বসে বসে শুধু মোবাইল টিপে গেম খেলে, সুস্থ সংস্কৃতি ও খেলাধুলার চর্চার অভাবে অনেক সময় অজান্তেই তরুণরা মাদকের দিকে হাত বাড়ায়। গ্রাস করে নেয় একটি তাজা তরুণের জীবন । গ্রাস করে নেয় জাতির উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ।” কথাগুলো বলছিলেন বরেন্দ্র শিক্ষা সংস্কৃতি ও বৈচিত্র্য রক্ষা কেন্দ্রের তরুণ আহবায়ক জাওয়াদ আহমেদ রাফি। তিনি আরো বলেন, “আমাদের সকলের প্রচেষ্টায় তরুণদের উৎসাহের দিকগুলোতে এগিয়ে আসলে তরুণরা বিপদগামী হবে না। শুধু লোক দেখানো প্রোগ্রাম আর কর্মসূচি দিলেই হবে না। তরুণদের মনের কথা, তরুণরা কি করতে চায় সেটাও জানতে হবে।

Final

তারুণ্যই পারে সব বাধা ডিঙ্গিয়ে নতুন আলোয় আলোকিত হতে। রাজশাহীর তরুণরা দিনে দিনে তা প্রমাণ করে দিচ্ছেন। নানা মুখী বাস্তবধর্মী সমস্যাগুলো নিয়ে যেমন তারা নানা কর্মসূচি ও ক্যাম্পেইন করে নিজেদের মন ও মানসিকতা এবং শরীরকে ভালো রাখছেন। তেমনি এলাকার সমস্যাগুলো সমাধানে তরুণরা এগিয়ে আসছেন। লেখাপড়ার পাশাপাশি অবসরে তারা নিজেরা এই স্বেচ্ছাসেবী কাজগুলো করছেন।

রাজশাহীর এমন একটি ব্যতিক্রমধর্মী তরুণ সংগঠন জিরো পয়েন্ট সিক্স গ্র্যাভিটি রাইডার্স-০.৬ জিআরজেড (০.৬ এৎধারঃু জরফবৎু- ০.৬এজত)। সংগঠনটি সৃষ্টি হয় ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। সংগঠনটি গঠন করার পর থেকে রাজশাহীর অনেক তরুণ সদস্য হয়ে সাইক্লিং এর প্রাকটিস করেন এবং নিজেরাই সাইকেল চালিয়ে প্রয়োজনীয় কাজ সারেন। এই সংগঠনের তরুণরা সাইক্লিং এর মাধ্যমে নানামূখী সচেতনতা প্রচারে কাজ করেন। সাইক্লিং এর মাধ্যমেই তারা সমাজের ঘটে যাওয়া বৈষম্যের বিরুদ্ধে কথা বলেন। সাইক্লিং এর মাধ্যমে তারা প্রাণবৈচিত্র্য ধ্বংসের বিরুদ্ধে কথা বলেন। তরুণদের, মানুষদের সচেতন করেন। মাদকের বিরুদ্ধে সচেতনতা তুলে ধরেন। একই সাথে প্রতিদিন অবসরে তারা এই সাইক্লিং করে নিজেকে ব্যস্ত রাখেন। সাইক্লিং এর মাধ্যমে তারা যেমন জ্বালানির অপচয়রোধ করছেন তেমনি পরিবেশের উন্নয়নে ভূমিকা পালন করছেন। সাইক্লিং এর এই দলটি শুধু রাজশাহীতেও নয়, এই অল্প সময়ে তারা জাতীয় পর্যায়েও নিজেদের নাম লিখিয়েছেন। জাতীয় পর্যায়ে ২০১৬ সালে স্পিড ষ্টান্ট মাস্টার প্রতিযোগিতায় সারা বাংলাদেশে দলটির পক্ষে জুবায়ের আহমেদ দশম হয়েছিলো । আবার ২০১৭ সালেও পঞ্চম স্থান অর্জন করেছিলো।

Final-

চলমান কাজের অংশ হিসেবে এবার এই তরুণরা সম্প্রতি ‘মাদককে না,ক্রীড়াকে হ্যা বলুন’ এই শ্লোগানে রাজশাহীতে মাদক বিরোধী সাইকেল র‌্যালীর আয়োজন করেন। মাদকমুক্ত রাজশাহী গড়ার প্রত্যয়ে এবং খেলাধুলায় তরুণদের উৎসাহিত করতে রাজশাহী নগরীতে উক্ত সাইকেল র‌্যালীটির আয়োজন করে তরুণরা। র‌্যালিটি নগরীর বড়বনগ্রাম শহীদ জিয়া শিশু পার্কেরর সামনে তেকে শুরু হয়ে রেল গেট, সিএনবি, পদ্মাপাড়, জিরোপয়েন্ট, আলুপট্রিসহ বিভিন্ন প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে আবারো শুরুর স্থানে এসে শেষ হয়।

র‌্যালির ব্যভস্থাপনার দায়িত্বে থাকার তরুণ মোতাসিম বিল্লাহ রিফাত বলেন, “আমরা তরুণদের একটি সুস্থ আনন্দের ব্যবস্থা করছি, অনেক তরুণ এভাবেই দেখাদেখি আমদের সাথে এসেছে । মাদক থেকে দুরে আছে তারা।” তিনি আরও বলেন, “মাদক থেকে যুবকদের Final--সচেতন করতে এবং খেলার প্রতি মনোযোগ দিতেই আমরা এই আয়োজন করছি।” সংগঠনটির বর্তমান সভাপতি জুবায়ের হোসেন বলেন, “ক্রীড়ায় অংশগ্রহণ করলে তরুণরা মাদককে স্পর্শ করেনা। আমরা চাই সবাই সাইকেল চালিয়ে নিজের শরীর, স্বাস্থ্য ঠিক রাখুক, একই সাথে আমদের পরিবেশও ঠিক রাখুক।” তিনি আরো বলেন, “তরুণরা অবসরে সাইক্লিং করলে শরীর, মন এবং পরিবেশ দুটোই ভালো থাকে।” উক্ত র‌্যালিতে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী মহানগরের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার সরদার তমিজ উদ্দিন, সংগঠনটির সম্পাদক আবিদ হাসনাইনসহ প্রমূখ ব্যক্তিবর্গ।

বাংলাদেশের এক-তৃতীয়াংশই তরুণ জনগোষ্ঠী । তরুণরা পারেনা এমন কোন কাজ নেই। তারুণ্য শক্তিই রচিত করবে আমাদের সবুজ দেশ, সবুজ শক্তি। দেশের স্বাধীনতা অর্জনসহ সকল দুর্যোগকালীন সময়ে তরুণরাই কান্ডারি হিসেবে ভূমিকা পালন করেছে। প্রয়োজন শুধূ তরুণদের মনের কথা, তাদের দিকগুলো বিববেচনা করে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা। তাহলেই দেশ এগিয়ে যাবে।

happy wheels 2

Comments