তবুও স্বপ্ন দেখেন সজীব

কুমিল্লা থেকে সজীব বণিক

শৈশবে রাইস মেশিনে ডান হাত হারান সজীব। তারপরও আত্মবিশ্বাস ও চরম দারিদ্রতাকে জয় করে সজীব এগিয়ে চলেছেন অদম্য গতিতে। কৃষক ঘরের সন্তান সজীব মিয়া।

কিন্তু কঠিন সত্য হচ্ছে, বাবা মো. গোলাম মোস্তফা সামান্য জমিতে যা উৎপাদন করতেন তা দিয়েই কোনোরকমে সংসার চলতো তাদের। সংসারের চরম অস্বচ্ছলতার কারণে শৈশবে ডান হাত হারানো সত্ত্বেও কাজ করতে হয়েছে অবিরাম।

বাবা মো. গোলাম মোস্তফার কঠোর পরিশ্রমই বলে দিচ্ছে, সজীব মিয়ার পথচলা কতোটা কঠিন ছিল। বর্তমানে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে তৃতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত আছেন তিনি। তার কাছ থেকে সাক্ষাৎকার নেওয়ার পর সজীব জানালেন, এগিয়ে চলার গল্প, বললেন স্বপ্নের কথা। সজীব বলেন, “অসংখ্য-অগণিত বাধা ডিঙিয়ে আজ এ অবস্থানে এসেছি। সর্বক্ষেত্রে লড়াই করতে হয়েছে। অভাব অনটনের সংসার থাকা সত্ত্বেও আমার এক হাত দিয়ে কোনো ভারী কাজ করতে পারতাম না। এমতাবস্থায় আমার পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া অকল্পনীয় ছিল।”

কিন্তু তবু দমে যাননি সজীব। সজীব বলেন, “এতে আমি কখনোই মনোবল হারাইনি। বাড়িতে পড়াশোনার তেমন সুযোগ ছিল না তারপরও অভাব অনটনের মধ্য দিয়ে শিক্ষক ও সহপাঠীদের অনুপ্রেরণায় স্কুলজীবন শেষ করি। কলেজ জীবনে তারপরও কঠোর পরিশ্রম করে শেষ করতে হয়েছিল । বাবার সাথে ভারী কাজ ব্যতীত জমি উর্বর করা, ধান রোপণ, পরিচর্যা, অনেক কাজই করতে হয়েছে। ভর্তির পরও এক হাত দিয়ে যতোটুকু পেরেছি কাজ করে পড়ালেখার খরচ চালাতে হয়েছে।”

1এসএসসিতে সজীবের ফলাফল ছিল জিপিএ ৩.৩১ এবং এইচএসসিতে ৩.৮০। ফরিদ উদ্দিন সরকারি ডিগ্রী কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে ভর্তি হন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে।

বাবা মো. গোলাম মোস্তফা ও মা পারভীন বেগমের সন্তান সজীব মিয়া।তিনি জন্মগ্রহণ করেন কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর থানার আকুবপুর ইউনিয়নে। পরিবারে বাবা-মা ছাড়াও আছেন আরো এক ভাই এবং দুই বোন। তন্মধ্যে সজীব দ্বিতীয়। সব মিলিয়ে ছয় সদস্যের পরিবার তাদের। সংসারের হাল ধরতে গিয়ে তার বড় ভাই পড়াশোনা করার সুযোগ পায়নি। আর ছোট দুই বোন পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন। মাস শেষে বাবার সামান্য টাকা আর নিজে টিউশনের টাকায় টেনেটুনে চলছে সজীবের পড়ালেখা।’তারপরও বাবার প্রতি কৃতজ্ঞতার শেষ নেই সজীবের।

সজীব বলেন, “আমার এ পর্যন্ত আসার পেছনে সবচেয়ে বেশি অবদান বাবার। উনার উৎসাহ, প্রেরণা না পেলে এ পর্যন্ত আসা সম্ভব হতো না। আমার জন্য অনেক বেশিই করেছেন তিনি।”

সজীব অনেক বড় স্বপ্ন দেখছেন । ডান হাত নেই অথচ নিজেকে আলোকিত মানুষ তৈরী করে দেশ গড়ার স্বপ্ন বুনে চলেছেন তিনি।

সজীব বলেন, “নিজের অনেক প্রতিকূলতা ভেদ করে যেহেতু এতো দূর আসতে পেরেছি তাহলে অবশ্যই ভবিষ্যতে আমার স্বপ্নকে যেভাবেই বাস্তবায়ন করতে হবে এবং সেই অনুযায়ী পরিশ্রম করে যাচ্ছি। ভবিষ্যতে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার হয়ে দেশের জন্য ভালো কিছু করতে চাই।”

সজীব বলেন, “কৃষকের পরিবার থেকে আজ আমি এ পর্যন্ত এসেছি। ডান হাত ছিল না তারপরও বাবার কম পড়াশোনা থাকা সত্ত্বেও তিনি মনে করেছিলেন আমাকে যেভাবেই হোক পড়াশোনা করাবেন অর্থ্যাৎ  আমার বাবার অনুপ্রেরণা, সাহস আমাকে পথচলতে সাহায্য করেছে। কিন্তু দেশে অনেকে আছে যারা নিজের কোনো অঙ্গহানি হলে কারো ভরসা পাননা,নিজের স্বপ্ন পূরণকে দূর্বল করে দেখেন বলে এগোতে পারেনা, অনুপ্রেরণা পাচ্ছে না,চিকিৎসাহীন, বিভিন্ন সুবিধা বঞ্চিত  শিশু, কিশোর, যুবক যারা হতাশায় আচ্ছন্ন তাদের জন্য যদি কিছু করতে পারি, তবে সেটাই হবে আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া “

happy wheels 2

Comments