পারিবারিক ওষুধের চাহিদা মেটায় তেলাকুচা

পারিবারিক ওষুধের চাহিদা মেটায় তেলাকুচা

সাতক্ষীরা থেকে বাহলুল করিম

ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রণে, মাথা ঠাণ্ডা রাখতে, ত্বকের যে কোন সমস্যায়, রক্ত জমাট বাঁধতে, গ্যাসট্রিক সমস্যায়, লিভার ও পাকস্থলি ভালো রাখতে, প্রসাবের সমস্যায়, মুখের রুচি বাড়াতে তেলাকুচা মহাঔষুধের মতো কাজ করে। পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ এই শাক রান্না করেও খাওয়া যায়। এছাড়া তেলাকচুর ফল পাখিরা খায়।

রাস্তার আশেপাশে, ঝোপঝাঁড়ে, পতিত জমিতে, বাড়ির আনাচে-কানাচে ও বেড়ায় তেলাকুচা গাছ দেখতে পাওয়া যায়। এর পাতা গাড় সবুজ বর্ণের হয়। লতা জাতীয় উদ্ভিদ এজন্য যে কোন জিনিসের উপর ভর করে বেড়ে ওঠে।

তবে সাতক্ষীরাতে এটি তেলাকচু নামে অধিক পরিচিত। এটি শাক হিসেবে রান্না করেও খাওয়া যায়। এই শাক খেতে খুব সুস্বাদু। তেমনি এতে রয়েছে ঔষধি গুণাগুণ।

Telakuca 1

এ ব্যাপারে কাটিয়া সরকার পাড়ার বাসিন্দা নার্গিস আক্তার বলেন, “তেলাকচু পাতার রস মাথায় মাখলে মাথার তালু ঠা-া হয়। এছাড়া আমি সবজি হিসেবেও রান্না করে খাই। তেলাকচু শাক শরীরের জন্য খুবই উপকারী। এই শাক খেলে মুখের রুচি বাড়ে ও পেট ঠাণ্ডা থাকে।”

মৃগীডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা সপ্না খাতুন বলেন, “আমি প্রতিদিন সকালে এক গ্লাস তেলাকচু পাতার রস খাই। এতে আমার ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রণে আছে। আমি এই পাতার রস খেয়ে মোটামুটি সুস্থ আছি।”

শহরের পুষ্টির ফেরিওয়ালা রুহুল কুদ্দুস বলেন, “যাদের মাথা প্রচণ্ড গরম হয় এর পাতা হাতে ঘঁষে মাথার তালুতে দিলে মাথা ঠাণ্ডা হয়। পাতা বেঁটে সমস্ত শরীরে মাখলে ত্বক পরিষ্কার হয়। শরীরের কোথাও কেটে গেলে তেলাকুচা পাতার রস লাগালে রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যায়। পায়ের তলা জ্বালা করলে এর পাতা পিঁষে লাগালে ভালো উপকার হয়।”

Telakuca 2

তিনি আরও বলেন, “তেলাকচুর পাতার রস খেলে ঘুম ভালো হয়। এর রস মধুর সাথে মিশিয়ে খেলে গ্যাসট্রিক সমস্যার ভালো উপকার পাওয়া যায়। এই শাক রান্না করে খেলে লিভার ভালো রাখে ও পাকস্থলি ঠাণ্ডা করে। এর পাতার রস খেলে প্রসাবের সমস্যায়ও ভালো উপকার হয়।”

মুক্তকোষ উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে, ‘তেলাকুচা এক প্রকার ভেষজ উদ্ভিদ। এর বৈজ্ঞানিক নাম Cephalandra indica I Coccinia indica।

অনেকের কাছে এটি কুচিলা, তেলা, তেলাকুচা, তেলাহচি, তেলাচোরা, কেলাকচু, কেলাকুচ, তেলাকচু, বিম্বী নামে পরিচিত। এর ইংরেজি নাম Ivy Ground, Baby Watermelon, Little Ground, Gentleman’s toes।

তেলাকুচা ক্রান্তীয় অঞ্চলের এক ধরণের লতানো উদ্ভিদ। নরম কাণ্ড ও পাতা বিশিষ্ট বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ এটি। তেলাকুচার কা- থেকে এক ধরণের আকশী বের হয়। আকশীর সাহায্যে অন্য গাছকে জড়িয়ে উপরে ওঠে। এর পাতা পঞ্চভূজ আকারে গজায়। পাতা ও লতার রঙ সবুজ।

Telakuca 2

তেলাকুচার পুরাতন মূল শুকায় না। গ্রীষ্মকালে মৌসুমী বৃষ্টি হলে মূল থেকে গাছ হয় ও নতুন করে পাতা গজায়। কয়েক বছর ধরে পুরাতন মূল থেকে গাছ হয়। শীতকালে তেলাকুচার ফুল ও ফল হয় না। কিন্তু অন্যান্য মৌসুমে ফুল ও ফল হয়। ফল ধরার চার মাস পর পাকে। ফল পাকলে টকটকে লাল বর্ণ ধারণ করে। তেলাকুচায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে বিটা-ক্যারোটিন। এছাড়া রয়েছে এন্টিহিস্টামিন জাতীয় উপাদান।’

তেলাকুচা শাক ওষুধের পাশাপাশি পারিবারিক পুষ্টির চাহিদাও মেটায়। পতিত জমিতে এই শাক চাষ করে পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা মেটানো সম্ভব। তেলাকচু নষ্ট না করে এর গুণাগুণ তুলে ধরে সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এটার ব্যবহার ও সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।

happy wheels 2

Comments