রোগ নিরাময় করে বাসক পাতার রস

রোগ নিরাময় করে বাসক পাতার রস

সাতক্ষীরা থেকে এস.এম নাহিদ হাসান

চল্লিশ বছর বয়সী রাশিদা পারভীন বর্তমানে সাতক্ষীরা শহরের উত্তর কাটিয়াতে বাস করেন। এখন থেকে ১৫-২০ বছর আগের কথা। রাশিদা পারভীনের ছোট দুই ছেলেরা যখন একটু ঠাণ্ডা, জ্বর, সর্দি, কাশিতে আক্রান্ত হতো তখন তিনি খুঁজতেন বাসকের পাতা। বাসক পাতার রস ১-২ চামচ হাফ থেকে এক চামচ মধুসহ খাইয়ে সন্তানদের সুস্থ করতেন। এখনো তিনি বিভিন্ন রোগ থেকে দূরে থাকতে বাসক পাতার রস ব্যবহার করেন।

বর্তমান সময়ে অনেকেই বাসকের পাতার রস খান না। সময় পরিবর্তনের সাথে সাথে মানুষের মনের অবস্থাও পরিবর্তন হয়েছে। একটু কিছু হলেই আমরা ছুটে যায় ডাক্তারের কাছে। কিন্তু রোগ নিরাময়ের জন্য ডাক্তার যে ওষুধ দেন তার অধিকংশ ওষুধের কাঁচামাল বিভিন্ন ভেষজ গাছ। তেমনি অনেক ওষুধের প্রধান উপাদান এ বাসক পাতা। না জানার কারণে ওষুধি গুণে ভরা বাসক পাতা রোগ নিরাময়ের জন্য ব্যবহার করতে পারি না।

IMG_20180510_100757

আমাদের চারপাশে একটু খেয়াল করলেই বাসক গাছ দেখতে পাবো। এটা একটি ভেষজ উদ্ভিদ। ‘বাসক’ এর বৈজ্ঞানিক নাম আডাটোডা বাসিকা। হিন্দিতে বলা হয় ‘আডুনা’, বানসা’ অথবা ‘ভাসিকা’। তবে বাংলাদেশে প্রায় সব এলাকায় ‘বাসক’ নামে পরিচিত।

বাসক আর্দ্র সমতল ভূমিতে ভালো জন্মে। পানি জমে থাকে না এমন জমিতে এ গাছ বেশি দেখা যায়। গ্রাম কিংবা শহর যেখানে যাবেন এ গাচ দেখতে পাবেন। রাস্তার দু’ধারে, পুকুর ডোবার পাশে বাসকের বিচরণ রয়েছে। তবে বাসক গাছের গুরুত্ব জেনে অনেকে বসত বাড়ির আশপাশেও এ গাছ চাষ করেন। বাসকের নানা ওষুধি গুণ থাকায় অনেক ওষুধ কোম্পানি আনুষ্ঠানিকভাবে বাসকের চাষ করেছেন। এর মধ্যে একমি কোম্পানি অন্যতম।

গাঢ সবুজ পাতার বাসক গাছ সহজেই চেনা যায়। হালকা হলুদে রঙের ডালপালাযুক্ত ১ থেকে ২ মি. উঁচু গাছ হয়। ঋতুভেদে সর্বদায় গাছটি সবুজ থাকে। বল্লমাকারের পাতা বেশ বড় হয়। পাতাগুলো লম্বাটে হয়। ফুল ঘন হয়, ছোট স্পাইকের ওপর ফুটে থাকে। স্পাইকের বৃন্ত পাতার চেয়ে ছোট হয়। স্পাইকের ওপর পাতার আকারে উপপত্র থাকে যার গায়ে ঘন এবং মোটা শিরা থাকে। সাদা ও বেগুনী রঙের ফুল হয়। ফল কিছুটা সুপারি আকৃতির হয়।

IMG_20180510_100804

নানা ওষুধি গুণ রয়েছে এই বাসক পাতায়। শুকনো অথবা তাজা বাসক পাতা, মূল, ফুল, ফল সবই ওষুধ হিসেবে কাজে লাগে। বাসকে ‘ভাসিসিন’ নামক ক্ষারীয় পদার্থ এবং তেল থাকে। যা শ্বাসনালীর লালাগ্রন্থিকে সক্রিয় করে। সর্দি, কাশি এবং জ্বর নিরাময়ে বাসক পাতার নির্যাসের জাদুকারী গুণ রয়েছে। বাসক পাতায় বিশেষ কিছু ক্ষারীয় পদার্থ আছে। যার ফলে ছত্রাক জন্মায় না এবং কোনকিছুতে পোকামাকড় ধরে না। তাই ফল প্যাকিং ও সংরক্ষণের কাজে বাসক পাতার ব্যবহার বাড়ছে।

যুগ যুগ ধরে মানুষ বাসক পাতা থেকে বিভিন্ন উপকার নিয়ে আসছে, গোসলের আগে কয়েক দিন বাসক পাতার রস মাথায় দিলে উকুন থাকে না। বাসকের ফুল বেটে মিশ্রি দিয়ে শরবত খেলে প্রসাবের জ্বালাপোড়া উপশম হয়। বাসক পাতার রস শ্বাস কষ্ট কমাতে বেশ উপকারী।
অনেকে বাসকের কচি পাতা বাটা দাদ ও চুলকানি থেকে মুক্ত পেতে ব্যবহার করেন। জন্ডিস, দাঁতের মাড়ির ফোলা, গায়ের দুর্গন্ধ দূর করতে বাসক পাতা বিভিন্নভাবে ব্যবহার করেন।

IMG_20180510_100833

বাসক পাতা সম্পর্কে কবিরাজ নির্মল সরকার বলেন, “বাসক পাতার রস স্নানের আধ ঘণ্টা আগে মাথায় কয়েক দিন মাখলে উকুন মরে সাবাড় হয়। যদি বুকে কফ জমে থাকে এবং তার জন্য শ্বাসকষ্ট হয় বা কাশি হয় তা হলে পরিমাণমত বাসক পাতার রস মধুসহ খেলে কফ সহজে বের হয়। কারো প্রসাবের জ্বালা-যন্ত্রণা থাকলে বাসকের ফুল বেঁটে ২-৩ চামচ ও মিছরি ১-২ চামচ শরবত করে খেলে এই রোগে উপকার আসে।”

তিনি আরো বলেন, “বাসক পাতা বা ফুলের রস ১-২ চামচ মধু বা চিনি ১ চামচসহ প্রতিদিন খেলে জন্ডিস রেগে উপকার পাওয়া যায়। যাঁদের হাঁপানির টান আছে তাঁরা বাসক পাতা শুকনো করে, ওই পাতা বিড়ি বা চুরুটের মতো পাকিয়ে, তার সাহায্যে ধূমপান করলে শ্বাসকষ্ট কম হয়। এছাড়া এক কলসি জলে তিন-চারটি বাসক পাতা ফেলে তিন-চার ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখার পর সেই জল বিশুদ্ধ করে ব্যবহার করতে পারেন। তবে মনে রাখবেন বাসক পাতার রস বেশি খেলে বমি হতে পারে।”

happy wheels 2

Comments