সেবাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জন্য স্বাস্থ্যসেবা

কলমাকান্দা নেত্রকোনা থেকে অর্পণা ঘাগ্রা, গুঞ্জন রেমা ও খায়রুল ইসলাম অপু

হাওরাঞ্চলে এখন শুকনো মৌসুমের নিদান/রুক্ষতা শুরু হয়েছে। মাঠ ঘাট ও খাল বিলের পানি শুকাতে শুরু করেছে। কাদাময় রাস্তায় মানুষ ও গবাদি পশুর পায়ের ছাপ স্পষ্ট হয়ে শুকিয়ে সব ধরনের যানবাহন চলার অনুপযুক্ত হয়ে রয়েছে দীর্ঘ ছয়-সাত মাস যাবৎ জলে নিমজ্জ্বিত রাস্তাগুলো। তাই এখন বড় হাওর অধ্যূষিত কলমাকান্দা উপজেলার রংশিংপুর গ্রামের নারী, গর্ভবতী মা ও শিশু, প্রবীণ ও প্রতিবন্ধীদের উপজেলা শহরে এসে চিকিৎসা গ্রহণ করাটা আরো যন্ত্রণাদায়ক হয়ে ওঠেছে। কারণ পায়ে হেটে প্রায় ৪ কি: মি: রাস্তা পাড়ি দিতে গিয়ে অনেকেরই অসুস্থতা আরো বেড়ে যায়। তাই প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রত্যাশীদের কথা বিবেচনা করে সম্প্রতি রংশিংপুর গ্রামে কৃষি উন্নয়ন সংগঠনের উদ্যোগে বারসিক ও কলমাকান্দা ব্র্যাক সংস্থার যৌথ সমন্বয়ের মাধ্যমে সেবা ও সুবিধাবঞ্চিত এই এলাকার জনগোষ্ঠীর জন্য স্বাস্থ্যসেবার আয়োজন করা হয়।

IMG_20171127_110514
ব্র্যাক সংস্থার স্বাস্থ্য ও পুষ্টি প্রকল্প থেকে ওজন ও প্রেসার মাপা হয়, ডায়বেটিস পরীক্ষা করা হয়, চোখের রোগীদের জন্য চোখ পরীক্ষা করে স্বল্প মূল্যে চশমা দেয়া হয় এবং যার যার প্রয়োজন অনুসারে ঔষধ তারা নিজেরাই ক্রয় করে নেয় স্বল্প মূল্যে। রোগীদের মধ্যে অধিকাংশই ছিল নারী, শিশু, প্রবীণ ও প্রতিবন্ধী। কারণ যাতায়াত ব্যবস্থার দূর্দশার ফলে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে সেবা নেয়ার ক্ষেত্রে তারাই সবচেয়ে বেশি সমস্যায় ভোগেন।

এই প্রসঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে কয়েক ধরনের রোগে আক্রান্ত হেনা সরকার (৪৫) বলেন, “আমি দূরে কোথাও হাইট্টা (হেটে) যাইতে পারিনা। পায়ে ও কোমরে ব্যাথা। হাই প্রেসারও আছে। কলমাকান্দায় হাইট্টা গেলে আমি আরো দূর্বল হইয়া যায়। তাই স্বামী আর ছেলের কাছে সমস্যার কথা কই। হেরাই ঔষধ আইন্যা দেয়। আইজ নিজের সমস্যা নিজে কইয়া ঔষধ নিতে পারতাছি।”

IMG_20171127_113408
বাসন্তী রানী সরকার (৭৫) বলেন, “এই বয়সে আর কলমাকান্দায় গিয়া চিকিৎসা নিতে পারিনা। বর্ষাকালে ঠিকমত নৌকা পাওয়া পায়না আর শুকনা মৌসুমে অনেকদূর রাস্তা হাটতে হয়। আইজ বাড়ির কাছে চিকিৎসা নিতে পাইরা খুবই উপকার হইছে।”

আদর সরকার (৭৮) বলেন, “হাতে টাকা থাকলেও অনেক সময় আমরা ঔষধ কিনার লাইগ্যা যাইতে পারিনা। তাই রোগে ধরলেও সহ্য কইরা থাকি। খুব বেশি সমস্যা হইলে না পাইরা অনেক কষ্ট কইরা বাধ্য হইয়া যাই।”
ব্র্যাক স্বাস্থ্য ও পুষ্টি প্রকল্পের কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন বলেন, “দূর্গম ও দূর্গত এলাকার সেবাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীদের জন্য গ্রামে গ্রামে সেবা পৌছে দেয়া আমাদের কর্তব্য। যেসব সরকারি ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্য সেবা দিচ্ছেন তারা গ্রামে এসে চিকিৎসা সেবা প্রদান করলে নারী, শিশু, প্রবীণ ও প্রতিবন্ধীরা স্বাস্থ্যসেবায় প্রবেশাধিকারের সুযোগ লাভ করবে।

happy wheels 2

Comments