সাম্প্রতিক পোস্ট

শিম বৈচিত্র্য গবেষণায় অল্পনা রানী

সাতক্ষীরা থেকে মননজয় মন্ডল

শিম বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান একটি শীতকালীন সবজি হিসেবে পরিচিত। শিম এর ইংরেজি নাম Bean ও বৈজ্ঞানিক নাম খধনষধন Lablab purpurcus. বাংলাদেশের সব অঞ্চলেই কমবেশি শিম চাষ করা হয়। সুস্বাদু ও পুষ্টিকর সবজি এই শিম বৈচিত্র্য নিয়ে গবেষণায় নামলেন ধূমঘাটের অল্পনা রানী।

অল্পনা রানীর শিম বৈচিত্র্য গবেষণা (1)

উপকূলীয় শ্যামনগরের অল্পনা রানী কৃষিতে অভাবনীয় ধারাবাহিক সাফল্যের পর এবার শিম গবেষণার দিকে বিশেষ নজর দিলেন। উপকূলীয় এলাকার জন্য শিম জাত নিরূপণের জন্য জাত গবেষণাটি পরিচালনা করছেন। তাঁর এই শিম জাত গবেষণায় গবেষণা উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান বারসিক সহযোগিতা করছে। নিজের সবজি ক্ষেত ও রাস্তার পাশের পুকুরের পাড়ে মোট ১৭ প্রজাতির শিম (লাল করমজা, জামাইকুলি, দেলপাট, বড়করমজা, সাদা নলকোশ, পাতরা নলকোশ, কলাশিম, লালশিম, পাতরা কার্তিকা, সবুজ নলকোশ, কার্তিকা, মটরশিম, কড়িশিম, নলকোশ, মাঝারি কার্তিকা, জল কার্তিকা, রেশমিলি) জাত গবেষণা করছেন। বিল থেকে ইঁদুরের গর্তের মাটি দ্বারা ২৬ জুলাই মাদা তৈরি করে পরদিন সবগুলো বীজ আলাদা আলাদাভাবে বপন করেন। প্রতিটি মাদায় চারটি করে বীজ বপন করেন। ১ থেকে ৩ আগস্ট এর মধ্যে শতকরা ৯৭ ভাগ বীজ অঙ্কুরোদগম হয়ে চারা তৈরি হয়। পর্যায়ক্রমে চারা বড় হয়ে ফুল ও ফল হতে শুরু করে। অল্পন রানী নিজ হাতে পোকামাকড়ের হাত থেকে রক্ষা পেতে নিম পাতা ও মেহগনির ফলের রস স্প্রে করেন। বর্তমানে প্রায় অর্ধেক গাছে শিম ধরতে শুরু করেছে। শিম গাছগুলো আলাদা রাখতে নেট, পাটা ও বাঁশ দ্বারা প্রতিটি জাতকে আলাদা রাখা হয়েছে।

অল্পনা রানীর শিম বৈচিত্র্য গবেষণা (2)

বঙ্গন্ধু জাতীয় কৃষি পদক প্রাপ্ত কৃষাণী অল্পনা রানী শিম গবেষণা বিষয়ে বলেন, “আমাদের এলাকায় নানা ধরনের শিম রয়েছে, এর মধ্য থেকে আমি গবেষণা করে দেখতে চাই যে, কোন জাতটি আমাদের জন্য বেশি জরুরি, কোনটির সময়কাল কত, কি পরিমাণ ফলন পাওয়া যায়, কোনটির স্বাদ ও পুষ্টি গুন কেমন, এসকল নানা বিষয় নিয়ে গবেষণাটি চলমান রেখেছি।”

শিমে শর্করা, প্রোটিন এবং ভিটামিন বি ও সি আছে। এর পরিপক্ক বীজে প্রচুর আমিষ ও স্নেহ জাতীয় পদার্থ আছে যে কারণে শিম ছোট বড় সকলের কাছে জনপ্রিয় সবজি। সিম ভাজি, ভর্তা ও তরকারি হিসেবে খাওয়া যায়। সিমের বীচি শুকিয়ে অনেকদিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায় এবং তা ভেজে খাওয়া যায়। যেহেতু সিমের চাহিদা সবার কাছেই আছে তাই সিম চাষ করে পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি অতিরিক্ত উৎপাদন বাজারে বিক্রি করে বাড়তি আয় করা সম্ভব। এছাড়া দেশের চাহিদা মেটানোর পর অতিরিক্ত উৎপাদন বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব।

অল্পনা রানীর শিম বৈচিত্র্য গবেষণা (3)

অল্পনা রানী শিম গবেষণার মধ্য দিয়ে উপকূলীয় এলাকার জন্য শিম জাত নির্বাচন করতে চান। নির্বাচিত জাত এলাকায় ব্যাপক চাষাবাদসহ সম্প্রসারণ ঘটবে। যা দ্বারা এলাকার কৃষকেরা পারিবারিক পর্যায়ে খুব সহজেই শিম ফসল উৎপাদনের মাধ্যমে লাভবান হবেন। একই সাথে শিম বৈচিত্র্য সুরক্ষা পাবে।

happy wheels 2

Comments