সাম্প্রতিক পোস্ট

অন্তর বাজলে যন্তর বাজে

অন্তর বাজলে যন্তর বাজে

চাটমোহর, পাবনা থেকে ইকবাল কবীর রনজু
“অন্তর বাজলে যন্তর বাজে। আর অন্তর বাজানোর জন্য চাই সুর। সুরের জন্য হারমোনিয়াম, খোল, নাল, তবলা, ডুগি, কাঠি ঢোল, ঢোলক, ড্রামসেটসহ অন্যন্য প্রাসঙ্গিক যন্ত্রপাতির বিকল্প নেই। আমি চৌত্রিশ বছর যাবত এসকল বাদ্যযন্ত্র মেরামত ও তৈরি করে আসছি। আমার দাদা এ পেশায় জড়িত ছিলেন। বাবা ও এ পেশা অবলম্বন করে জীবিকা নির্বাহ করেছেন। আমি এবং আমার ছেলে ও এ পেশায় জড়িত। এটি আমাদের অন্তত চার পুরুষের জীবন জীবিকার উৎস”। প্রায় ৭০ বছর বয়ষ্ক মংলা দাস তার জীবন জীবিকা প্রসঙ্গে উপরোক্ত কথাগুলো বলেন।

baddo jontro-3

মংলা দাস বলেন, “আমার জন্মস্থান পাবনার চাটমোহরের বাহাদুরপুর গ্রামে। পরিবার বসবাস করেন জয়পুরহাট সদরে। বাপ দাদার বাড়ি ছিল পাবনার নগরবাড়ি ফেরিঘাটের পাশে। বাইশ বিঘা জমি ও সাড়ে তিন বিঘা বাড়ির সবটুকুই চলে গেছে রাক্ষসী যমুনার পেটে। যমুনায় সব হারিয়ে যাবার পর বাবা জগবন্ধু দাস চাটমোহরের বাহাদুরপুরে চার শতক জমি কিনে বসতি স্থাপন করেন। আমার জন্ম বাহাদুরপুর গ্রামে। আমার আর একটি বড় বোন ছিল। আমাকে জন্ম দেওয়ার তিন মাস পর আমার মা সুধী দাস মারা যান।”

baddo jontro-4

তিনি আরও বলেন, “আমার পিসি স্বরসত্বী দাস তখন পাঁচবিববির হিলিতে বসবাস করতেন। পিসি আমার বড় বোনকে হিলিতে নিয়ে যান এবং সেখানেই তাকে লালন পালন করে বিয়ে দেন। তিন মাস বয়সী আমি বাবার কাছেই থাকতাম। শুনেছি বাবা যখন যেখানে যেতেন আমাকেও ঘাড়ে করে নিয়ে যেতেন। সবাই বাবাকে দ্বিতীয় বিবাহ করার কথা বললেও বাবা আমার কথা ভেবে তখন দ্বিতীয় বিবাহ থেকে বিরত থাকেন। দাঁথিয়া কয়রাপাড়ার গনেশ নামক এক ব্যক্তি আমাকে বাঁচাতে অন্য কাউকে দিয়ে দিতে বললেও বাবা নাকি রাজি হন নি। বাবা নাকি বলতেন এ কি বিড়াল কুকুরের বাচ্চা যে কাউকে দিয়ে দেবো। মংলা মারা যায় আমার হাতেই মারা যাক! তখন গণেশ নামক উক্ত ব্যক্তি বিনা টাকা পয়সায় সাত বছর আমার খাওয়ার দুধ দেয়। তখন বাহাদুরপুর এলাকায় খুব বেশি জনবসতি ছিল না।” তিনি বলেন, “চাটমোহর থানার সামনে উনিশ বছর বাদ্যযন্ত্র তৈরি ও মেরামতের কাজ করেছি। পনেরো বছর যাবত ভাদ্রা বাইপাস মোড়ে এ কাজ করছি। ছোট বেলায় বাবার কাছে কাজ শিখেছি। হারমোনিয়াম, খোল, নাল, তবলা, ডুগি, কাঠি ঢোল, ঢোলক, ড্রামসেটসহ চামড়ার বিভিন্ন যন্ত্রপাতি তৈরি ও মেরামত করি। চাটমোহর একে তো মফস্বল শহর তারপর শহরের বাইরে দোকান করেছি। মোটামুটি কাজ পাই। বসে থাকতে হয় না। জমা জমি করতে পারিনি। সারাবছর খেয়ে পরে ত্রিশ চল্লিশ হাজার টাকা উদ্বৃত্ত থাকে। কোন মতে দিনপাত চলে যাচ্ছে এই আর কি।”

baddo jontro-5

বাদ্য যন্ত্র মেরামতকারী মংলা দাসের কষ্টের জীবন। স্বপ্নের মতো। ছোট বেলা মানুষের সাহায্য সহযোগিতায় বড় হয়েছেন। এখন আর কারো কাছে হাত পাততে হয় না তাকে। ছেলে বিশু দাস ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে। সে বাবাকে সহায়তা করে। নাটোর থেকে প্রয়োজনীয় চামড়া কিনে কাজ করেন। ডুগির বডি, রিং, বিড়া ঢাকা থেকে আনতে হয় তাদের। কাঠের ঢোল ও ঢোলকের বডি আনেন মানিকগঞ্জ থেকে। ঢোল ৪ থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকায়, ঢোলক ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৫শ’ টাকায়, ডুগি তবলা সেট ৫ হাজার, মাটির ডুগি তবলা সেট ২ হাজার থেকে দুই হাজার ৫শ’ টাকায়, মাটির খোল আড়াই হাজার টাকা থেকে তিন হাজার টাকায় বিক্রয় করেন তিনি। সব মিলিয়ে ভালো আছেন বাদ্য যন্ত্র মেরামত ও প্রস্তত কারক মংলা দাস।

happy wheels 2

Comments