করোনাকালীন বাজেট হোক কৃষি ও কৃষকবান্ধব
সিংগাইর মানিকগঞ্জ থেকে শাহীনুর রহমান
অদৃশ্য এক ভাইরাসের হঠাৎ যেন থমকে গেছে সারা দুনিয়া। চীনের উহান প্রদেশে প্রথম শনাক্ত হওয়া এই ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বের প্রায় সকল দেশেই। বাংলাদেশে এই ভাইরাসটি প্রথম শনাক্ত হয় ৮ মার্চ। জাতিসংঘ অনেক আগেই করোনা ভাইরাসে মহামারি হিসেবে ঘোষণা করেছে। দুনিয়াজুড়ে সৃষ্ট করোনার প্রাদুর্ভাবে বাংলাদেশসহ মহাসংকটে বৈশ্বিক অর্থনীতি। দেখা দিতে পারে খাদ্য সংকট ও খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার তথ্য মতে, করোনার কারণে সারাবিশ্বে প্রায় ১৬০ কোটি মানুষ বেকার হবে। জাতিসংঘ এবং বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি-ডব্লিউএফপি বলেছে, করোনা ভাইরাসের প্রভাবে বিশ্বজুড়ে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা প্রায় ৪০ থেকে ৬০ কোটি বৃদ্ধি পেতে পারে এবং এই ভাইরাসের প্রভাবে বিশ্বে বড় আকারের দুর্ভিক্ষ হতে পারে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশ কিভাবে এই সংকট মোকাবেলা করবে এ আলোচনা এখন সকলের মাঝে। এ বিষয়ে বারসিক সিংগাইর কর্ম এলাকার বাংগালা, কাস্তা, ছোট কালিয়াকৈর,ব্রী কালিয়াকৈর, বায়রা, নয়াবাড়িসহ ৬টি গ্রামে ৩০ জন কৃষক মোবাইল ফোনে তাদের মতামত ব্যক্ত করেন। তারা বলেন, ‘বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। আমাদের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি হলো কৃষি। কারণ এদেশের অধিকাংশ মানুষ বিশেষভাবে কৃষির সঙ্গে জড়িত। তাদের জীবিকার একমাত্র উৎসও এই কৃষি খাত। কিন্তু দিন দিন কৃষির নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে। সিডর আইলা, সুনামি, ফণী, বুলবুল, আম্পান এর মত প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করে কৃষি ও দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করেছেন কৃষকরা। বর্তমান করোনাকালিন সময়ে দেশে দীর্ঘ লকডাউনে স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত, কলকারখানা, পরিবহন, সুপার মার্কেট, রেস্তোরাঁ, জনগসামগম সব বন্ধ থাকলেও বন্ধ ছিল না কৃষকের কৃষি কাজ’। তারা আরও বলেন, ‘দেশের সকল বিপর্যয়ে কৃষকই এগিয়ে এসেছেন বারবার। খাদ্যযোদ্ধা কৃষক কখনোই মনে করেননি দেশে লকডাউন চলছে। কাজেই করোনাকালিন খাদ্য সংকট নিরসনসহ,সকলের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং দেশীয় অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি অর্জনে কৃষক ও কৃষি সংশ্লিষ্ট খাতকে সরকারের বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে আগামি বাজেটে। আগামি মাসেই মহান সংসদে মাননীয় অর্থমন্ত্রী ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করবেন। সেই বাজেট হতে হবে কৃষি ও কৃষকবান্ধব।’
এ প্রসঙ্গে বলধারা ইউনিয়ন কৃষি উন্নয়ন সংগঠনের সভাপতি মোঃ হযরত আলী বলেন, ‘বাজেট হতে হবে গণমুখী বাজেট, ঘোষিত বাজেটে সকল ভুমিহীন, প্রান্তিক, ক্ষুদ্র ও নারী কৃষকের অধিকারকে প্রাধান্য দিয়ে কৃষি নিরাপত্তা ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে অতিরিক্ত বাজেট বরাদ্দ করতে হবে। কৃষি খাতের ব্যবহৃত জমিগুলো কৃষি খাতে ব্যবহার ও কৃষকের পছন্দ অনুযায়ি,বৈচিত্র্যময় ফসল চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করতে প্রণোদনা বৃদ্ধি করতে হবে।’ অন্যদিকে সিংগাইর উপজেলা কৃষি উন্নয়ন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মোঃ ঈমান আলী বলেন, ‘একসময়ে কৃষি খাতে সরকারি বাজেট ছিল বেশি কিন্তু বর্তমান বাজেটে মূল বাজেটের সাথে কৃষি বাজেট থাকে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। তাই আসন্ন বাজেটে কৃষি কাজে পর্যাপ্ত পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ দিতে হবে। যাতে করে কৃষকের সার, কৃষকের বীজ, কৃষকের অন্যান্য উপকরণসহ সকল কিছুতে সরকারের ভর্তুকি বাড়ে।’ তিনি আরও বলেন, ‘তাছাড়া দুর্যোগকালীন কৃষির জন্য শস্যবীমা, কৃষক পেনশন, কৃষি পণ্য সংরক্ষণের জন্য হিমাগার নির্মাণ, নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণে জৈব কৃষি প্রণোদনা, সহজ শর্তে কৃষি ঋণ প্রদান, কৃষি সহায়তা কার্ড নিশ্চিতকরণ বিষয়ে বাজেটে উল্লেখ থাকতে হবে।’
আমাদের দেশের মাটি পৃথি্ীর সকল দেশের চেয়ে বেশি উর্বর। তাই আমাদের সাফল্যও অনেক। আবার করোনাকালীন সময়ে কৃষি অর্থনীতিতে যদি বিরূপ প্রভাব পড়ে তবে সামগ্রিক প্রভাব পড়বে দেশের অর্থনীতির ওপরও। সেক্ষেত্রে দেশীয় কৃষির উন্নয়নকে গুরুত্ব দিয়ে আমদানীনির্ভর কৃষি পরিহার করে কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে বাজেটে আলাদা গুরুত্ব দিতে হবে। তাই এবারের বাজেটকে হতে হবে কৃষি ও কৃষকবান্ধব বাজেট। এমনটাই প্রত্যাশা সবার।