সাম্প্রতিক পোস্ট

মানিকগঞ্জ জেলার প্রথম স্মৃতির মিনার

মানিকগঞ্জ জেলার প্রথম স্মৃতির মিনার

মানিকগঞ্জ থেকে এম.আর.লিটন

‘স্মৃতির মিনার / ভেঙ্গেছে তোমার? ভয় কি বন্ধু / আমরা এখনো / চার কোটি পরিবার / খাড়া রয়েছি তো। যে-ভিৎ/কখনো কোনো রাজন্য/পারেনি ভাঙ্গতে।’

‘৫২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি পুলিশের হাতে প্রথম শহীদ মিনার ধ্বংসের প্রতিক্রিয়ায় কবি আলাউদ্দিন আল আজাদ রচনা করেন কবিতা ‘স্মৃতিস্তম্ভ’ সেই কবিতার চরণ এখানে তুলে ধরা হয়েছে।

মাতৃভাষা বাংলার দাবিতে দেশব্যাপী যে আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে ওঠে, তার প্রভাব রাজাধানী ঢাকার বাইরেও ছড়িয়ে পড়ে। ঢাকার অদূরে মহকুমা শহর মানিকগঞ্জে মাতৃভাষা বাংলার দাবিতে গঠিত হয় মাতৃভাষা আন্দোলন সংগ্রাম পরিষদ। ১৯৪৮ হতে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত উক্ত সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে আন্দোলন চলতে থাকে। মূলত মানিকগঞ্জ জেলার ঘিওর থানার তেরশ্রীতে এই আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে।

Minar.

১৯৫২ সনে ২১ ফেব্রুয়ারির পর ভাষা শহিদদের স্মরণে মানিকগঞ্জের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঢাকার অনুরূপ শহিদ মিনার তৈরি করা হয়। কিন্তু সরকারি কর্তৃপক্ষ ‘৫২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি পুলিশের সহায়তায় সবগুলো শহিদ মিনার ভেঙে ফেলে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহিদ নির্মাণে কর্তৃপক্ষের বাধার কারণে ছাত্র ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ অ্যাডভোকেট আ.লতিফ বিশ্বাসের বাসার সামনে শহিদ মিনার তৈরি করে। শহিদ মিনার নির্মাণের জন্য এগিয়ে এলেন যুক্তফ্রণ্ট সরকারের সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ বিশ্বাসের সহধর্মিনী উম্মে সাহেরা খাতুন। ১৯৫২ সাল থেকে অদ্যাবধি ঐ শহিদ মিনারটি মানিকগঞ্জের প্রথম শহিদ মিনার হিসেবে টিকে আছে ।

মানিকগঞ্জ শহরে শহিদ মিনার নির্মাণেরর খবর পাওয়া মাত্র তখনকার এসডিও এ.কে. দত্ত চৌধুরী পুলিশ নিয়ে হাজির হলেন শহিদ মিনার ভাঙ্গার জন্য। শহিদ মিনারের মাঝখানে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করলেন উম্মে সাহেরা খাতুন ।তিনি বললেন, “আমার জায়গায় আমি শহিদ মিনার বানিয়েছি। কার সাহস তা ভাঙে?” তার এই কথায় থেমে গেলেন এসডিও এবং পুলিশ বাহিনী শহিদ মিনার ভাঙার সাহস পেলেন না।

Minar

২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৪, ছাত্রজনতার ঢল নেমেছিল এই শহিদ মিনারের বেদীতে। ফুলে ফুলে রঙ্গিন হয়ে গিয়েছিল শহিদ মিনারের বেদী। কিন্তু ১৯৭১ সালে ২৫ মার্চের পর এ শহিদ মিনারটি মাটির সাথে মিশিয়ে দেয় পাকহানাদার বাহিনী। ১৯৭২ সাল। দেশ স্বাধীন হবার পর ঠিক একই স্থানে একইভাবে পুনরায় গড়ে তোলা হয় শহিদ মিনারটি।

২০০৭ সালে মানিকগঞ্জ সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে প্রশাসনের উদ্যোগে মানিকগঞ্জের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার নির্মিত হলে প্রায় পরিত্যক্ত হয়ে মিনারটি। সাংস্কৃতিক কমী-সংগঠকদের দাবির মুখে মানিকগঞ্জ পৌরসভা মূল শহিদ মিনারটির আদল বদলে দিয়ে সিরামিক টাইলস লাগিয়ে নতুন করে এটাকে গড়া হয়।

কিন্তু দুঃখের বিষয়, শহিদ মিনারটি এখনো পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে । মিনারটি সংস্কাররের কোন উদ্যোগ নেই ।এ স্মৃতিস্তম্ভ দেখলে বুঝা যায় না এটা কোন শহীদ মিনার ।শিশুসহ অনেক লোক জুতা পায়ে এ শহিদ মিনারের উপর দিয়ে হাটা-চলা করে ।এমন অবস্থায় প্রশাসনের দায়িত্ব শহিদ মিনারটি সংরক্ষণ করে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা । তাহলেই আমরা নিজের বিবেকের কাছে সৎ থাকবো।

 

happy wheels 2

Comments